বৈষম্যমুক্ত সাম্য ও মানবিক দেশ গড়তে জাতিকে আরও একটা ধাক্কা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যেনতেনভাবে নির্বাচন এই জাতি চায় না। নির্বাচনের মতো নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এই নির্বাচনে পেশীশক্তি আর কালো টাকার খেলা চলবে না। এমনটা চাইলে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এটা সহজে আসবে না আমরা বুঝতে পারছি। একটা
ধাক্কা ২৪ এর জুলাই-আগষ্টে দেওয়া হয়েছে। আরেকটা ধাক্কা জাতিকে দিতে হবে।
আজ জুমাবার বিকেলে নরসিংদী শহরের সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে নরসিংদী জেলা জামায়াত আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নরসিংদী জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মোঃ মোছলেহুদ্দীন এর সভাপতিত্বে আয়োজিত এ জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আ.ফ.ম আব্দুস সাত্তার, মাওলানা আব্দুল মান্নান, এড. মশিউল আলম ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াতের আমীর মাওলানা আবদুল জব্বার প্রমুখ। নরসিংদী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আমজাদ হোসেন এর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন নরসিংদী জেলা ও উপজেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আজ আমি যুবকদের অভিনন্দন জানাই তোমরা দু:সাধ্যকে সাধন করেছো। তোমরা আমাদের জাতীয় বীর। যারা ২৪ এর লড়াইয়ে জীবন দিয়েছে তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, হে আল্লাহ! তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করো। তাদের পরিবারকে সান্ত্বনা দান করো। আহতদের সুস্থতার নিয়ামত দান করো। আর তাদের রেখে যাওয়া আমানত আমাদের ঘাড়ের ওপর। সেই দায়িত্ব পালন করার তাওফিক আমাদের দান করো।
তিনি বলেন, অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে বাংলাদেশে। যেনতেন মার্কা নির্বাচন এই জাতি চায় না। নির্বাচনের মতো নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এই নির্বাচনে পেশীশক্তি আর কালো টাকার খেলা চলবে না; আমরা এমন একটা নির্বাচন চাই। তিনি উপস্থিত জনতার কাছে জানতে চান, আপনারাও কী এমন একটা নির্বাচন চান? উত্তর আসে হ্যাঁ। তিনি আবারো জানতে চান শিওর আপনারা চান? আবারো উত্তর আসে হ্যাঁ। তা চাইলে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এটা সহজে আসবে না আমরা বুঝতে পারছি। একটা ধাক্কা ২৪ এর জুলাই আগষ্টে দেওয়া হয়েছে। আরেকটা ধাক্কা জাতিকে দিতে হবে।
তিনি বলেন, সত্যিকারের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদের ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে। যারা ভূয়া ভোটার তাদের বাদ দিতে হবে। দুনিয়া থেকে যারা বিদায় নিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বাদ দিতে হবে। যাদের ভোটের বয়স হয়েছে কিন্তু নাম তালিকাভূক্ত হয়নি এই যুবকদের নাম তালিকাভূক্ত করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই আগস্টের আন্দোলন সফল করতে সারাবিশ্ব বাংলাদেশের সাথে হাত মিলিয়ে একাকার ছিল। আমরা যেমন বাংলাদেশে ছিলাম, বিদেশেও আমাদের ভাইয়েরা জেলে গিয়েছে। তারা একইসাথে আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে। রেমিট্যান্স বন্ধ করে স্বৈরাচারকে লাল পতাকা দেখিয়েছে। আমরা তাদেরকেও স্যালুট জানাই। আমরা চাই প্রত্যেকটি প্রবাসী ভাই ও বোনের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এরপর প্রশাসনে যারা আছেন, যারা অতীতে দায়িত্বের পরিচয় দিতে পারেননি. দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের হাত থেকে জনগণের টাকায় কেনা বুলেট জনগণের বুকে বিধেঁছে। আগামি দিনে আমরা তাদের কোন দায়িত্বে দেখতে চাই না। কথা একদম সাফ। এখানে কোন ধানাই পানাই নেই; তিনি প্রশাসনের যে পর্যায়েই থাকুন না কেন। কিন্তু প্রশাসনের সৎ এবং দেশপ্রেমিক অফিসার যারা আছেন, তাদের কথা দিচ্ছি, আপনাদের দায়িত্ব পালনে হাতে হাত রেখে দেশবাসী কাজ করবে ইনশা আল্লাহ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার চলছে জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অপবাদ রটানো হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করি জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা কি অন্য কোন দেশ থেকে এখানে এসেছে? এখানেই তাদের জন্ম হয়েছে। আপনাদের সাথে বড় হয়েছে। আপনাদের সাথে বসবাস করে। তাদের চরিত্রের সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য আপনারাই যথেষ্ট।
জামায়াতের আমীর বলেন, আমরা একটা বৈষম্যহীন দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেই বাংলাদেশে প্রত্যেকটা মানুষ প্রত্যেকটা মানুষকে সম্মান করবে। নারী পুরুষ নির্বিশেষে ঘরে বাইরে কর্মস্থলে সকল জায়গায় নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সাথে তার দায়িত্ব পালন করবে। গর্বিত একজন নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিবে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ তার ধর্মকর্ম পালন করবে। কিন্তু তার ধর্মে কেউ হস্তক্ষেপ করার সাহস করবে না। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই। সেই বাংলাদেশ গড়তে কি আপনারা সবাই প্রস্তুত ? আমাদেরকে সাহায্য করতে প্রস্তুত? আমরা সেই বাংলাদেশ গড়তে চাই। তিনি জানান যতক্ষণ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে ন্যায়ের পথে, দেশপ্রেমের পথে আপোষহীন পাবেন, কল্যাণকর কাজে দেখবেন, জনকল্যাণকর কাজে আপনাদের পাশে পাবেন এবং আগামীর বাংলাদেশ গঠনে তাদের ওপর আস্থা রাখার মতো সামনে পাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের ভালবাসা আমরা চাই। আপনাদের দোয়া চাই, সমর্থন চাই। আপনাদেরকে পাশে চাই। আপনাদের বুকে একটু জায়গা চাই। যদি একটু জায়গা দিতে পারেন তাহলে আমরা আপনাদের ওয়াদা দিচ্ছি, আমরা আল্লাহর দেওয়া সকল শক্তির বিনিময়ে আপনাদের গল্পের, স্বপ্নের মানবিক বাংলাদেশ উপহার দিবো ইনশা আল্লাহ। যুদ্ধ আমাদের শেষ হয়নি, আমাদের যুদ্ধ চলবে। মুক্তির পথে লড়াইয়ে আবারো দেখা হবে।
দেশে দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে মাঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের দুঃশাসনের দুই বছর, পরবর্তী শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের সাড়ে ১৫ বছর, এই সাড়ে ১৭ বছর ভীষণ কষ্টের মধ্যে ছিল এ দেশের মানুষ। এই সময়ের ভিতরে অসংখ্য আল্লাহর বান্দা-বান্দী খুন, গুম, অপহরণ ও আয়নাঘরের বাসিন্দা হয়েছেন। অনেকে পঙ্গু ও আহত হয়েছেন। অযথায় মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পুরে রেখেছে। অনেকে চাকুরী, ব্যবসা হারিয়েছেন, অনেকের বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের উপর বাড়তি জুলুম করা হয়েছে। এক এক করে জামায়াতের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। বিচারের নামে তামাশা করে কাউকে দেয়া হয়েছে ফাঁসি, কাউকে ঠেলে দেয়া হয়েছে মৃত্যুর দিকে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা তথা ইউনিয়ন কার্যালয়গুলো পর্যন্ত তালা বদ্ধ করে রেখেছে। জামায়াত একমাত্র দল, যে দলের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছে। দুঃখের বিষয়- ফ্যাসিবাদ আপাতত বিদায় নিয়েছে, নিবন্ধনটি আমরা এখনো ফিরে পাইনি। এখনো সেই নিবন্ধন ফিরে পেতে আইনী লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য লজ্জার বিষয়। আমাদের দেশ প্রেম ও ফ্যাসিবাদের কাছে মাথানত না করার কারণে আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছিল। আমাদের নিবন্ধনটি ফ্যাসিবাদের পরিবর্তনের সাথে সাথে দিয়ে দেয়া উচিৎ ছিল। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি- অবিলম্বে আমাদের পাওনা প্রতীকসহ আমাদের কাছে ফেরৎ দিন। জামায়াতের উপর জুলুম করা হয়েছে। এই জুলুমের অবসান হোক।
মিথ্যা মামলায় যত নেতৃবৃন্দকে আটক করা হয়েছিল, একে একে সকলেই মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়- বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী এটিএম আজহারুল ইসলামকে এখনো মুক্তি দেওয়া হয়নি। জনতার দাবি তাকে এখনই মুক্তি দিতে হবে। তিনি মজলুমদের প্রতীক। এক এক করে আমাদের শ্রেষ্ঠ নেতৃবৃন্দদের তারা খুন করেছে, আল্লাহ তাআলা তার একজন বান্দাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ওনাকে সম্মানের সাথে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক। যদি মুক্তি দিতে গড়িমসি করা হয় তবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জনসম্পৃক্ত ন্যায্য দাবিসহ জনাব আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে মাঠে নামবে।
এ মাসটি হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের মাস। এই মাসে যারা প্রাণ দিয়েছিল, তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আল্লাহ তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুক। কিন্তু আমরা কি দেখলাম, ৫২ গেলো, ৭১’র গেলো, দেশ স্বাধীন হলো, কিন্তু আমরা দেখতে পাই, বরকতের জীবিত মা এখনো ভাঙ্গা একটি খুপড়ি ঘরে বসবাস করছে। এটি জাতির জন্য লজ্জার। যারা ৫২কে পুঁজি করে রাজনীতি করে, তারাইতো দেশ চালিয়েছে। তাহলে বরকতের মা-কে কেন খুপড়ি ঘরে রাখা হলো।
যারা জনগণের সম্পদ লুটে গত সাড়ে ১৫ বছর আমাদের দেশ থেকে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে; এদেশকে তারা তাদের দেশ মনে করে না। তারা রাজনীতি করে বাংলাদেশে, বউ-বাচ্চাকে পাঠিয়ে দিয়েছে বিদেশে। কানাডায় তারা বেগমপাড়া গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ তারা চুরি করে নিয়ে গেছে, অথচ তারা অন্যদেরকে চোর বলতো। শেখ হাসিনা সকল চোরদের মা, এবার মাও পালিয়েছে, চোরেরাও পালিয়েছে।
বিচারকরা আদালতে বসে বিচারের নামে একেক জনের বিরুদ্ধে হত্যার রায় দিয়ে, রাতে গিয়ে টেলিভিশনের টকশোতে বসে গর্ব করে বলতো ‘আজকে নিজামীকে, কালকে গোলাম আযমকে, পরশু দিন সাঈদিকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে এসেছি। এদের মধ্যে কেউ কেউ বলতো, আমরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। বিচারকের চেয়ারে বসে যারা রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে জাতির কলংক। সে বিচারক হতে পারেনা।
প্রত্যেকটি গণহত্যাকারীকে দেশে হোক, বিদেশে হোক, পাকরাও করে ট্রাইব্যুনালের হাতে তুলে দিতে হবে। এদের বিচার জাতি দেখতে চায়। মাফিয়া খুনিদের গডমাদার ছিল শেখ হাসিনা। তারই আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে থেকে সমস্ত খুনীরা লালিত পালিত হয়েছে। এগুলো আমরা বললে কিছু কিছু মানুষ সন্দেহ করতো, এগুলো রাজনৈতিক বক্তব্য। গত পরশু দিন তাদের কপালের বয়ান বিশ^বাসীর কাছে এসেছে। তাদের আমলনামা গোটা দুনিয়ার মানুষ জানতে পেরেছে। তারা কি করেছে, কোন অপরাধটা তারা করে নাই, সবকিছু বের হয়ে আসবে।
আমরা চাই অপরাধীদের বিচার হোক, কিন্তু আমরা এটাও চাই, তাদের উপরও ন্যায় বিচার করা হোক। তাদের উপর যেন কোন অবিচার না করা হয়। আমাদের উপর জুলুম করা হয়েছে, আমরা জুলুমের কষ্ট বুঝি। আরো কারো উপর জুলুম হোক এটা আমরা চাইনা। তাদের অপরাধে যে হিমালয় তারা তৈরী করেছে, আমরা বিশ্বাস করি যদি সুবিচার হয়, এই হিমালয়ের নিচেই তারা চাপা পড়বে। দেশের সম্পদ দেশে থাকুক আর বিদেশে থাকুক, দেশের সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে, সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে। বৈষম্যহীনভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক জনাব মোবারক হোসাইন বলেছেন, দেশে যারা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়, তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত। পতিত স্বৈরাচারের সৃষ্টি করা জঞ্জাল পরিষ্কার করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ। নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্যই ফ্যাসিবাদীদের বিচার করা প্রয়োজন।
তিনি ৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মাগুরা, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চল জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীলগণের এক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। সহকারী অঞ্চল পরিচালক মাওলানা আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের টীম সদস্য খোন্দকার মহসিন আলী, জনাব আব্দুল মতিন, অধ্যাপক ড. আলমগীর বিশ্বাস, মাগুরা জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক এম বি বাকের, যশোর জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক গোলাম রসূল, নড়াইল জেলা জামায়াতের আমীর এড. আতাউর রহমান বাচ্চু, ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের আমীর মো: আবু বকর আলী আজম, চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমীর এড. রুহুল আমিন, মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা তাজউদ্দিন প্রমুখ।
জনাব মোবারক হোসাইন আরও বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করে নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সবাইকে প্রচেষ্টা করতে হবে। নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি না করে নির্বাচন দেয়া যাবে না। জনগণ যাতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে সে রকম একটি পরিবেশ সৃষ্টি করাই সকলের কাম্য হওয়া উচিত। দেশের জনগণ অধীর আগ্রহের সাথে কাক্সিক্ষত নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি বর্তমান সরকার দেশের সর্বস্তরের জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। এ লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদীদের বিচার প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করতে হবে।
১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার, বিকাল ৩টায় বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের মান্যবর হাইকমিশনার মি. সৈয়দ আহমেদ মারুফ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সাথে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন এবং মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত হৃদ্যতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময়কালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা হয় এবং ভ্রাতৃপ্রতিম উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরদার হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার মি. মুহাম্মাদ ওয়াসিফ ও পলিটিক্যাল কাউনসেলর মি. কামরান ধাংগল এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের ও মাওলানা আ.ন.ম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ.টি.এম মা’ছুম, মাওলানা আবদুল হালিম, এডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন।
জনাব রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামীকে ‘মুনাফিক’ বলে যে মন্তব্য করেছেন তার নিন্দা ও প্রতিবাদঃ এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ
১২
ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার এক স্মরণ সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামীকে ‘মুনাফিক’ বলে যে মন্তব্য করেছেন তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ১৩ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার এক স্মরণ সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ‘আমরা জামায়াতকে সমর্থন করিনি। বিএনপির উদারতার কারণে তারা বাংলাদেশে প্রথম রাজনীতি করার সুযোগ পায়। কিন্তু সব সময় এই দলটি মুনাফেকি করেছে। মুনাফেকি ছাড়া তারা কিছু করেনি।’ মর্মে যেসব মন্তব্য করেছেন, তা আপত্তিকর, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা তার এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, জনাব রিজভী জামায়াতের বিরুদ্ধে এসব কথা উচ্চারণ করে আসলে কী অর্জন করতে চান, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে দেশকে যখন ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা, সেই মুহূর্তে তার এই বক্তব্য জাতীয় ঐক্যবিরোধী এবং দুরভিসন্ধিমূলক। দেশবাসী মনে করে, এ ধরনের বক্তব্য সৌজন্যতা ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করে। জামায়াতে ইসলামী কখনো কারো সাাথে মুনাফেকি করেনি। জামায়াত দেশের মানুষের অধিকার, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আপসহীনভাবে লড়াই করে যাচ্ছে। তার এইসব কথার কোনো ভিত্তি নেই।
জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি ভারতের আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। জামায়াতের এই ভূমিকা গোটা জাতি গ্রহণ করেছে। আর এ কারণেই সম্ভবত জনাব রিজভীর গাত্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও অপবাদ আরোপের রাজনীতি থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে বৈষম্য মুক্ত, ন্যায় ও ইনসাফের; যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে তার মত প্রকাশের অধিকার পাবে। প্রত্যেকে তার ন্যায্য অধিকার যথাযথভাবে ভোগ করতে পারবে।
তিনি
আরও বলেন, আমাদেরকে অন্যায়ভাবে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো। দেশব্যাপী আমাদের নেতাকর্মীদেরকে অমানবিকভাবে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে, শহীদ করা হয়েছে। মুসলিম দেশে স্বাভাবিক ধর্ম-কর্ম পালন করাও মানুষের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছিলো। শহীদদের রক্তের ফোঁটা ও মজলুমের চোখের জলের বিনিময়ে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার মুক্ত হয়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই দেশকে এখন সকলে মিলে গড়তে হবে। কোনো বিভেদ-বিভাজন তৈরী করে এই অগ্রযাত্রাকে থামতে দেয়া যাবে না। তিনি আগামীর বাংলাদেশ গঠনে প্রয়োজনে আগের থেকেও আরও বেশি ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে এবং সকল বৈষম্য, অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, সবকিছুর ফায়সালা আমাদের হাতে নেই। কিন্তু যোগ্যতার সবটুকু দিয়ে সত্যকে ধারণ করে সত্যের পক্ষে চেষ্টা চালাতে হবে। আবেগ এবং বিবেকের সংমিশ্রণে চলতে হবে। সংযত আবেগই শক্তি।
তিনি ৯ ফেব্রুয়ারি রোববার দুপুরে নগরীর একটি ইনডোর মাঠে সিলেট জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সিলেট জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফজলুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীনের পরিচালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সিলেট জেলা নায়েবে আমীর হাফেজ আনওয়ার হোসাইন খান, জেলার সাবেক নায়েবে আমীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা মাশুক আহমদ, জেলা মজলিসে শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, জেলা মজলিসে শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, জেলা শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল-হোসাইন প্রমুখ।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, দেশের প্রতিটি সেক্টরে সৎ ও যোগ্য লোকদের নেতৃত্বে বসাতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর কল্যাণে সকল নেতিবাচক কার্যক্রম পরিহার করতে হবে।
জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, কুরআন আমাদের জীবন বিধান। এর সাথে সকলের সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে কুরআনকে প্রতিষ্ঠা করতে সাবইকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি; নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে মাত্র। নতুন প্রজন্ম যাদের বয়স ৩০/৩৫ বছরে হয়েছে তারা এখন পর্যন্ত কোনো ভোট দিতে পারেনি। একটি স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে আগে দেশ থেকে ১৫ বছরের জঞ্জাল মুক্ত করতে হবে; পাশাপাশি প্রশাসনে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী দোসরদেরকে সরাতে হবে। পতিত ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার করা না হলে এই নতুন প্রজন্ম ভোট প্রদানের ব্যাপারে আশাহত হয়ে পড়বে। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে যতটুকু মৌলিক সংস্কার হওয়া প্রয়োজন, সেই সংস্কারটুকু সম্পন্ন করেই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংসদ নির্বাচন দেওয়া উচিত।
১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগরী উত্তরের মুহাম্মাদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলানগর অঞ্চল জামায়াতে ইসলামীর ওয়ার্ড দায়িত্বশীলগণের এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ডা. রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন থানা আমীরবৃন্দ যথাক্রমে মোঃ মাসুদুজ্জামান, মোহাম্মদ মশিউর রহমান, মোঃ আব্দুল হান্নান, মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল আযম, মোঃ আল-আমিন সবুজ, মোঃ মশিউর রহমান। অঞ্চল টিম সদস্য আব্দুল ওয়াজিদ কিরন ও ডাক্তার শফিউর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশের সভাপতি ড. রেজাউল করিম বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা করে অন্যের ঘাড়ে চাপানোর অপকৌশল হাতে নিয়েছে। এ ব্যাপারে ছাত্র-জনতাকে সচেতন থাকতে হবে। কিছুতেই তাদের পাতানো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। দেশবাসীকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত নস্যাৎ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে গণ মানুষের সংগঠনে পরিণত করতে হবে। এজন্য বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ব্যাপক ভিত্তিক দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে সংগঠনকে মজবুত করতে হবে। এ সময় তিনি ২০২৫ সালের সাংগঠনিক পরিকল্পনা দায়িত্বশীলগণের মাঝে বুঝিয়ে দেন।
১৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দলের সাথে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য ও অর্থবহ করার বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়।
জামায়াতের প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট মুহাম্মাদ জসীম উদ্দিন সরকার এবং এডভোকেট ইউসুফ আলী ও এডভোকেট কামাল উদ্দিন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে ৪ জন নির্বাচন কমিশনার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময়কালে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার সম্পন্ন করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে জামায়াতের প্রতিনিধি দল তাগিদ দেন। তারা বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি করা প্রয়োজন; যাতে মানুষ নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে অবাধে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
প্রতিনিধি দল আরও বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য যতটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন, তা দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার প্রয়োজনে সংস্কার করতে যতটুকু সময় প্রয়োজন, জামায়াতে ইসলামী সেটুকু সময় দিতে প্রস্তুত। এজন্য জামায়াতে ইসলামী কোনো দিন-ক্ষণ ও সময় বেঁধে দেয়নি। তবে এ সময়টি দীর্ঘ হওয়া উচিত নয়।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামায়াত নেতৃবৃন্দ এবং কমিশনের কর্মকর্তাগণ উভয়ের বক্তব্য ধৈর্য ও মনোযোগ দিয়ে শুনেন। উভয় পক্ষই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একমত হন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াত ইসলামীর আমীর আব্দুল জব্বার বলেছেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে তারা সকলেই আমাদের সকলের শক্তি। তাদের ঋণ পরিশোধ করতে চাইলে জাতির মধ্যে কোনো অনৈক্য থাকার সুযোগ নাই। এজন্য আমাদের জনসভা সমাবেশ মিটিং মিছিল সবকিছুর মূল হচ্ছে জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ করা এবং এক চিন্তা মতের ভিত্তিতে পুরো দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। এটা করতে পারলে বাইরের কোনো কূটকৌশল পরিকল্পনা দেশের অগ্রযাত্রাকে থামাতে পারবে না।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়া সংলগ্ন এলাকায় এক প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে জনসভাকে কেন্দ্র করে আইনজীবী থানার উদ্যোগে এই প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়।
আব্দুল জব্বার বলেন, সত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্য যে ন্যায় ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা জামায়াত ইসলামী বলছে। সেই স্লোগানের অগ্রনায়ক হিসেবে বাংলাদেশে জামায়াত ইসলামীর আমীরে জামায়াত সারাদেশের মানুষের মধ্যে স্বপ্ন জাগিয়েছেন। সেই স্বপ্নের সাথে মানুষ একাকার হয়ে স্লোগান তুলেছে আমাদের নেতা চাই আমানতদার ন্যায় ইনসাফের ভিত্তিতে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে এ ধরণের নেতাকে দিনের ভোট দিনে দিয়ে নির্বাচিত করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, সেই জায়গাকে শক্তিশালী করার জন্য আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পৌর স্টেডিয়ামে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। অনেকেই বলছেন সেদিন কি পরিমাণ মানুষ হবে কল্পনা করতে পারছি না। আগে যারা খেলা হবে বলেছিলো তাদের পোগ্রামে ১০ থেকে ১৫ হাজারের বেশি লোক হয়নি। তাদের উপস্থিতি ছিলো গার্মেন্টস বন্ধ করে খেটে খাওয়া মানুষদেরকে জোর করে এনে পোগ্রামে নিয়ে আসতো। আমরা কোনো খেলা হবে বলবো না। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ইসলামের পক্ষে জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা জামায়াতের আমীর মমিনুল হক সরকার, মহানগর সেক্রেটারী ইঞ্জিনিয়ার মনোয়ার হোসাইন, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাফিজ মোল্লা, জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মাঈনুদ্দিন মিয়া, আইনজীবী থানার সভাপতি জাহাঙ্গীর দেওয়ান, সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্তার হোসেন, সহকারী সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান সহ অন্যান্য আইনজীবীরা।