ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
বইটি লিখার উদ্দেশ্যঃ
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারষ্পারিক সম্পর্কের গুরত্ব তুলে ধরা, মানুষের কি কি খারাপ গুনাবলীর কারনে সে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় এবং সেগুলো থেকে পরিত্রান পেতে হলে কি কি ভালো গুনাবলীর প্রয়োজন তা তুলে ধরেছেন।
লেখক বইটিতে তিনটি বিষয় তুলে ধরেছেন
১) সামাজিক ও সামগ্রিক জীবন ধারা গড়ে তোলা এবং একে স্থিতিশীল রাখার জন্য ইসলাম ব্যক্তি-চরিত্রে কোন কোন মৌলিক বৈশিষ্ট্যর প্রকাশ দেখতে চায়।
২) কি কি বস্তু এ ভিত্তিগুলোকে ধ্বংস ও দূর্বল করে দেয় যাতে করে সেগুলো থেকে বেচে থাকা যায়।
৩) কি কি গুনাবলী এ ভিত্তিগুলোকে মজবুত এবং উন্নত করে যাতে করে সেগুলোকে গ্রহন করা যেতে পারে।
পারষ্পারিক সম্পর্কের ভিত্তি ও তার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা
“মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।” সূরা হুজুরাত-১০
ইসলামী আন্দোলনের লোকদের সম্পর্ক হচ্ছে একটি আদর্শিক সম্পর্ক। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এর গোড়াপত্তন করে ঈমানের ঐক্য এতে রং বিন্যাস করে। ভ্রাতৃত্ব ঈমানের অনিবার্য দাবী।
ইসলামী বিপ্লবের জন্য ভ্রাতৃত্ব অপরিহার্যঃ
“যারা এ দ্বীনের প্রতি ঈমান আনবে, এর জন্য সব কিছু ত্যাগ করবে এবং আন্দোলনে নিজের ধন-সম্পদ প্রান উতসর্গ করবে, তাদের পারষ্পারিক সম্পর্ক হবে নিশ্চিত রূপে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার সম্পর্ক। (সূরা আনফাল)
“তাদের মধ্যে দুজন লোক থাকবে, যারা আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালোবেসেছে, তার জন্য একত্রিত হয়েছে এবং তার খাতিরে বিচ্ছিন্ন হয়েছে” এরকম বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে না তুললে কাফেরদের সাংগাঠনিক ঐক্য এবং তাদের দলীয় শক্তির মোকাবেলায় ইসলামী বিপ্লবের আকাংখা পূরন হবেনা।
ভ্রাতৃত্বের দ্বাবীঃ তার গুরুত্ব ও ফলাফল
ইসলামী বিপ্লবের প্রতি যে যতটা বেশি গভীরভাবে অনুরক্ত হবে আপন সাথী ভাইয়ের সংগে ততোটা গভীর সম্পর্কই সে গড়ে তুলবে, এ সম্পর্ক হচ্ছে আল্লাহর জন্য আল্লাহর পথে সংগ্রামকারীদের জন্য।আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তার পথে ভালোবাসা এ দুটো জিনিসের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান।
“তোমরা ততোক্ষন পর্যন্ত মুমিন হবে না, যতোক্ষন না পরস্পরকে ভালোবাসবে” হাদীস
আখিরাতে ভ্রাতৃত্বের সুফলঃ
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ৭ শ্রেণীর লোকদের মহান আল্লাহ সেদিন তাঁর সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তাঁর ছাড়া অন্য কোন ছায়াই থাকবে না। তাদের মধ্যে একদল হলোঃ
“তাদের মধ্যে দুজন লোক থাকবে, যারা আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালোবেসেছে, তার জন্য একত্রিত হয়েছে এবং তার খাতিরে বিচ্ছিন্ন হয়েছে”
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “একটি লোক অপর একটি গ্রামে তার ভাইকে দেখতে গেল। আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেশতাকে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি লোকটির জন্যে রাস্তায় অপেক্ষা করতে থাকলেন। যখন লোকটি আসল, তখন ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কোথায় যেতে মনস্থির করেছ?’ লোকটি বলল, ‘আমি আমার এক ভাইকে দেখতে যাচ্ছি যে এই গ্রামে থাকে’। ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ তুমি কি তার প্রতি কোন অনুগ্রহ করেছ(যার কারণে তুমি প্রতিদান আশা কর)?’ । সে বলল, ‘না। আমি কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যেই তাকে ভালোবাসি।’ ফেরেশতা তাকে বললেন, ‘আমি আল্লাহর পক্ষ হতে তোমার নিকট প্রেরিত একজন দূত, তিনি(আল্লাহ) তোমাকে ভালোবাসেন যেরকম তুমি তোমার ভাইকে তাঁর জন্যে ভালোবাসো, আমি তোমাকে এটা বলার জন্যই প্রেরিত হয়েছি।” (মুসলিম)
হযরত মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত এই হাদীসটিতে যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; “আল্লাহ (সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা ) বলেন; ‘যারা আমার সম্মানে পরস্পরকে ভালোবাসে, তারা নূরের মিম্বার লাভ করবে, এবং নবীগণ ও শহীদগণও অনুরূপ ইচ্ছা করবেন” [তিরমিযি কর্তৃক হাসান সহীহ হাদীস]
চরিত্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্যঃ
১) কল্যাণ কামনা
“দ্বীন হচ্ছে নিছক কল্যাণ কামনা” (মুসলিম)
‘যে মহান সত্তার হাতে আমার জান নিবদ্ধ তার কসম! কোন বান্দাহ্ ততোণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারে না, যতোণ না সে নিজের জন্যে যা পছন্দ করবে তার ভাইয়ের জন্যেও তাই পছন্দ করবে।’ (বুখারী ও মুসলিম-আনাস)
‘তোমার ভাইয়ের প্রতি সদয় হও, কারণ তারা দুনিয়া ও আখেরাতে তোমার সহায়ক। তোমরা কি জাহান্নামের বাসিন্দাদের চিৎকার শোন না? : “আজ আমাদের জন্যে কেউই রইল না, না আছে কোনো সুহৃদ বন্ধু (যে আল্লাহ তায়ালার কাছে সুপারিশ করতে পারে) ! [সূরা আশ শোয়ারা : ১০০-১০১]’
২) আত্নত্যাগ-অগ্রাধিকার দেয়া
“এবং তারা নিজেদের উপর অন্যদের অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তারা রয়েছে অভাব অনটনের মধ্যে” (সূরা হাশর-৯)
৩) আদল (সুবিচার)
“গযবের অবস্থা হোক আর সন্তুষ্টির যে কোন অবস্থায় আদলের বাণীর উপর কায়েম থাকে” হাদীস
‘আল্লাহ তায়ালা আদল ও ইহসানের উপর অবিচল থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন।’ -(সূরা নাহল-৯)
“এবং আমি তাদের (রাসূলদের) সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও মানদণ্ড, ন্যায়নীতি-যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারে।” – (হাদীদ-২৫)
৪) ইহসান (সদাচরন)
যে ব্যক্তি আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে, আমি তার সঙ্গে যুক্ত হবো; যে আমাকে (অধিকার থেকে) বঞ্চিত করবে, আমি তাকে (তার অধিকার) বুঝিয়ে দেবো এবং যে আমার ওপর জুলুম করবে আমি তাকে মার্জনা করে দেবো।’ (সূরা-রা’দ-২২)
‘তারা অন্যায় ও পাপকে ন্যায় ও পূণ্যের দ্বারা নিরসন করে থাকে।’ (সূরা কাসাস-৫৪)
৫. রহমত
“আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং তাদের মধ্যে পরস্পরে রহমশীল।” (সূরা ফাতহ-২৯)
“যে ব্যক্তিকে নম্র স্বভাব দান করা হয়েছে তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ থেকেও তার অংশ দেয়া হয়েছে”
৬. মার্জনা
“যারা দুনিয়ার জীবনে ক্ষমা করে দিবে আল্লাহ তাদের দোষ ত্রুটি ক্ষমা করবে”
“নম্রতা ও মাশীলতার নীতি অবলম্বন করো।” – (সূরা আ’রাফ-১৯৯)
“তুমি তাদের মা করে দাও, তাদের জন্যে মাগফেরাত কামনা করো।” – (আলে ইমরান-১৫৯)
মুসলমানদের তাকওয়ার গুণাবলী শিখাতে গিয়ে এও বলা হয়েছে:
والكاظمين الغيظ والعافين عن الناس – “যারা নিজেদের রাগকে সংবরন করে আর মানুষের প্রতি মা প্রদর্শন করে।” – (আলে ইমরান-১৩৪
“নিশ্চয় ক্রোধ ঈমানকে এমনিভাবে নষ্ট করে দেয়, যেমন বিষাক্ত ওষুধ মধুকে নষ্ট করে।” – (বায়হাকী-ইবনে ওমর রাঃ)
“তাদের মাফ ও মার্জনার নীতি গ্রহণ করা উচিত। তোমরা কি পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তোমাদের মাফ করে দিন? বস্তুত আল্লাহ মার্জনাকারী ও দয়া প্রদর্শনকারী।” (সূরা আন্ নূর-২২)
৭. নির্ভরতা
৮. মূল্যোপলব্ধি
সম্পর্কের বিকৃতি থেকে রক্ষা করার উপায়ঃ
১) অধিকারে হস্তক্ষেপ
মুসলমান সে ব্যাক্তি যার মুখ ও হাত থেকে সমস্ত মুসলমান নিরাপদ. এ হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা, অতঃএব একে লংঘন করো না। যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমা লংঘন করে, সে-ই জালিম।” (সূরা বাকারা-২২৯)
এহানবী (সঃ) এ কথাটি মুসলমানদের সামনে এভাবে বর্ণনা করেছেন:
“যে ব্যক্তি কসম খেয়ে কোন মুসলমানের হক নষ্ট করেছে, আল্লাহ নিঃসন্দেহে তার প্রতি জাহান্নামকে অনিবার্য এবং জান্নতকে হারাম করে দিয়েছেন।
২) দেহ ও প্রাণের নিরাপত্তা “যে ব্যাক্তি কোম মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার পুরষ্কার জাহান্নাম”
“দরিদ্র কে, জানো? সাহাবীগণ (সাধারণ অর্থের দৃষ্টিতে) বললেন: যে ব্যক্তির মাল-মাত্তা নেই, সেই দরিদ্র। রাসূল (সঃ) বললেন: আমার উম্মতের মধ্যে আসল দরিদ্র হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও যাকাতের ন্যায় আমল নিয়ে আসবে এবং সে সঙ্গে গালি দেয়া, কারুর ওপর অপবাদ দেয়া, কারুর মাল খাওয়া, কারুর রক্তপাত করা এবং কাউকে মারধর করার আমলও নিয়ে আসবে। অতঃপর একজন মজলুমকে তার নেকী দিয়ে দেয়া হবে। তারপর দেয়া হবে দ্বিতীয় মজলুমকে তার নেকী। এভাবে চুড়ান্ত ফায়সালার আগে তার নেকী যদি খতম হয়ে যায়, তাহলে হকদারের পাপ এনে তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে এবং তারপর তাকে দোযখে নিপে করা হবে।” (মুসলিম- আবু হুরায়রা রাঃ)
“যে ব্যক্তি কোন মু’মিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার পুরস্কার হচ্ছে জাহান্নাম। সেখানে সে চিরদিন থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি গজব ও লা’নত বর্ষণ করেছেন এবং তার জন্যে নির্দিষ্ট করে রেখেছেন কঠোরতম শাস্তি।” (সূরা নিসা-৯৩)
৩.কটু ভাষণ ও গালাগাল
“আর বদনাম করোনা বিকৃতির উপাধির সঙ্গে, ঈমানের পর বিকৃত নামকরণ হচ্ছে বদকারী।” (সূরা হুজরাত-১১)
অনুরূপভাবে রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ
لا يدخل الجنة الجواط الجعظرى –
“কোন কটুভাষী ও বদ-স্বভাব বিশিষ্ট ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (আবু দাউদ, বায়হাকী-হারিস বিন ওয়াহাব)
৪) গীবত
“কেউ কারো গীবত করো না। তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? একে তো তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করবে।” (সূরা হুজরাত-১২)
৫) চোগলখুরী
‘যারা লোকদের প্রতি বিদ্রুপ প্রদর্শন করে এবং চোগলখুরী করে বেড়ায়।’ (সূরা কালাম-১১)
হযরত হোজায়ফা (রাঃ) বলেন:
‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি চোগলখোর জান্নাতে যাবে না।’
রাসূলে কারীম (সাঃ) সঙ্গীদেরকে বিশেষভাবে নছিহত করে বলেনঃ “কোন ব্যক্তি কারো সম্পর্কে কোন খারাপ কথা আমার কাছে পৌঁছাবে না, কারণ আমি যখন তোমাদের কাছে আসি, তখন সবার প্রতিই আমার মন পরিস্কার থাকুকু-এটাই আমি পছন্দ করি।” (আবু দাউদ-ইবনে মাসউদ রাঃ)
৬.শরমিন্দা করা
‘আপন ভাইয়ের প্রতি দোষারোপ করো না।’ (সূরা হুজরাত-১১)
৭.ছিদ্রান্বেষণ
‘আর দোষ খূঁজে বেড়িয়ো না।’ (সূরা হুজরাত-১২)
৮.উপহাস করা
‘হে ঈমানদারগণ! কোন সম্প্রদায় অপর কোন সম্প্রদায়কে ঠাট্টা করো না, সম্ভবতঃ সে তার চাইতে শ্রেষ্ঠ হবে। আর কোন নারী অপর কোন নারীকে ঠাট্টা করো না, সম্ভবতঃ সে শ্রেষ্ঠ হবে তার চাইতে।’ (সূরা হুজরাত-১১)
৯) তুচ্ছজ্ঞান করা
‘হতে পারে সে উপহাসকারী অপো উত্তম।’ (সূরা হুজরাত-১১
‘এক ব্যক্তির গুণাহ্গার হবার জন্যে এতোটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে নীচ জ্ঞান করে।’ (মুসলিম-আবু হুরায়রা রাঃ)
১০.নিকৃষ্ট অনুমান
‘হে ঈমানদারগণ! বহু অনুমান থেকে তোমরা বেঁচে থাকো, নিঃসন্দেহে কোন কোন অনুমান হচ্ছে গুনাহ্।’ (সূরা হুজরাত-১২)
১১) অপবাদ
‘যে ব্যক্তি কোন গুনাহ্ বা নাফরমানী করলো এবং তারপর এক নিরপরাধ ব্যক্তির ওপর তার অপরাধ আরোপ করলো, সে এক মহাতি এবং স্পষ্ট গুনাহ্কেই নিজের মাথায় চাপিয়ে নিলো।’ (সূরা নিরা-১১২)
১২) ক্ষতিসাধন
রাসূলে কারীম (সঃ) অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বলেছেন:
ملعون من ضارُّمؤمنا او مكربه-
‘যে ব্যক্তি কোন মু’মিনের তি সাধন করে অথবা কারো সঙ্গে ধোকাবাজী করে, সে হচ্ছে অভিশপ্ত।’ (ইবনে মাজাহ্, তিরমিযি
১৩) মনোকষ্ট
‘যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে কষ্ট দিলো, সে আল্লাহকেই কষ্ট দিলো।’ (তিরমিযি- আনাস রাঃ)
১৪) ধোকা দেয়া
রাসূল (সঃ) বলেছেন:
قال كبرت خيانة ان تحدث اخاك حديثا هولك مصدق وانت به كاذبٌ –
‘সবচাইতে বড় খিয়ানত হচ্ছে এই যে, তুমি তোমার ভাইকে কোন কথা বললে সে তোমাকে সত্যবাদী মনে করলো; অথচ তুমি তাকে মিথ্যা কথা বললে।’ (তিরমিযি-সুফিয়ান বিন আসাদ)
১৫.হিংসা
হিংসা সম্পর্কে নবী কারীম (সঃ) এ মর্মে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন:
ايَّاكم والحسد فانَّ الحسد يأكل الحسنات كما تأكل النّار الحطب –
“তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক। কারণ, আগুন যেমন লাকড়িকে (কাঠ) খেয়ে ফেলে, হিংসা তেমনি নেকী ও পুণ্যকে খেয়ে ফেলে।” (আবু দাউদ-আবু হুরায়রা রাঃ)
“কারো দোষ খুঁজে বেড়িয়ো না, কারো ব্যবসায়-বাণিজ্যের তি করো না, পরস্পরে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পরে শত্রুতা রেখোনা, পরস্পর সম্পর্কহীন থেকো না, পরস্পরে লোভ-লালসা করো না বরং আল্লাহর বান্দাহ্ ও ভাই ভাই হয়ে থাকো।” (বুখারী ও মুসলিম-আবু হুরায়রা রাঃ)
সম্পর্ক দৃঢ় করার উপায়ঃ
১) মান-সন্মানের নিরাপত্তা
রাসূল (সঃ) বলেছেন:
ما من مسلم يردُّ عن عرض اخيه الا كان حقا على الله ان يَّردُّ عنه نار جهنَّم ثمَّ تلا هذه الاية وكان حقا علينا نصر المؤمنين –
“যে মুসলমান তার মুসলিম ভাইয়ের ইজ্জতহানি থেতে কাউকে বিরত রাখবে, আল্লাহর প্রতি তার অধিকার এই যে, তিনি জাহান্নামের আগুনকে তার থেকে বিরত রাখবেন। অতঃপর রাসূল (সঃ) এ আয়াত পড়লেন: ‘মুসলমামদের সাহায্য করা আমাদের প্রতি এক কর্তব্য বিশেষ’।” (শরহুস সুন্নাহ-আবু দারদা)
২) দুঃখ কষ্টে অংশগ্রহন
‘তোমরা মু’মিনদেরকে পারস্পারিক সহৃদতা, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা এবং পারস্পারিক দুঃখ-কষ্টের অনুভুতিতে এমনি দেখতে পাবে, যেমন একটি দেহ। যদি তার একটি অংশ রোগাক্রান্ত হয়, তবে তার সঙ্গে গোটা দেহ জ্বর ও রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে তাতে অংশ গ্রহণ করে থাকে।’ (বুখারী ও মুসলিম-নু’মান বিন বশীর রাঃ
৩) সমালোচনা ও নছিহত
‘তোমরা প্রত্যেকেই আপন ভাইয়ের দর্পণ স্বরূপ। সুতরাং কেউ যদি তার ভাইয়ের মধ্যে কোন খারাপ দেখে তো তা দূর করবে।’ (তিরমিযি- আবু হুরায়রা রাঃ
৪) মুলাকাত
৫) রুগ্ন ভাইয়ের পরিচর্যা
নবী কারীম (সঃ) বলেনঃ
ان المسلم اذا عاد اخاه المسلم لم يزل فى حرفة الجنة حتى يرجع –
‘যখন কোন মুসলমান তার (রুগ্ন) মুসলিম ভাইয়ের পরিচর্যার জন্যে যায় তবে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের মেওয়া বাছাই করতে থাকে।’ (মুসলিম-ছাওবান রাঃ)
৬)আবেগের বহিঃপ্রকাশ
৭) প্রীতি ও খোশ-মেজাজের সাথে মুলাকাত
নম্র ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূলে খোদা (সঃ) বলেছেন:
الا اخبركم بمن يحرم على النَّار وبمن تحرم النّار عليه على كلِّ هيِّن ليِّن قريب سهل –
‘আমি তোমাদেরকে এমন এক ব্যক্তির কথা বলে দিচ্ছি, যার ওপর জাহান্নামের আগুন হারাম এবং সেও জাহান্নামের ওপর হারাম। এ লোকটি নম্র মেজাজ, নম্র প্রকৃতির ও নম্রভাষী।’ (আহমদ, তিরমিযি-ইবনে মাসউদ রাঃ)
৮) সালাম
তোমরা কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবেনা, যতোণ না মু’মি হবে। আর ততোন পর্যন্ত মু’মিন হবে না, যতোণ না পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছুর সন্ধান দেব না, যা গ্রহণ করে তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে? তা হচ্ছে এই যে, তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামকে প্রসারিত করো।’ (মুসলিম-আবু হুরায়রা রাঃ)
৯) মুছাফাহা
‘মুছাফাহার দ্বারা তোমাদের পারস্পারিক সালামের পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে।’ (আহমদ, তিরমিযি-আবু উমালাহু রাঃ)
এুছাফাহা সম্পর্কে নবী কারীম (সঃ) আরো বলেছেন: ‘তোমরা মুছাফাহা করতে থাকো, কারন এর দ্বারা শত্রুতা দূরীভূত হয়।
১০) উৎকৃষ্ট নামে ডাকা
১১) ব্যক্তিগত ব্যাপারে উৎসুক
‘এক ব্যক্তি যখন অন্য ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, তখন তার কাছ থেকে তার নাম, তার পিতার নাম এবং তার গোত্র-পরিচয় জিজ্ঞেস করে নেবে। কারণ এর দ্বারা পারস্পারিক ভালোবাসার শিকড় অধিকতর মজবুত হয়।’ (তিরমিযি-ইয়াজিদ বিন নাআমাহ্ রাঃ)
১২ হাদিয়া
১৩) শোকর গোজারী
১৪) একত্রে বসে আহার
১৫) দোয়া
‘হে আমাদের প্রভু! এবং আমাদের সেই সব ভাইকে মাদান করো যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে এবং আমাদের দিলে ঈমানদার লোকদের জন্যে কোন হিংসা ও শত্রুতাভাব রেখো না। হে আমাদের প্রভূ! তুমি বড়ই অনুগ্রহ সম্পন্ন এবং করুনাময়।’ (সূরা হাশর- ১০)
১৬) সুন্দরভাবে জবাব দেয়া
রাসূলে কারীম (সঃ) এর নিম্নোক্ত বাণীও স্মরণ রাখা উচিত:
‘দুইজন প্রেমিকের মধ্যে সেই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ, যে তার ভাইয়ের প্রতি অধিক ভালোবাসা পোষন করে।’
১৭) আপোষ রফা ও অভিযোগ খন্ডন
“যে ব্যক্তি লোকদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করায়, ভালোকথা বলে এবং ভালো কথা পৌছিয়ে দেয় সে মিথ্যাবাদী নয়” হাদীস
‘লোকদের মধ্যকার (সম্পর্কের) সংশোধন করা আর লোকদের মধ্যকার সম্পর্কের বিপর্যয় সৃষ্টি করা হচ্ছে দ্বীনকেই মুণ্ডিয়ে ফেলা।’ (আবু দাউদ, তিরমিযি)
“মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতঃএব তোমরা তোমাদের দু’ভাইয়ের মধ্যে ঝসড়া-বিবাদ মীমাংসা করে ফেলে।” (সূরা হুজরাত-১০)
১৮) খোদার কাছে তৌফিক কামনা করা।
‘হে আমাদের প্রভূ! আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সব ভাইকে মা দান কর, যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে এবং আমাদের দিলে ঈমানদার লোকদের জন্যে কোন হিংসা ও শত্রুতাভাব রেখো না। হে আমাদের প্রভূ! তুমি বড়ই অনুগ্রহ সম্পন্ন এবং করুণাময়।’ (সূরা হাশর- ১০)
কতিপয় হাদীস
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ৭ শ্রেণীর লোকদের মহান আল্লাহ সেদিন তাঁর সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তাঁর ছাড়া অন্য কোন ছায়াই থাকবে না। তাঁরা হলেনঃ
১ ন্যায়বিচারক শাসক বা নেতা
২ মহান আল্লাহর ইবাদতে মশগুল যুবক
৩ মসজিদের সাথে সম্পর্কযুক্ত হৃদয়ের অধিকারী
৪ যে দুজন লোক একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর বন্ধুত্ব করে এবং এ জন্যেই আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়
৫ এরূপ ব্যক্তি যাকে কোন অভিজাত পরিবারের সুন্দরী নারী খারাপ কাজে আহবান করেছে, কিন্তু সে বলে দিল, আমি আল্লাহকে ভয় করি
৬ যে ব্যক্তি এতো গোপনভাবে দান-খয়রাত করে যে, তার ডান হাত কি দান করলো, বাঁ হাতেও তা জানতে পারলো না
৭ এরূপ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর যিকির করে এবং দু’চোখের পানি ফেলে (কাঁদে)।
[বুখারী ও মুসলিম]
ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ তাঁর আল-মুয়াত্তায় একটি সহীহ ইসনাদ বর্ণনা করেছেন, আবু ইদরিস আল-খুলানি থেকে। তিনি বলেন, “আমি দামেস্কের মসজিদে প্রবেশ করলাম, সেখানে আমি অল্প বয়স্ক একজন লোককে দেখলাম যার হাসি ছিল ঝলমলে উজ্জ্বল, এবং আমি লোকদের দেখলাম তাকে কেন্দ্র করে ভিড় করতে। যখন কোন একটি বিষয়ে তাদের মতানৈক্য হল, তারা যুবক লোকটির কাছে সে বিষয়টি উপস্থাপন করল এবং তার মতামত মেনে নিল। আমি জানতে চাইলাম, এই লোকটি কে ছিল , তারা আমাকে বলল, ‘ইনি মুয়ায ইবন যাবাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু)’। পরদিন খুব সকাল সকাল আমি মসজিদে গিয়ে হাজির হলাম কিন্তু গিয়ে দেখলাম তিনি তারও আগে সেখানে উপস্থিত। তিনি নামাযরত ছিলেন, তাই আমি শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম, এরপর আমি তার কাছে গেলাম, হাসি বিনিময় করলাম এবং বললাম, “আল্লাহর জন্যে আমি আপনাকে ভালোবাসি”। তিনি জানতে চাইলেন, “আল্লাহর জন্যে?” আমি বললাম, “আল্লাহর জন্যে”। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, “আল্লাহর জন্যে”? এবং আমি বললাম, “আল্লাহর জন্যে”। একারণে তিনি আমাকে আমার জামা ধরে টেনে তার কাছে নিলেন এবং বললেন, “তোমার জন্যে সুসংবাদ । আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ সর্বশক্তিমান বলেনঃ ‘আমার ভালোবাসা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত যারা একে অপরকে ভালোবাসে আমার জন্যে, যারা একে অপরকে দেখতে যায় আমার জন্যে এবং যারা একে অন্যের প্রতি খরচ করে আমার জন্যে”।