বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্মীদের করণীয় সম্পর্কে মুহতারাম সেক্রেটারী জেনারেলের নসীহত-
১২-৭-২০২০
১.বর্তমানে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে ও অপরকে সচেতন করতে হবে।
২. করোনা আক্রান্ত রোগীদের সহযোগিতায় জামায়াতের সকল জনশক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে।
৩. ইসলামী আন্দোলনের কাজকে সবচেয়ে বেশী অগ্রাধিকার দিতে হবে। এইক্ষেত্রে সূরা তওবার ১৯,২০,২১ ও ২২ নম্বর আয়াতগুলো অধ্যয়ন করে মর্ম উপলব্ধি করতে হবে এবং সে আলোকে নিজেদের আমলের পরিবর্তন করতে হবে।
৪. জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যাপকভাবে প্রতিদিন নিয়মিত কোরআন, হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করতে হবে। কোরআনকে সঠিকভাবে বুঝার জন্য তাহফীমুল কোরআন অধ্যয়ন করতে হবে। সকল কর্মীকে অন্ততঃ জীবনে দুইবার সম্পূর্ণ তাহফীম পড়ে শেষ করতে হবে।
৫. নিজেদের আমলী জিন্দেগীকে উন্নত করতে হবে। খুশু-খুজুর সাথে আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে নিয়মিতভাবে জামায়াতের সাথে সালাত আদায় করতে হবে। শেষ রাতের নামাজের ব্যাপারে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে।
৬. সর্বাবস্থায় নিয়মিত দাওয়াতী কাজ করে যেতে হবে।
৭. আদর্শ পরিবার গঠন করতে হবে। সাংগঠনিক মর্যাদায় পারিবারিক ইউনিটের কার্যক্রম তদারকি করতে হবে। ছেলেরা যাতে ছাত্র সংগঠনে, মেয়েরা যাতে ছাত্রী সংগঠনে এবং স্ত্রীরা যাতে মূল সংগঠনে সক্রিয় থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
৮. দায়িত্বানুভূতি নিয়ে সবাইকে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। স্ব-স্ব ইউনিটের প্রোগ্রাম বাস্তবায়নসহ কর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
৯. সকল দায়িত্বশীলদের তাদের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির করার চেষ্টা করে যেতে হবে।
১০. বিরাজমান পরিস্থিতিতে আন্দোলনের কাজকে বিকল্প পদ্ধতিতে এগিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অনলাইন প্লাটফরমসহ সকল ডিজিটাল উপকরণের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
দুর্নীতির কবল থেকে স্বাস্থ্য খাতকে উদ্ধারের আহবান
১০ জুলাই ২০২০
দুর্নীতির কবল থেকে স্বাস্থ্য খাতকে উদ্ধারের আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের ১০ জুলাই প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন,
“গোটা দেশ আজ দুর্নীতির কবলে নিপতিত। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত গোটা জাতি যখন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত ঠিক সে মুহূর্তে স্বাস্থ্য খাতে ভয়াবহ দুর্নীতি জাতিকে হতবাক করেছে। প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। বিপুল সংখ্যক লোক প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসার জন্য সরকার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। অথচ করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে কতিপয় বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসার নামে যেভাবে প্রতারণা করছে তা মহামারি আক্রান্ত মানুষের সাথে উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়।
রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের অপকর্ম করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা নিয়ে মানুষের মধ্যে নতুন করে এক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কোনো ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই শুধুমাত্র উপসর্গ দেখে রিপোর্ট প্রদান এবং করোনা টেস্টের ভুয়া সার্টিফিকেট বিতরণ করে কতিপয় বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্য সেবায় দুর্নীতির এক নতুনমাত্রা যোগ করেছে। যার ফলে সাধারণ মানুষ হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা সেবা নিতেও ভয় পাচ্ছে।
আমরা মনে করি মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার হলো চিকিৎসা সেবা। এটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এখনই স্বাস্থ্য খাতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেইসাথে দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা উচিত। যাতে করে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্নীতি করতে আর কেউ সাহস না পায়।
করোনা পরিস্থিতির এই ভয়াবহ দুর্যোগের সময় দেশের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”
সরকারের উদাসিনতা ও দুর্বলতার কারণে একের পর এক মানব পাচারের ঘটনা ঘটছে
১০ জুলাই ২০২০
মেসিডোনিয়ায় ১৪৪ জন বাংলাদেশী উদ্ধার এবং ইতালি থেকে ১৪৭ জন বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ১০ জুলাই এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ইউরোপের দেশ মেসিডোনিয়ার গাভগালিজা শহরে ৭ জুলাই ১৪৪ জন বাংলাদেশী অভিবাসীকে মানব পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়। ১০ জুলাই ইতালির রোম থেকে ১৪৭ জন বাংলাদেশী নাগরিককে বিমান বন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়।
সরকারের উদাসিনতা ও দুর্বলতার কারণে একের পর এক মানব পাচারের ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাও সংঘটিত হচ্ছে। বরাবরই মানবপাচারকারীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মেসিডোনিয়ায় মানব পাচারকারীদের কবল থেকে উদ্ধারকৃত ১৪৪ জন বাংলাদেশীর পরিবার-পরিজন গভীর উদ্বেগের মধ্যে আছেন। তারা তাদের সন্তানদের নিরাপদে ফিরে আসার প্রতিক্ষায় প্রহর গুণছেন।
অপরদিকে করোনার কারণে এমনিতেই মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক। এর মধ্যে ইতালি থেকে ১৪৭ জন প্রবাসী ফেরত আসার ঘটনায় ভুক্তভোগীগণ পথে বসার উপক্রম। ইতালীর রোমের ফিউমিসিনোল বিমানবন্দরে বাংলাদেশী নাগরিকদের অবতরণ করতে না দিয়ে ফেরত পাঠানোর ঘটনা দেশের জন্য অত্যন্ত অপমান ও অসম্মানজনক। গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে যে, করোনা ভাইরাস নেগেটিভের ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে প্রবাসীদের প্রবেসের জেরে ইতালি তিন মাসের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। সরকারের অবহেলা, দায়িত্বহীনতা ও চরম অব্যবস্থাপনার কারণেই তাদের ফেরত আসতে হয়েছে।
মানবপাচারের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ ও পাচারের শিকার লোকদের তাদের পরিবারের নিকট নিরাপদে ফিরিয়ে দেয়া এবং ইতালি থেকে অপমানজনকভাবে ফিরে আসার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ইতালি ফেরত অভিবাসীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান
আল্লাহর বিধানের দিকে ফিরলেই বিশ্বটা মানবিক ও শান্তিময় হবে
১০ জুলাই ২০২০
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, মানুষ যদি সত্যিকার অর্থে মহান আল্লাহ তায়ালার বিধানের দিকে ফিরে আসে, তাহলে করোনা-পরবর্তী বিশ্ব একটা শান্তিময় মানবিক বিশ্বে পরিণত হতে পারে।
আমীরে জামায়াত বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে আরো বলেন, দেশবাসী যেন অধিকার সচেতন হওয়ার পাশাপাশি দায়িত্ব সচেতনও হন। নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আপসহীন ও ধারাবাহিক প্রয়াস চালানোর পাশাপাশি পরস্পরের প্রতি দায়িত্বশীল, দরদি ও সহযোগিতামূলক আচরণ করেন।
সর্বোপরি আসমান ও জমিনের মালিক মহান আরশের অধিপতি আল্লাহ তায়ালার দরবারে নিজেদের ভুলত্রুটির কথা স্মরণ করে ক্ষমা প্রার্থনা এবং এই বিপদ উত্তরণে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করুন এবং তার একান্ত দয়ায় আমাদের কাছ থেকে এ বিপদকে সরিয়ে দিন।
দেশের বৃহত্তর ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান দেশের জনপ্রিয় ও সর্বাধিক প্রচারিত সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ অভিমত ব্যক্ত করেন। এ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সাপ্তাহিক সোনার বাংলার বার্তা সম্পাদক ফেরদৌস আহমদ ভূইয়া। সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে তুলে ধরা হলো-
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ; বিশেষ করে পুরো মানবজাতি করোনা ভাইরাস তথা কোভিড-১৯-এ সংক্রমণের কারণে এক মহাসঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
আমীরে জামায়াত : যুগে যুগে এ ধরনের সঙ্কট অতীতেও মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পরীক্ষা কিংবা শাস্তি আকারে এসেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীজুড়ে এ ধরনের ভয়বহ সঙ্কট ইতঃপূর্বে লক্ষ করা যায়নি। কিন্তু কেন? তার উত্তর আমরা কুরআনুল কারীমে খুঁজে পাই। সূরা রূমের ৪১নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যার ফলে তাদেরকে তাদের কিছু কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করানো যায়। হয়তো তারা (আল্লাহর দিকে) ফিরে আসবে।’
বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা লক্ষ করব- অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সর্বত্রই মানুষের ওপর মানুষের জুলুম, দেশের অভ্যন্তরে এবং এক দেশের ওপর অন্য দেশের জুলুম-অত্যাচার ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তুচ্ছ ঘটনায় দুনিয়ার বলবান দেশগুলো দুর্বল দেশ ও জাতি-গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ চালিয়ে লাখ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করছে, লুণ্ঠিত হচ্ছে মা-বোনদের ইজ্জত এবং অসংখ্য বনি আদম আজীবনের তরে পঙ্গুত্ববরণ করছে। লাখ লাখ বনি আদম ভিটামাটি হারিয়ে নিজ দেশ থেকে অজানার উদ্দেশে হিজরত করতে বাধ্য হচ্ছে। এসবই দুনিয়ায় চলমান জুলুমের বাস্তব চিত্র। এমনকি এ ধরনের একটি সঙ্কটময় পরিস্থিতিতেও অপকর্ম ও দুর্বৃত্তপনা থেমে নেই। আল্লাহ তায়ালা এ ধরনের বিপদ-আপদ ও পরীক্ষা দিয়ে মানবজাতিকে অন্যায় ও সীমালঙ্ঘন থেকে ন্যায় এবং সত্যের দিকে, তাঁর আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে আনতে চান। আল্লাহ তায়ালা বিশ্ববাসীকে নিজ নিজ ভুলগুলো বুঝে তা শুধরে নেয়ার শক্তি দান করুন। মানুষ যদি সত্যিকার অর্থে মহান আল্লাহ তায়ালার বিধানের দিকে ফিরে আসে, তাহলে করোনা-পরবর্তী বিশ্ব একটা শান্তিময় মানবিক বিশ্বে পরিণত হতে পারে।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বিভিন্ন গাইডলাইন দিচ্ছে। এসব গাইডলাইন পালন করা নিয়ে আপনার মতামত কী?
আমীরে জামায়াত : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওপরে করোনা প্যান্ডেমিকের মহাসঙ্কটকালে ঐতিহাসিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। যথাযথ তথ্য-উপাত্ত, গবেষণা এবং অভিজ্ঞতার আলোকে জাতি-রাষ্ট্রগুলোকে সময় সময় উপযুক্ত পরামর্শ ও গাইডলাইন দেয়া তাদের কর্তব্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা সেরকম গাইডলাইন দিয়ে থাকলেও মাঝেমধ্যে এর ব্যতিক্রমও লক্ষ করা যায়। যেমন এখন পর্যন্ত করোনা চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত কোনো ওষুধ উৎপাদন হয়নি। কোনো একটি ওষুধকে একবার উপকারী হিসেবে বর্ণনা করে পরবর্তীতে ঠিক বিপরীত মত দিতেও দেখা যাচ্ছে। এরূপ ফেইস মাস্ক ও অন্যান্য বিষয় নিয়েও মত পাল্টাতে দেখা গেছে। এসব বিষয়ে আরো অধিক সতর্ক হলে ভালো হতো। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিশ্বের সব মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানোর এ উদ্যোগ WHO-এর নেয়া প্রয়োজন।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের উন্নত দেশসহ অনেক দেশ হু’র গাইডলাইন অনুযায়ীই নানারকম কর্মসূচি নিয়েছে। এসব কর্মসূচির কারণে তারা সুফল পেয়েছে এবং কোনো কোনো দেশ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করেছে। তা কি বাংলাদেশে করা হচ্ছে?
আমীরে জামায়াত : বাংলাদেশে তা বহুলাংশেই করা হচ্ছে না। যেমন সামাজিক দূরত্ব, স্যানিটাইজারের যৌক্তিক ব্যবহার, সংক্রমিত ব্যক্তিকে যথাযথ আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়নি। অধিকন্তু সীমাহীন দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং সমন্বয়হীনতায় আজ স্বাস্থ্যসেবা বিধ্বস্ত। মানুষ পরীক্ষা করাতে গিয়ে রাস্তায়ই জীবন দিচ্ছে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিরা ন্যূনতম চিকিৎসা পাওয়ার আশায় এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে হন্যে হয়ে ছোটাছুটি করছে। রাস্তায় কিংবা যানবাহনে সামান্য একটু স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে তাদের দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অদক্ষতা, দায়িত্বহীনতা এবং সমন্বয়হীনতা পরিস্থিতির গোড়ার দিক থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত বহাল আছে। প্রথম দিকে বহুল আক্রান্ত বিশ্বের অনেক দেশ থেকে প্রবাসীরা যখন বাংলাদেশে ফিরলেন, তখন যথাযথ পরীক্ষা করা, কোয়ারেন্টিনে নেয়াসহ কোনো সতর্কতাই সরকার অবলম্বন করেনি। পরবর্তীতে সারা দেশে যখন কমবেশি সামাজিক সংক্রমণ লক্ষ করা গেল, তখন রাজধানী ঢাকায় হাতেগোনা কয়টা প্রতিষ্ঠানে টেস্টের একান্ত অপ্রতুল ব্যবস্থা করা হলেও সারা দেশে কিছুই করা হয়নি। করোনা সংক্রমণ যখন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তখন গার্মেন্ট খুলে দেয়ার নামে সারা দেশ থেকে শ্রমিকদের কোনোরকম কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই শিল্পাঞ্চলে নিয়ে আসা হলো। সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি অফিস-আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কোনো পরিকল্পনা ও সুরক্ষা ছাড়াই কোটি কোটি মানুষকে দেশের এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাতায়াতের অবাধ সুযোগ দেয়া হলো। এসবই ছিল দায়িত্বহীন আচরণ। ফলে আজকে সারা দেশ করোনায় সংক্রমিত হয়েছে।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকার টেকনিক্যালসহ বেশ কয়েকটি কমিটি করেছে। সরকার অনেক ক্ষেত্রেই টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারছে না। যার কারণে সংক্রমণের মাত্রা কমছে না। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
আমীরে জামায়াত : সরকার যেসব কমিটি করেছে, কার্যত সরকারই তাদের অকার্যকর করে রেখেছে। নির্বাহী বিভাগ এবং এসব কমিটির মধ্যে কোনো সমন্বয় লক্ষ করা যায়নি। টেকনিক্যাল কমিটির মতামতকে কোনো গুরুত্বই দেয়া হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে হু ঘরে থাকার ব্যাপারে বেশি জোর দিচ্ছে। এতে করে অধিকাংশ কর্মক্ষম ব্যক্তির আর্থিক কর্মকা- বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এখানে তার জীবিকা সন্ধানের কাজ হুমকিতে পড়ছে। এ ব্যাপারে তথা জীবন ও জীবিকার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
আমীরে জামায়াত : এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্ব ছিল অন্যান্য দেশের মতো জনগণের প্রতি মানবিক হয়ে পুরো আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে আপদ উত্তরণে ঢেলে সাজানো। এ ধরনের কোনো উদ্যোগ জনগণ লক্ষ করেনি।
এমনকি ২০২০-২১ অর্থবছরের ব্যাপক ঋণনির্ভর যে বাজেট সরকার গ্রহণ করেছে, তাতেও এ বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। জাতি উদ্বেগের সাথে লক্ষ করল- সরকার সামান্য যেটুকু জনকল্যাণমূলক কাজের ঘোষণা দিয়েছিল, সরকারদলীয় লোকদের ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে দুর্দশাগ্রস্ত জনগণ তার যথাযথ সুফল থেকে বঞ্চিত হলো।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : এ করোনা সঙ্কটকালে সরকার যে বাজেট দিয়েছে, তা কি সঙ্কট উত্তরণে যথাযথ বলে আপনি মনে করেন?
আমীরে জামায়াত : এ ব্যাপারে জামায়াত ইতঃপূর্বেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আমরা বলেছি, এখানে কৃষি খাতকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়নি। বেসরকারি শিক্ষা খাত একেবারেই উপেক্ষিত। রেমিট্যান্সপ্রবাহকে সক্রিয় রাখা, রেমিট্যান্সযোদ্ধাখ্যাত প্রবাসীদের ব্যাপারে কোনো দিকনির্দেশনাই দেয়া হয়নি। এছাড়া অন্যান্য খাত তো আছেই। সংসদে বাজেট পেশের আগেই কতিপয় অতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমরা অনেকগুলো পরামর্শ দিলেও সরকার তা উপেক্ষা করেছে।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : সঙ্কট মোকাবিলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে?
আমীরে জামায়াত : সঙ্কটের সূচনা পর্বেই আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম-
- সরকারকে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে বক্তব্য প্রদান।
- জনগণকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলার জন্য সারা দেশে সচেতনতামূলক লিফলেট তৈরি করে লাখ লাখ কপি বিতরণ এবং সময় সময় সরকার ও জনগণের উদ্দেশে ভিডিও বক্তব্য ও বিবৃতি প্রদান।
- দেশের বিভিন্ন শহরে এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সুরক্ষাসামগ্রী, স্যানিটাইজার, পরিচ্ছন্নতাসামগ্রী, মাস্ক ইত্যাদি ব্যাপকভাবে জনগণের মধ্যে বিতরণ।
- টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে ব্যাপক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান।
- আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা করানো এবং হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে সক্রিয় সহায়তা প্রদান।
- প্রান্তিক, সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র জনগণের কাছে (প্রায় ১০ লাখ পরিবারকে) ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো।
- পবিত্র রমজান মাসে দুর্দশাগ্রস্ত রোজাদার পরিবারসমূহের মধ্যে বিশেষ খাদ্য সহায়তা প্রদান।
- করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিবর্গের জানাজা ও দাফনে সক্রিয় অংশগ্রহণ।
- করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্লাজমা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশব্যাপী এ রোগে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
- সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোয় তাৎক্ষণিক খাদ্য ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে কি সরকারের মতো সব নাগরিকের সমস্যা সমাধানে কাজ করা সম্ভব?
আমীরে জামায়াত : এ ধরনের সঙ্কটকালে সঙ্কট উত্তরণের সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা মূলত সরকারেরই দায়িত্ব। তবে দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোরও যথেষ্ট করণীয় রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন ছিল সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য। কিন্তু দুঃখজনক হলো, বার বার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও সরকার কোনো গুরুত্বই দেয়নি।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : দেশে বলতে গেলে এখন বিরোধী দল নিষিদ্ধ, প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন; এমনকি ত্রাণ তৎপরতায়ও বাধার অভিযোগ আছে। এ অবস্থা পরিবর্তনে বিরোধী দলগুলো কী করছে?
আমীরে জামায়াত : এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তাদের কোনো আচরণই গণতান্ত্রিক নয়। কার্যত দেশের মানুষের সকল গণতান্ত্রিক অধিকারই কেড়ে নিয়ে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর পরিবর্তন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি। অতীতে যেমন জনগণ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার ফিরিয়ে এনেছে, আগামীতে ঠিক তাই হবে। জনগণ তাদের নাগরিক অধিকার দলন ও হরণের অধিকার কাউকে দেয়নি।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : আমাদের প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশের সরকার; এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মমতা সরকারও সর্বদলীয় বৈঠক করে একসাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে সঙ্কট মোকাবিলার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের দেশে দিন দিন দূরত্ব বাড়ছে। এর কারণ কী?
আমীরে জামায়াত : সংক্ষেপে বলতে গেলে সরকারের সদিচ্ছা ও স্বচ্ছতার অভাবই এর মূল কারণ।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : জাতীয় ঐক্য ও সংহতি ছাড়া উন্নয়ন কি সম্ভব?
আমীরে জামায়াত : দেশ ও বিশ্ববাসী ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যরাতের নির্বাচনকে প্রত্যক্ষ করেছে। এই সরকারের জনগণের প্রতি তেমন কোনো দায়বদ্ধতা নেই। কাজেই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ছাড়া উন্নয়নের নামে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনের উৎসব কেবল চলতেই পারে।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : সর্বোপরি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আপনার ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কী পরামর্শ।
আমীরে জামায়াত : আমরা মনে করি, বিশ্বের সব দেশ ও সরকারকে পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ সঙ্কট উত্তরণে কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ এবং ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার মাধ্যমে বিশ^কে একই ছাতার নিচে নিয়ে আসতে হবে।
ভ্যাকসিন ও ওষুধ আবিষ্কার, উৎপাদন, বিতরণ, সরবরাহ এবং বিপণনে সমতা ও সমন্বয় সাধন এবং প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ।
আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ঢেলে সাজানো। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিশেষ সুবিধা প্রদান।
পারস্পরিক হানাহানি, জেদ ও প্রতিশোধের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে বিশ্ব নেতাদের শান্তিপূর্ণ ও মানবিক নতুন একটি বিশ্বগড়ার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ ইসলামের সুমহান আদর্শ বিশ্ববাসীকে এই কঠিন সময়ে সব গ্লানি থেকে মুক্তি দিতে পারে।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : দেশবাসীর উদ্দেশে আপনার বক্তব্য কী?
আমীরে জামায়াত : দেশবাসীকে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি- তারা যেন অধিকার সচেতন হওয়ার পাশাপাশি দায়িত্ব সচেতনও হন। নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আপসহীন ও ধারাবাহিক প্রয়াস চালানোর পাশাপাশি পরস্পরের প্রতি দায়িত্বশীল, দরদি ও সহযোগিতামূলক আচরণ করেন। সর্বোপরি আসমান ও জমিনের মালিক মহান আরশের অধিপতি আল্লাহ তায়ালার দরবারে নিজেদের ভুলত্রুটির কথা স্মরণ করে ক্ষমা প্রার্থনা এবং এই বিপদ উত্তরণে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করুন এবং তার একান্ত দয়ায় আমাদের কাছ থেকে এ বিপদকে সরিয়ে দিন। আমীন।
ডা. শফিকুর রহমানের জীবন বৃত্তান্ত
ডা. শফিকুর রহমান বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অনন্য নাম। এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান অন্যতম। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত ও জাতীয় রাজনৈতিক জীবনে তিনি সততা, যোগ্যতা, মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
জন্ম : জাতির এই সাহসী সন্তান ও প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ আবরু মিয়া এবং মাতার নাম খাতিরুন নেছা। ডা. শফিকুর রহমানরা তিন ভাই ও এক বোন। ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি তৃতীয়।
শিক্ষা ও ক্যারিয়ার : ডা. শফিকুর রহমান ১৯৭৪ সালে স্থানীয় বরমচাল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৬ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৮৩ সালে সিলেট মেডিকেল কলেজ (বর্তমান এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ) থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন।
রাজনৈতিক জীবন : বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ডা. শফিকুর রহমান। ১৯৭৭ সালে দীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়দীপ্ত কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন। পরবর্তীতে এ সংগঠনের সিলেট মেডিকেল কলেজ শাখা সভাপতি এবং সিলেট শহর শাখা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের মাধ্যমে তিনি বৃহত্তর রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। এরপর সিলেট শহর, জেলা ও মহানগরী আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হয়ে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর রুকনগণের (সদস্য) প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে আমীর নির্বাচিত হন এবং ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ২০২০-২২ কার্যকালের জন্য তিনি আমীরে জামায়াত হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে উল্লেখযোগ্য দায়িত্বসমূহ
১৯৮৫ : কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার নির্বাচিত সদস্য;
১৯৮৬-৮৮ : সিলেট জেলা সেক্রেটারি;
১৯৮৯-৯১ : সিলেট জেলা নায়েবে আমীর;
১৯৯১-৯৮ : সিলেট জেলা আমীর;
১৯৯৮ : কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য;
১৯৯৮-২০০৭ : সিলেট মহানগর আমীর;
২০১০ : সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল;
২০১১ : নির্বাহী পরিষদ সদস্য;
২০১১ : ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল;
২০১৬ : সেক্রেটারি জেনারেল;
২০১৯ : আমীরে জামায়াত।
পারিবারিক জীবন : ডা. শফিকুর রহমান ১৯৮৫ সালে ডা. আমিনা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ডা. আমিনা বেগম অষ্টম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। ডা. শফিকুর রহমান দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক। বড় মেয়ে এফসিপিএস (কার্ডিওলজি) অধ্যয়নরত এবং একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেজিস্ট্রারার হিসেবে কর্মরত। ছোট মেয়ে এমবিবিএস ও এমপিএইচ ডিগ্রি অর্জনের পর এখন একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। একমাত্র ছেলে এমবিবিএস ৫ম বর্ষে (শেষবর্ষ) অধ্যয়নতরত।
সামাজিক কাজ : জননেতা ডা. শফিকুর রহমান প্রখ্যাত রাজনীতিবিদই নন, বরং তিনি একজন খ্যাতিমান সমাজসেবক, বলিষ্ঠ সংগঠক এবং সফল উদ্যোক্তা। তিনি একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। একনজরে আমরা ডা. শফিকুর রহমানের সামাজিক কাজের কিছু অংশ দেখব-
১. একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
২. একটি হাইস্কুল ও কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন।
৩. একাধিক হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন।
৪. একটি কামিল মাদরাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন।
৫. একাধিক এতিমখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা।
৬. একাধিক দাতব্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা।
৭. কয়েকটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা।
৮. ছাত্রজীবনে মেডিকেল কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী ক্লাব ‘পালস’ প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন।
৯. একাধিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা।
১০. সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের আজীবন সদস্য।
১১. বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য।
১২. বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) আজীবন সদস্য।
১৩. সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য।
বিদেশ ভ্রমণ : ডা. শফিকুর রহমান বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনারে যোগদানের জন্য যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, স্পেন, গ্রিস, তুরস্ক, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিপাইন্স, ব্রুনাই, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন।
প্রকাশিত সংবাদের লিঙ্কঃ সাপ্তাহিক সোনার বাংলা
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের আহবান
৯ জুলাই ২০২০
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ৯ জুলাই এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “দেশে বিপুল সংখ্যক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কিন্ডারগার্টেন, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। এসকল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন প্রায় ৯ লক্ষাধিক লোক। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ মূলত টিউশন ফি ও ছাত্রদের বেতন আদায়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। করোনার কারণে তাদের আর্থিক আয়ের উৎস পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাড়ি ভাড়া, শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন দিতে না পারায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর্থিক দুরবস্থা ও ভর্তুকি প্রদানের কারণে অনেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার অনেকে শিক্ষকতার পেশাও বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। আয় না থাকায় ঢাকা শহর ছেড়ে অনেকে পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। এক কথায় বলা যায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীগণ অত্যন্ত অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আমরা মনে করি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসকল শিক্ষকগণ হলেন জাতির বিবেক ও মানুষ গড়ার কারিগর। আমাদের সন্তানদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পিছনে রয়েছে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশপাশি বেসরকারি এসকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাখাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। কিন্তু খুবই পরিতাপের বিষয় সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্নখাতে আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দেয়া হলেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সহযোগিতার কথা ঘোষণা করা হয়নি।
তাই দেশের স্বার্থে বেসরকারি এ বিপুল সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য অনতিবিলম্বে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”
দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণকারী ও নিপীড়নমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার বন্ধের আহবান
৯ জুলাই ২০২০
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধ এবং এই আইনের মাধ্যমে গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করার আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ৯ জুলাই এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আইন তৈরি করা হয় মানুষের কল্যাণে। সংবিধান হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন। বাংলাদেশের সংবিধানে মানুষের মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক চলছিল। সাম্প্রতিক সময়ে এই আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, স্বাধীন মতপ্রকাশ ও কণ্ঠরোধ করার জন্যই এই আইনটি তৈরি করা হয়েছে। সাংবাদিক, চিকিৎসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এমনকি ১৫ বছরের বালকও এই আইনের অপব্যবহার থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিক্যাল নাইনটিনের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে এই আইনে ৭১টি এবং ২০১৯ সালে ৬৩টি মামলা করা হয়। চলতি বছর ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত মামলা হয়েছে। এ আইনে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ২৭ জুন ইনকিলাব পত্রিকার সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিনসহ পত্রিকাটির বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিগত কয়েক মাসে এ আইনে ৩৭ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়।
অভিজ্ঞমহল মনে করেন সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং সরকার দলীয় লুটেরারা যাতে অবাধে দুর্নীতি করতে পারে তার জন্যই এই হয়রানিমূলক আইনটি করা হয়েছে। মূলত এই আইনকে সরকার নিজেদের দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে নিপীড়নমূলক আখ্যায়িত করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ- এইচআরডব্লিউ। সংস্থাটি বলছে- সরকার ও রাজনৈতিক নেতাদের সমালোচনাকারী অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এবং অন্যদের হয়রানি ও অনির্দিষ্টকাল ধরে আটকে রাখতে অবমাননাকর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করছে বাংলাদেশ। বাকস্বাধীনতা রক্ষায় আইনটি সংশোধন বা বাতিলের জন্য প্রশাসনের অবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলেও মনে করে এইচআরডব্লিউ।
দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণকারী ও নিপীড়নমূলক এই আইনের অপব্যবহার বন্ধ এবং এই আইনে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখা, পেশাজীবি এবং রামপুরা জোনের ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলনে সম্মানিত আমীরে জামায়াত জনাব ডাঃ শফিকুর রহমান নিম্নোক্ত বক্তব্য পেশ করেন-
৬-৭-২০২০
“ইন্নাল হামাদা লিল্লাহ, আসসালাতু আসসালামু আ’লা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)”
সম্মানিত ভাইয়েরা,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
১. মনে রাখতে হবে আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি আবার আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব
২. আমাদেরকে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে কোন শর্ত ছাড়াই
৩. আনুগত্য করতে আল্লাহর, রাসুল (ﷺ)-এর এবং দায়িত্বশীলদের যতক্ষণ না পর্যন্ত দায়িত্বশীল শরীয়ত বিরোধী কোন নির্দেশ না দেন।
৪, আল্লাহ আমাদেরকে খলীফার মর্যাদা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, আল্লাহ বলেন-
সূরাঃ আল-বাকারা [২:৩০]
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَٰٓئِكَةِ إِنِّى جَاعِلٌ فِى ٱلْأَرْضِ خَلِيفَةً
”আবার সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, “আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা-প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই ৷”
সুতরাং দাসত্ব এবং মর্যাদার দিক থেকে আমাদের পরিচয় দু’টি
-আব্দাল্লাহ ও
-খালিফাতুল্লাহ
৫. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে হায়াত এবং মৃত্যুর মাঝামাঝি অবস্থায় নির্ধারিত সময় এবং সুযোগ দিয়েছেন কাজের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-
সূরাঃ আল-মুলক [৬৭:২]
ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْمَوْتَ وَٱلْحَيَوٰةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفُورُ
তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? আর তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীলও।
৬. এই নির্ধারিত সময় এবং সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাদেরকে হায়াতের সফর শেষে আগামীকাল (পরকালের) এর জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছি তার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সুরা হাশরের ১৮ নং আয়াতে আল্লাহ তা’য়াল সেই নির্দেশই দিয়েছেন-
সূরাঃ আল-হাশর [৫৯:১৮]
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا تَعْمَلُونَ
”হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো। আর প্রত্যেকেই যেন লক্ষ রাখে, সে আগামীকালের জন্য কি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আল্লাহ নিশ্চিতভাবেই তোমাদের সেই সব কাজ সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা করে থাক।”
৭. মানুষের গোপন এবং প্রকাশ্য সব কিছুর খবর তিনি জানেন, দুনিয়ার কোন কিছুই আল্লাহর জানার বাহিরে নয়।
৮. আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করবেন এবং কিভাবে করবেন তাও জানিয়ে দিয়েছেন সুরা বাক্বারার ১৫৫ আয়াতে-
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَىْءٍ مِّنَ ٱلْخَوْفِ وَٱلْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ ٱلْأَمْوَٰلِ وَٱلْأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ
” আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো। এ অবস্থায় যারা সবর করে”
৯. দুনিয়ার বাড়ি, গাড়ি, সম্পদ, ঐশ্বর্য্য সব কিছুই প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সূরাঃ আল-হাদিদ [৫৭:২০]
ٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّمَا ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌۢ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِى ٱلْأَمْوَٰلِ وَٱلْأَوْلَٰدِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ ٱلْكُفَّارَ نَبَاتُهُۥ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَىٰهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَٰمًا وَفِى ٱلْءَاخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضْوَٰنٌ وَمَا ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَآ إِلَّا مَتَٰعُ ٱلْغُرُور
“ভালভাবে জেনে রাখো দুনিয়ার এ জীবন, একটা খেলা, হাসি তামাসা, বাহ্যিক চাকচিক্য, তোমাদের পারস্পরিক গৌরব ও অহংকার এবং সন্তান-সন্তুতি ও অর্থ-সম্পদে পরস্পরকে অতিক্রম করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এর উপমা হচ্ছে, বৃষ্টি হয়ে গেল এবং তার ফলে উৎপন্ন উদ্ভিদরাজি দেখে কৃষক আনন্দে উৎফূল্ল হয়ে উঠলো। তারপর সে ফসল পেকে যায় এবং তোমরা দেখতে পাও যে, তা হলদে বর্ণ ধারণ করে এবং পরে তা ভূষিতে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে আখেরাত এমন স্থান যেখানে রয়েছে কঠিন আযাব, আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়।
১০. আল্লাহর কাছে মানুষের মার্যাদা নির্ধারিত হবে তাক্বওয়ার ভিত্তিতে।
১১. আল্লাহর বিরাট মেহেরবানী আমাদেরকে নেয়ামত ভরা এই সংগঠনে শামীল করেছেন এবং আমাদের মুরুব্বীদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত সংগঠনের গুরু দায়িত্ব আমাদের উপর অর্পিত হয়েছে।
১২. আমরা সবাই সবার জায়গায় থেকে দায়িত্বশীল, আমাদেরকে দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হবে। রাসূল ﷺ বলেন-
ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: ্র كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتهِ
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। সংক্ষেপিত -[বুখারি ২৫৫৮, ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫২০০, ৭১৩৮, মুসলিম ১৮২৯, তিরমিযি ১৭০৫, আবু দাউদ ২৯২৮, আহমদ ৪৪৮১, ৫১৪৮, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭, ৫৯৯০]
১৩. সুতরাং এ দায়িত্ব পালন সম্পর্কে আমাদেরকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-
আল্লাহ এবং রাসূলের কিতাব থেকে শিক্ষা নিতে হবে কিতাবের (আরবী) ভাষায়।
শব্দে শব্দে কুরআন বুঝার চেষ্টা করতে হবে।
আমাদের নিজ, নিজের পরিবার ও অপর ভাইদের পরিবারকে গড়ে তুলতে হবে কুরআনের শিক্ষার আলোকে।
আমার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী আমল করা এবং অন্যদের কাছে সে দাওয়াত পৌছানোর চেষ্টা করতে হবে।
আমাদের কথা ও কাজের মিল রাখা। একইভাবে অন্য ভাইদেরকে সংশোধন করার চেষ্টা করতে হবে।
সুরা সফ এর ২ ও ৩ নং আয়াতে এই তাগিদ দিয়েছেন এবং সতর্ক করেছেন।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ
“হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা নিজেরা করো না?”
كَبُرَ مَقْتًا عِندَ ٱللَّهِ أَن تَقُولُوا۟ مَا لَا تَفْعَلُونَ
“আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ যে, তোমরা এমন কথা বলো যা করো না।”
আমার ইউনিট, ওয়ার্ড তথা দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার মানুষদের সাথে সমব্যাথী হবেন, তাদের পাশে দাঁড়াবেন, সামর্থ্যানুযায়ী তাদের সহযোগিতা করবেন।
আমাদের ভাইদের ব্যাপারেও আন্তরিক এবং দরদী অভিভাবক এর মত ব্যবহার করবেন।
লেনদেনের স্বচ্ছতার ব্যাপারে আরো অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে।
ঋনমুক্ত হবেন, ঋন মুক্ত থাকবেন।
সদস্য ভাইয়েরা সকল ইউনিট এবং কর্মীদের ভাগ করে নিয়ে ত্বত্তাবধান করবেন।
পরিবারের প্রতি হক আদায় করবেন। বাবা মায়ের হক আদায় এবং তাদের জন্য দোয়া করবেন,আল্লাহ যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছেন-
সূরাঃ বনি ইসরাইল- ২৩ ও ২৪
وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوٓا۟ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلْوَٰلِدَيْنِ إِحْسَٰنًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ ٱلْكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمً
“তোমার রব ফায়সালা করে দিয়েছেনঃ (১) তোমরা কারোর ইবাদাত করো না, একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করো। (২) পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদেরকে “উহ্” পর্যন্তও বলো না এবং তাদেরকে ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো।”
وَٱخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِى صَغِيرًا
“আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলেঃ হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।”
স্ত্রীর হক আদায় করবেন।
সন্তানদেরকে আদরের শাসনে গড়ে তুলবেন।
ইউনিটের যে সকল ভাই শপথ নিয়েছেন তারা শপথের হক আদায় করবেন এবং যারা এখনো নেননি তারা দ্রুত শপথের বলে বলিয়ান হয়ে দ্বীন কায়েমের পথে আরো বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে আসবেন।
মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্তির এই আন্দোলনে যথাযথ হক আদায় করে ভূমিকা পালন করবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন॥
আল্লাহ হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
বিজিএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ
৪ জুলাই ২০২০
রাষ্টায়ত্ত সকল পাটকল বন্ধ করে দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে শ্রমিকদের প্রাপ্য সমুদয় অর্থ নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ৪ঠা জুলাই এক বিবৃতিতে প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “২ জুলাই বিজিএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি পাটকল এক সাথে বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। এ সকল কারখানায় স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। ‘গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের’ মাধ্যমে এসকল শ্রমিকদের অবসায়নের ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোপূর্বে ৫টি পাটকল শ্রমিকদের ‘গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের’ মাধ্যমে অবসায়ন করা হলেও তাদের ন্যায্য পাওনা, পিএফ, গ্র্যাচুইটি ইত্যাদি আজ অবধি পরিশোধ করা হয়নি। আবার নতুন করে বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এতে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে পাবার ব্যাপারে চরম হতাশা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। কারণ শ্রমিকদের সাথে দেনা পরিশোধের ব্যাপারে সরকারের ইতোপূর্বেকার ওয়াদা রক্ষার অভিজ্ঞতা মোটেই ভালো নয়। বরং শ্রমিকদের প্রতারিত হবার দুঃখজনক ঘটনাই বেশি।
এ ছাড়া হাজার হাজার চাকুরিচ্যুত বদলি শ্রমিক এ সিদ্ধান্তের কারণে যে চরম অমানবিক জীবনের মুখোমুখি হলো, সে ব্যাপারে সরকারের ঘোষণায় কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই।
এ দিকে বিশ্বব্যাপী পাট-শিল্পের জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। অব্যাহতভাবে লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশের পাট-শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা একটি অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত। এক সাথে এতগুলো কারখানা বন্ধ ঘোষণা করার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, সরকারি খাতের পাটকলগুলো সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে এবং এগুলোকে কীভাবে প্রতিযোগিতায় আনা যায় ও শক্তিশালী করা যায় সে বিবেচনায় পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পাটমন্ত্রীর এ বক্তব্য জনগণের মাঝে সংশয় সৃষ্টি করেছে। আমরা মনে করি প্রতিষ্ঠান চলমান থাকা অবস্থায় সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা যায়। এজন্য বন্ধ ঘোষণা অযৌক্তিক।
বিবৃতিতে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করার এ সিদ্ধান্ত খানিকটা এরকম ‘মাথা ব্যথা হয়েছে, তো মাথা কেটে ফেল!’ এটা অযৌক্তিক ও অমানবিক।
আমরা মনে করি দুর্নীতিরোধ, সঠিক পরিচালনা পদ্ধতি ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে কারখানাগুলো সচল রাখা সম্ভব ছিল।
দেশে বিরাজমান করোনা পরিস্থিতির দুর্যোগের মধ্যে মানুষ চাকুরি হারিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কপর্দকহীন মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। এ মুহূর্তে কারখানা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছু নয়।
মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা বিবেচনা করে অযৌক্তিক এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে কারখানাগুলো সচল রাখার ব্যাপারে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।”
নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সদস্য ভাই-বোনদের নিয়ে আয়োজিত “শিক্ষা বৈঠকে” মুহতারাম আমীরে জামায়াতের নসীহত
২-৭-২০২০
১. বন্দেগীর সুতীব্র অনুভূতি নিয়ে আল্লাহর ইবাদত করুন।
২. পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করুন ও তাঁদের অধিকার আদায় করুন।
৩. স্বামীরা তাদের স্ত্রীর মোহরানা বাকী থাকলে আদায় করে দিন এবং স্ত্রীরদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
৪. স্ত্রীরা স্বামীদের খেদমত করুন এবং তাদের পিতা-মাতাদের নিজেদের পিতা-মাতাদের মত মনে করে খেদমত করুন।
৫. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখুন।
৬. নিজেরা পরস্পরের প্রতি রহমদীল হোন।
৭.লেনদেনে স্বচ্ছতা বজায় রাখুন।
৮. উধ্বতন সংগঠনের যে কোন নির্দেশনা আসলে প্রথমে সেটা মনোযোগ দিয়ে শুনন এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা করে সেটা বাস্তবায়নে নেমে পড়ুন।
৯.অধস্তন সংগঠনের জনশক্তিদের কাজ যথাযথভাবে বুজিয়ে দিন এবং সেটা নিয়মিত মনিটরিং করুন।
১০. নিয়মিত ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড বুঝে কোরআন অধ্যয়ন করুন এবং কোরআন শুদ্ধ করার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে বাড়ীর বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বির সাহায্য নিন। সেটা সম্ভব না হলে বাড়ীতে ওস্তাদ রেখে কোরআন শিখুন। সেটা ও সম্ভব না হলে অনলাইন কারীদের তালিমুল কোরআন সংক্রান্ত অনুষ্ঠান ও ভিডিগুলো বার বার দেখুন।
১১. জীবনের সকল ক্ষেত্রে শপথের চেতনাকে বুকে ধারণ করার চেষ্টা করুন।
দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ কেন্দ্রীয় আমীরে জামায়াতের
৩০-৬-২০২০
দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ৩০ জুন এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “প্রবল বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলের পানিতে অনেক নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কিছু নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। ইতোমধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কুমিল্লায় বন্যার বিস্তৃতি ঘটেছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে জামালপুরে ১ জন মারা গিয়েছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ ও জামালপুরে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। বাড়ি-ঘর, জমির ফসল ডুবে যাওয়ায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকগণ হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে।
করোনার প্রাদুর্ভাবে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে দেশের মানুষ এমনিতেই নানা সংকটের মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছে। এর মধ্যে আকস্মিক বন্যার ফলে মানুষ চরম অসহায় হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বন্যা কবলিত অঞ্চলে খাদ্য, আশ্রয়, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে বন্যা কবলিত এলাকার এখনো কোনো খোঁজ নেয়া হয়নি এবং সাহায্য-সহযোগিতাও প্রদান করা হয়নি।
আমরা মনে করি বন্যা কবলিত এলাকার জনগণের মধ্যে ত্রাণ-সামগ্রী পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী আগামী কয়েক দিনে পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ার পূর্বেই দুর্যোগ মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
দেশের ভয়াবহ এ দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে সাহায্য নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দল-মত-নির্বিশেষে সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত। প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিবর্গ বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সকল দায়িত্বশীল ও সর্বস্তরের জনশক্তির প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”
বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ ডুবে ৩৬ জনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমীরের গভীর শোক প্রকাশ
২৯-৬-২০২০
বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ ডুবে ৩৬ জন লোকের লাশ উদ্ধার এবং অজ্ঞাত সংখ্যক লোক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ২৯ জুন এক শোকবাণী প্রদান করেছেন। শোকবাণীতে তিনি বলেন, “রাজধানীর শ্যামবাজার সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রায় একশ জন যাত্রী নিয়ে ময়ূর-২ লঞ্চের সাথে সংঘর্ষে মর্নিং বার্ড নামে একটি লঞ্চ আজ সকালে ডুবে যায়। ২৯ জুন সন্ধ্যা পর্যন্ত এ দুর্ঘটনায় পুরুষ, নারী ও শিশুসহ ৩৬ জন লোকের লাশ উদ্ধার হয়েছে এবং এখনো অজ্ঞাত সংখ্যক লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মর্মান্তিক এ লঞ্চ দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন আমি তাদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। নিহতদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। লঞ্চ ডুবির ঘটনায় এখনো যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের দ্রুত উদ্ধারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ও নিহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি প্রতি বছরই এ ধরনের লঞ্চ ডুবির ঘটনা ঘটছে। লঞ্চ দুর্ঘটনার পর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তদন্তের রিপোর্ট কখনো প্রকাশিত হয় না। এ সকল দুর্ঘটনায় দোষীদের কোনো বিচার হতে দেখা যায় না। বিচারহীনতার ফলে প্রতি বছরই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে লঞ্চ ডুবির ঘটনার কারণ উদঘাটন করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা এবং দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”
সংগঠনের সদস্য/সদস্য প্রার্থী/কর্মীদের উদ্দেশে মুহতারাম আমীরে জামায়াতের নসীহত সমূহঃ-
৫-৬-২০২০
১. নিজের দিকে খেয়াল করুন,পরের সমালোচনা বন্ধ করুন।
২. হকদারের হক ফেরত দিন।
৩. স্ত্রীর মোহরানা প্রদান করুন। কবিরা গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।
৪. নিজ অবস্থানে নতুন দ্বায়িত্বশীল তৈরী করুন। দায়িত্বে কেউ চিরস্হায়ী থাকবে না। ৫. কর্মীদের দরদি মন, রহম, করুণা দৃষ্টিতে দেখুন।
৬. যেকোন ভাল কথা বলার আগে নিজে আমল করুন। বক্তা সিলেকশানে যার কথা কাজের মিল দেখবেন, ঐ বক্তাকে দ্বীনি প্রোগ্রামে মেহমান করবেন।
৭. কোরআনকে অন্তর দিয়ে বুঝুন ও গ্রহণ করুন।
৮. পরিবারের প্রতি ইনসাফ করুন। বিশেষ করে মা ও স্ত্রীর প্রতি ইনসাফ করুন। বাবা-মায়ের প্রতি রহমতের হাত প্রসারিত করুন। কোনো অবস্থায় যাতে কষ্ট না পান সে দিকে খেয়াল করুন। বাবা- মায়ের পাশাপাশি আপনার সন্তানের মা হিসেবে আপনার স্ত্রীকেও সম্মানের চোখে দেখুন।
৯. মনে রাখবেন আপনারা স্ব-স্ব জায়গায় আল্লার প্রতিনিধি। এই অনুভূতি নিয়ে ময়দানে কাজ করবেন।
১০. মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সহীহ্ বুঝ দান করুন। দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করুন। সর্বোপরি মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন।
ডা. শফিকুর রহমান আমীর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী