কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার ষান্মাসিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার ষান্মাসিক অধিবেশন সংগঠনের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। মজলিসে শূরার অধিবেশনে সংগঠনের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সাবেক এমপি, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের, সাবেক এমপি, মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সাবেক এমপি এবং সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলবৃন্দ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। সভাপতির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “দীর্ঘদিন পর সশরীরে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশন শুরু করতে পেরে মহান আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করছি।”
আমি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্মরণ করি সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম এবং সাবেক আমীরে জামায়াত ও সাবেক মন্ত্রী শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর মাওলানা একেএম ইউসুফ, অধ্যাপক একেএম নাজির আহমাদ, মাওলানা আবদুস সুবহান ও আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী শহীদ আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও জনাব আবদুল কাদের মোল্লা এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মীর কাসেম আলীকে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের সকলের শাহাদাত কবুল করুন এবং তাদেরকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “জাতি একটি কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। মানুষের কথা বলার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার নেই। সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানুষের ভোটাধিকারসহ সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের আজ কোনো অধিকার নেই। রাজানৈতিক দলসমূহ বিশেষ করে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন এবং ব্যক্তি ও সংগঠন সরকারের নিগ্রহের শিকার। ইসলামী দলসমূহ সরকারের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী বর্তমান সরকারের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে। জামায়াতকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য শীর্ষনেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে এবং তা কার্যকর করা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে জামায়াতের লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে কারাগারে আটক রাখা হয়। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। সরকার প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার জন্য সব ধরনের পন্থা অবলম্বন করে। সরকারের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিনা ভোটের সরকার দুর্নীতি-দুঃশাসন চালিয়ে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সমাজ জীবনের কোথাও শান্তি নেই, শৃঙ্খলা নেই। আইনের শাসনের বালাই নেই।
দেশের অর্থনীতি আজ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, ব্যাংক লুটপাট, বিদেশে অর্থপাচারসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি দেশের অর্থব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংকের শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশের শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামী শিক্ষা বাদ দেয়া হয়েছে। নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষার পরিবর্তে বিজাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম এর অবতারণা করে নৈতিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সরকারের ষড়যন্ত্র থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা রেহাই পায়নি। ক্বওমি মাদ্রাসাও আজ হুমকির মধ্যে। দেশের আলেম-ওলামা, ইসলামী চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ ও ইসলামী ব্যক্তিত্বদের নানাভাবে নাজেহাল করা হচ্ছে। সরকারের এইসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
আমীরে জামায়াত আরও বলেন, আমরা এমন এক সময় মজলিসে শূরার অধিবেশনে মিলিত হয়েছি যখন ২৭ মে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে ১৯টি জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ১৭ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ। মানুষের ঘরবাড়ি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাজার হাজার মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। খোলা আকাশের নিচে লক্ষ লক্ষ মানুষ বসবাস করছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়েছে। বহু মানুষের ফসলি জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি সমাজের সচ্ছল ব্যক্তি, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
আমীরে জামায়াত বলেন, বিপুল সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ আজ নানা সংকটে জর্জরিত। দেশকে সংকট থেকে উদ্ধারের জন্য জামায়াত কর্মীদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মানুষের ঘরে ঘরে ইসলামের আহ্বান পৌঁছে দিয়ে তাদেরকে সংঘবদ্ধ করে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামগ্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। জামায়াতের মজলিসে শূরার সদস্যদেরকে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে হবে। সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।”