শহীদ আমীরে জামায়াতের গ্রেফতার হওয়ার স্মৃতিময় সে দিনটি
আজ ২৯শে জুন । মনে পড়ে আজ থেকে ১০ বছর আগের কথা।২০১০ সালের এইদিনে কেন্দ্রীয় অফিসের প্রচার বিভাগে বসে বুলেটিনের কাজ করছিলাম।হঠাৎ আমীরে জামায়াত শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী আমাকে তার রূমে ডেকে পঠালেন।কেন জানি তাকে খুব ব্যস্ত মনে হলো। তিনি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত আজকের খবর সম্পর্কে জানতে চাইলেন।তখন দুপুরের খাবারের সময়।তিনি বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছিলেন।আমার খাবারের কথা জিজ্ঞেস করলেন। বললাম আমি একটু আগেই খেয়েছি।তিনি চলমান রাজনীতি, তার ব্যক্তিগত অতীত জীবনের কিছু ঘটনা উল্লেখ করে বললেন সময় সুযোগ মত কাজে লাগিও ।আমি অবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছি।বিকেলে তাঁর প্রেসক্লাবে প্রোগ্রাম রয়েছে। তার আগে ওনার মুখ থেকে চলমান পরিস্হিতির বর্ণনা ,ভবিষ্যতে লেখার নির্দেশিকা আমাকে ভাবনায় ফেলে দিলো!সকলেই জানেন শহীদ আমীরে জামায়াত খুব কম কথা বলতেন।তিনি খুবই সূক্ষদর্শী ছিলেন। পরিস্হিতি সহজেই আঁচ করতে পারতেন। আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার কাছে কোন মেসেজ আছে? তিনি খুব বিষন্ন ভাবে তাকিয়ে বললেন আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হবেনা। শহীদ নিজামী ভাইয়ের কথাগুলো আমাকে বিষন্ন করে তুললো। তিনি আরো কিছু বিষয়ে আমাকে নোট নিতে বললেন। আমি তার নির্দেশ পালন করলাম।অন্য কাজ থাকায় আমি অফিস থেকে বের হয়ে এলাম।তিনি বিকেলে প্রেসক্লাবে প্রোগ্রামে গেলেন।ফেরার পথে প্রেসক্লাবেই তাকে গ্রেফতার করা হলো।সেদিনই বিকেলে গ্ৰেফতার হলেন নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং সেক্রেটারী জেনারেল জনাব আলী আহসান মুহাম্মদ মোজাহিদ। ততক্ষনে আমি বুঝতে পারলাম তার বিষন্নতা-বিশেষ নোট দেয়ার কারন। তিনি আর ফিরে আসলেন না।এর ৬ বছর পর ২০১৬ সালের ১১ মে তিনি ফিরে গেলেন তার প্রভুর দরবারে। ৬ বছরে বহুবার তাঁর সাথে আদালতে , কারাগারে সাক্ষাৎ হয়েছে। প্রতিটি মূহুর্তের স্মৃতিগুলো আমাকে উজ্জীবিত করে। প্রতি বছর ২৯ জুন আসে আবার চলে যায় । কিন্তু এ দিনটির স্মৃতি আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না। তিনি যে আমানত রেখে গেছেন তা যেনো আমরা রক্ষা করতে পারি সর্বদা প্রভুর দরবারে এ দোয়াই করি।তার মত একজন আলেমে দ্বীনের রক্ত ঝড়েছে এ জমিনে। আমার নিকট বারবার সূরা ইয়াসীনের সে দৃশ্যের কথা মনে পড়ে, আল্লাহর পথে আহবান কারী একজন ব্যক্তিকে হত্যার পর হত্যাকারীদের বাড়াবাড়ি যখন বেড়ে গেলো হঠাৎ আসমানে এক প্রচন্ড আওয়াজ হলো,আর জনপদের লোকেরা বেহুশ হয়ে পড়ে গেলো । ফেরেশতাগন জমিনকে ওলট পালট করে দিলো। আল্লাহ জালেমদের ধ্বংস করে দিলেন। আজ করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত জনপদে বার বার মনে হচ্ছে,বিনা দোষে যে জমিনে আল্লার প্রিয় গোলামদের হত্যা করা হলো; না জানি সে জনপদে আল্লাহ কোন আযাব নাজিল করেন কি না! মহান রবের নিকট দেয়া করি – হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের ক্ষমা করো !জাতিকে মুক্তি দাও ! আমাদের শহীদ নেতৃবৃন্দকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করো। আমীন।।
লেখক-মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারী
আগামীর দিন ইসলামের
সাঈয়েদ কুতুব শহীদ (রঃ)
সমগ্র মানবতা আজ বস্তূবাদী সভ্যতার জিঞ্জীরে আবদ্ধ , মানব বিধ্বংসী মতবাদ সমুহ মানবতাকে ঘিরে রেখেছে চতুর্দিক থেকে, এই বহুমুখী সমস্যায় হুমকীর সম্মুখীন এই মানবতাকে কেবলমাত্র ইসলামই রক্ষা করতে পারে। আর কেবলমাত্র ইসলামই মানুষের মৌলিক প্রয়োজন পূরণে সক্ষম এবং মানুষের ফিতরাতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি বিধান। আর ইসলামই শুধুমাত্র একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা যা মানুষের শারীরিক চাহিদার মধ্যে সমন্বয় সাধন করার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক অগ্রগতির গতিশীলতায় প্রত্যাশিত গতির সঞ্চার করে। ইসলাম মানুষের জন্য এমন এক জীবন ব্যবস্থা পেশ করেছে যে, মানুষ পৃথিবীর ইতিহাসে তার তুলনা খুঁজে পাবে না। এই সকল বিষয়কে জানার পরেও এবং এমন একটি পদ্ধতির জন্য আকাঙ্ক্ষী হওয়া সত্ত্বেও, মিঃ ডুল্লেস এর মত মানুষ যিনি এই সিস্টেমের প্রতিষ্ঠার জন্য সাহায্য কামনা করতেন – এমন একটি পদ্ধতিকে যারা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চান সেই ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলনকে দুনিয়ার সর্বত্রই চরম ভাবে নির্যাতিত হতে হচ্ছে। বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এবং প্রোপ্যাগান্ডা চালিয়ে এই বিধানকে দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এবং মানুষের মন থেকে এই কালজয়ী সভ্যতাকে মুছে ফেলার জন্য বাতিল শক্তি তার সকল শক্তি দিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানবতার মুক্তির সনদ এই ইসলামের উপর তারা যে কত জঘন্য আক্রমন পরিচালনা করছে, ধীরে ধীরে তা আজ সকলের সামনে উম্মোচিত হচ্ছে। পাশ্চাত্যের একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানীর কথা অবশ্যই এখানে প্রণিধান যোগ্য, তিনি বলেছেন, ‘মানুষের সত্যিকারের প্রয়োজনের এবং ফিতরাতের বিপরীত এই আধুনিক সভ্যতা মানবতাকে এক ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন করেছে। বস্তুবাদী দর্শনের যুক্তির মাধ্যমে মানবতাকে হুমকী দেওয়া হচ্ছে, যা সুস্পষ্টভাবে একটি ধ্বংসযজ্ঞ।‘ মিঃ ডুল্লেস এক্ষেত্রে সতর্কতা স্বরূপ বলেছেন যে, বস্তুবাদী সভ্যতার মরীচিকা দেখিয়ে আজ সমগ্র মানবতাকে ধ্বংসের কিনারে নিয়ে আসা হয়েছে। মানুষ আজ সারা দুনিয়াতে মানবতার শত্রুদের সকল পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তাঁদেরও জানা থাকা উচিত যে, তাঁদেরকে এই অবস্থা থেকে কেবলমাত্র মুক্তি দিতে পারে ইসলাম। কিন্তু এই বিশ্বাসকে নস্যাৎ করার জন্য ইসলামের বিরুদ্ধে আজ চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। আমরা তাঁদের এই সকল ষড়যন্ত্রের জবাবে বলতে চাই, আগামীর দিন যে ইসলামের এই ব্যাপারে আমাদের যে বিশ্বাস এবং আস্থা রয়েছে এই বিশ্বাসে বিন্দু মাত্র সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারবে না। ইসলাম যে আজ সকল জায়গায় বাতিলের ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিনত হচ্ছে এবং সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে এটা নতুন কিছু নয়। ইসলাম তার সুদীর্ঘ ইতিহাসে এর পূর্বেও আরও অনেক ষড়যন্ত্রের এবং ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে । ইসলাম সব সময় তার নিজের শক্তিতে বলিয়ান। তার জন্য অন্য কোন শক্তির প্রয়োজন নেই। যেই দেশ এবং জাতি এর পক্ষাবলম্বন করেছে তারাই বিজয়ী হয়েছে এবং সম্মানের সাথে টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছে। এই ইসলামই তাতার দের আক্রমন থেকে মুসলমানদের রক্ষা করেছে। ক্রুসেডাররা যেমনি ভাবে আন্দালুসিয়ায় এবং ইয়াহুদিরা ফিলিস্তিনে বিজয় লাভ করেছে যদি তাতাররা সেই সময়ে মুসলিম দের উপরে পরিপূর্ণ ভাবে বিজয় লাভ করতে সক্ষম হত তাহলে না আজ আরব জাতী থাকত, না থাকত আরবী ভাষা ও আরব দেশ। প্রাচীন আন্দালুসিয়া এবং বর্তমানের ফিলিস্তিন এই কথার সাক্ষ্য বহন করে যে, ইসলাম যদি কোথাও থেকে মুলোৎপাটিত হয় তাহলে না সেখানে কোন জাতী থাকে আর না থাকে কোন ভাষা। এই অঞ্চলকে (আরবঅঞ্চল) তাতারদের আক্রমন থেকে রক্ষাকারী মামলুকীগণ, তারা কিন্তু আরব ছিল না।বরং তারা মূলত ছিল তাতার। মূলত তারা ইসলামকে রক্ষা করার জন্য তাঁদের বংশধরদের আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। কারন তারা ছিল মুসলিম। তারা ইসলামী আকিদা এবং বিশ্বাসকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। এই লক্ষ্যে তারা ইমাম ইবনে তাইমিয়ার দলে যোগদান করেন। যিনি সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেন এবং বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক ভাবে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করেন। সালাহ উদ্দিন আয়ুবী আরব ছিলেন না, তিনি ছিলেন কুরদিশ। এর পরও তিনি এই অঞ্চলের আরব এবং আরবী ভাষা রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করেছেন। ক্রুসেডারদের জুলুম নির্যাতন থেকে এই অঞ্চলের ইসলাম এবং মুসলমানদের রক্ষা করার সময় আরবী ভাষাকেও ক্রুসেডারদের আক্রমন থেকে রক্ষা করেন। যেই চেতনা তাকে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করতে প্রেরণা যুগিয়েছিল তা ছিল ইসলাম এবং ঈমানের চেতনা। যাহির বায়বারস, মুযাফফের কুতুয এবং মালিক নাসির যে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এর মূলেও ছিল ইসলাম। আলজেরিয়াতে যে ১৫০ বছর ধরে যুদ্ধ হয়েছিল এর মূলেও ছিল ইসলাম। ইসলাম সেখানে আরব জাতীকে স্থায়িত্ত্ব দান করেছে। ফ্রান্স আলজেরিয়াতে আরবী ভাষা শিক্ষাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আরবী ভাষার কারণে যতদিন পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সেই চেতনা বিদ্যমান ছিল ততদিন তারা ফরাসীদের বিরুদ্ধে তাঁদের যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এর পর ইসলাম তাঁদেরকে চেতনা যোগায় এবং এই সংগ্রামের পথে প্রেরণার সৃষ্টি করে। দীর্ঘ এই সংগ্রামে আলজেরিয়ান মুসলিমদেরকে যে শক্তিটি টিকে থাকতে সাহায্য করেছিল তা ছিল ইসলাম। এই ইসলামের বদৌলতেই তারা ফরাসী কাফিরদেরকে পরাজিত করে এবং তারা কোন দিন এই ক্রুসেডারদের কাছে মাথানত করেনি। শুধুমাত্র ইসলামের কারণেই প্রতিরোধের এই রূহটি অব্যাহত ছিল। ফলশ্রুতিতে আব্দুলহামিদ বিন বাদিসের নেতৃত্বে যে ইসলামী আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা মুসলমানদেরকে পুনরায় একত্রিত করে জাগিয়ে তুলতে এক অবিস্মরণীয় ভুমিকা পালন করে। এই জন্যই এই গাফিল এবং পথভ্রষ্টরা এই কথা জানার কারণে এই ইসলামকে ধ্বংস করতে চায়। তারা ইসলামের এই শক্তি সম্পর্কে অবহিত ছিল। তারা জানত যে ইসলামের এই বিপ্লবী শক্তি এবং রুহ দ্বারা মুসলমানরা পুনরায় জেগে উঠবে এবং তাঁদেরকে পরাজিত করবে। এই জন্য তারা তাঁদের এই যুদ্ধকে শুধুমাত্র আরব কিংবা আলজেরিয়ানদের বিরুদ্ধে ঘোষণা করেনি। বরং সমগ্র মুলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে তারা এই যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এই ইসলাম সুদানিদেরকেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাগ্রত করেছিল। ইসলামী শক্তিতে বলিয়ান হয়ে তারা মেহদি কাবিরের নেতৃত্বে প্রথমে তারা উত্তরের অংশকে উদ্ধার করে এবং পরে দক্ষিনের অংশকে উদ্ধার করে। আমরা যখন মেহদি কাবিরের বক্তব্যসমূহ এবং উসমান ডিউক ও অন্যান্যদের চিঠিপত্র সমুহকে বিশ্লেষণ করি তখন এটাই দেখতে পাই। বারাকা এবং ত্রাবলুসে যে ইতালিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছিল এর মুলেও ছিল ইসলাম। সানুসি যাবিয়াতে (তরিকতের নাম) বেড়ে উঠা মহাবিপ্লবী উমার মুখতারের জিহাদের কারনও ছিল ইসলাম। এই ইসলামই চেতনায় উমার মুখতারকে মহাবীরে পরিনত করেছে। মেরাকেশে যে মহাবিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল এর পিছনেও বড় শক্তি যুগিয়েছে ইসলাম। ১৯৩১ সালে ফরাসীগণ সেখানে বসবাসরত আরবদেরকে শরীয়ত থেকে দূরে সরিয়ে মূর্তিপুজার দিকে ধাবিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেখানের মুসলিমগণ তাঁদের এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। যখন ইসলামের হাতে কোন বৈষয়িক শক্তি সামর্থ্য ছিল না ইসলাম তখনও তার সংগ্রামকে দুর্বার গতিতে অব্যাহত রেখেছে। কেননা ইসলামের শক্তি অস্রে নয়, ইসলামের শক্তি জনবলে নয় বরং ইসলামের শক্তি তাঁদের নিজের কাছেই নিহিত, ইসলাম মানেই শক্তি, তার চরিত্রে রয়েছে সবচেয়ে বড় শক্তি সম্ভার। ইসলাম ব্যাপক ও পরিপূর্ণ হওয়ায় এবং মানুষের ফিতরাতের সাথে সঙ্গতি পূর্ণ হওয়ায় এবং সকল প্রশ্নের জবাব দানে সক্ষম হওয়ার কারণে এতে নিহিত রয়েছে এক প্রবল শক্তি। ইসলাম, মানুষকে মানুষের গোলামী থেকে মুক্ত করে সকল মানুষকে এক আল্লাহর গোলাম বানাতে চায়। ইসলাম সকল মানুষকে কেবলমাত্র এক আল্লাহর আনুগত্যের দিকে আহ্বান জানায় এবং দুনিয়ার সকল শক্তিকে অস্বীকার করে কেবল মাত্র তার দিকে রুজু হওয়ারই দাওয়াত প্রদান করে। জালিম শাসকের নিকট আত্মসমর্পণে নয় বরং জালিমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার মধ্যেই সকল শক্তি নিহিত। জালিমের জুলুম যত বেশী তীব্র থেকে তীব্রতর হয় মুমিনের হৃদয়েও তার জন্য তত বেশী ঘৃণার জন্ম নিয়ে জালিমের জুলুম থেকে মুক্তির জন্য তার সংগ্রাম তত বেশী তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। এই জন্য ইসলাম যতদিন পর্যন্ত এই আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক শক্তি অর্জন অব্যাহত রাখবে তত দিন পর্যন্ত ইসলাম পরাজিত হবে না। বিভিন্ন সময়ে ইসলাম বৈষয়িক দৃষ্টিকোন থেকে পরাজিত হলেও আধ্যাত্মিক দিক থেকে ইসলাম কোন দিন পরাজয় বরণ করেনি। ইসলামের এই বৈশিষ্টের কারণেই ইসলামের দুশমনরা তার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কেননা ইসলাম তাঁদের পথকে রোধ করে দেয়। তাঁদের শোষণমুলক ঔপনিবেশবাদকে ইসলাম যেমনিভাবে বাধা প্রদান করে তেমনি ভাবে তাঁদের জুলুম নির্যাতন এবং অবাধ্যতাকেও প্রতিহত করে। ইসলামের এই কালজয়ী বৈশিষ্টের কারণে এর শত্রুরা একে খারাপভাবে উপস্থাপন করার পাশাপাশি একে ধ্বংস করার জন্য গণহত্যা এবং নিপীড়নের পথকেও বেছে নেয়। ইয়াহুদিগণ এবং ক্রসেডাররা এই কালজয়ী সভ্যতা থেকে মুক্তির জন্য এবং এই অসমাপ্তিমূলক আদর্শিক যুদ্ধকে সমাপ্ত করার জন্য ইসলামকে তারা বিভিন্ন ভ্রান্ত চিন্তার বেড়াজালে আবদ্ধ করে একে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে চায়। ইসলামের বৈশিষ্ট সমূহের অন্য একটি বৈশিষ্ট হল, যারা ইসলামী দেশ সমুহকে নিজেদের শাসনের অধীনে নিতে চায়, সেই ইসলাম দুশমনরা ইসলামের বিরুদ্ধে চরম শত্রুতা পোষণ করে থাকে। আসলে যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য হল এটাই। তার আসল উদ্দেশ্য এই সকল বিষয়ের মধ্যেই লুকায়িত। কিন্তু এতকিছুর পরেও, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে ‘আগামীর দিন ইসলামের’ এই দ্বীনের জন্য যে রূপরেখা অঙ্কিত করা হয়েছে এবং সমগ্র মানুষের মুক্তির জন্য এর বাহিরে অন্য কোন বিধান না থাকার ফলে আমরা অত্যন্ত দৃঢতার সাথে বিশ্বাস করি যে, ‘আগামীর দিন এই দ্বীনের’। দুশমনরা চাহুক বা না চাহুক, এই পৃথিবীতে এমন অন্য কোন আদর্শ নেই যা তার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। ইসলাম পৃথিবীকে যেভাবে সজ্জিত করতে চায় অন্য কোন আদর্শ সে স্থান পূর্ণ করতে সক্ষম নয়। মানব রচিত আদর্শত নয়ই। এই বইয়ের শুরুতেও যেমনিভাবে বলেছি যে, সমগ্র মানবতা তাঁদের সেই কাঙ্ক্ষিত সমাজের জন্য আর খুব বেশী দিন অপেক্ষা করবে না। এই বাস্তবতাকে প্রমান করার জন্য আর খুব বেশী কথা বলার প্রয়োজন নেই। ইসলামের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা ও এর শিক্ষাকে বর্ণনা করেই এই বিষয়ের ইতি টানব। আশা করি এই উদাহরণটি শিক্ষা গ্রহনের দিক থেকে যথযথ একটি উদাহরণ। রাসুল (সঃ) যখন তার অন্তরঙ্গ বন্ধু আবু বকর (রাঃ) নিয়ে কোরাইশদের চোখকে ফাকি দিয়ে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতেছিলেন, তখন সুরাকা বিন নওফেল তাঁদেরকে ধরার জন্য পিছু পিছু অনুসরণ করে আসতেছিল। সুরাকা এই জন্যই এসেছিল যে, সে যদি আল্লাহর রাসুল (সঃ) সম্পর্কে খবর দিতে পারে অথবা কুরাইশদেরকে ধরিয়ে দিতে পারে তাহলে সে তাঁদের ওয়াদা অনুযায়ী অনেক বড় একটি পুরস্কার পাবে। কিন্তু সে যতই কাছা কাছি আগাচ্ছিল তার ঘোড়ার খুড় মাটিতে দেবে যাচ্ছিল। এই অবস্থা দেখে সূরা রাসুল (সঃ) এর কাছে ক্ষমা চাইল, সে মুক্তি পেলে পুনরায় সে রাসুলকে হত্যা করতে উদ্যত হল, এই অবস্থা দেখে রাসুল (সঃ) তাকে প্রশ্ন করলেন, يا سراقة. كيف بك وسوارى كسرى؟ হে সুরাকা! কিসরার কঙ্কন (সোনার চুড়ি) সম্পর্কে তোমার কি ধারনা? এই কথা বলে তিনি তাকে পারস্য সাম্রাজ্যের সম্রাটের কঙ্কনের ওয়াদা দেন। এমন নিরাপত্ত্বাহীন ভাবে শুধুমাত্র একজন সাথী নিয়ে গোপনে হিজরত কারী এমন এক ব্যক্তির মুখে এমন কথা শুনে সুরাকার মাথায় কি এসেছিল সেটা কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। কিন্তু বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সঃ) তার কাছে সে সত্য রয়েছে তার শক্তি সম্পর্কে এবং জাহিলরা সেই দিন তাঁদের যে বাতিল মতবাদ নিয়ে তাকে বাধা দিচ্ছিল সে সম্পর্কেও তিনি পূর্ণ অবহিত ছিলেন। তিনি এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে, তার কাছে যে সত্য রয়েছে এই সত্য একদিন সকল বাতিল মতবাদের উপর বিজয়ী হবেই হবে। তিনি এই ব্যাপারেও নিশ্চিত ছিলন যে, তার সাথে যে হক্ব রয়েছে তা খুব বেশী সময় এমন দুর্বল অবস্থায় থাকবে না এবং বাতিল আজ যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে মানুষকে শোষণ করছে এই বাতিলও বেশী টিকে থাকতে পারবেনা। আজকে যে অবস্থা রয়েছে তা অবশ্যই অবশ্যই পরিবর্তিত হবে। একটি পুরাতন গাছে যত সারই দেওয়া হোক না কেন তা নতুন করে বর্ধিত হতে পারে না। কেননা সে এতটাই জরাজীর্ণ
ইসলামী আন্দোলনে হীনমন্যতার সুযোগ নেই
ইসলামী আন্দোলন নিছক রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। নয় নিছক ক্ষমতার রাজনীতি। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় পাঠাবার আন্দোলনও নয় এটি বরং আল্লাহর দ্বীন বা ইসলামী আদর্শকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসাবে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল দিক ও বিভাগে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠাই ইসলামী আন্দোলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। ক্ষমতা লাভের পথ দীর্ঘ মনে হবার কারণে অথবা বিপদসংকুল ও বাধা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবার কারণে ইসলামী আদর্শ তথা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার কাজ আপাতত: বাদ দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্ষমতার রাজনীতির নিয়ামক শক্তিসমূহের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের কৌশল অবলম্বনের পথ বেছে নেয়ার যুক্তি বাস্তবে কতটা টেকসই হতে পারে গভীরভাবে তা তলিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে। অবশ্য ইসলামী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্টদের একটা পথ বন্ধ হলে দশটা পথ খোলার মত যোগ্যতা-দক্ষতা অবশ্যই থাকতে হবে। তবে বাস্তবে পথ বন্ধ হবার আগে কৃত্রিমভাবে নিজেদের পক্ষ থেকে পথ বন্ধ করে কোন কৌশল অবলম্বনের চিন্তা-ভাবনা হীনমন্যতারই পরিচয় বহন করে এতে কোন সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নেই।সম্প্রতি বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে চতুর্মুখী চক্রান্ত ষড়যন্ত্র চলছে। তথ্য সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস থেকে বিচারিক সন্ত্রাসের আয়োজন চলছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিন্তার ঐক্য, পারস্পরিক আস্থা সুদৃঢ় থাকা অপরিহার্য। তার চেয়েও বেশি অপরিহার্য হল আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুলের ভিত্তিতে প্রতিকূলতার মোকাবিলায় অসীম ধৈর্য ও ছাবেতে কদমীর সাথে ময়দানে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়ে অকুতোভয়ে টিকে থাকার, বরং সামনে অগ্রসর হবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।’ পক্ষান্তরে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিপক্ষের এ সময়ের কৌশল হয়ে থাকে নানা কাল্পনিক, তাত্ত্বিক বিভ্রান্তির গুজব ছড়িয়ে চিন্তার ঐক্যে ফাটল ধরানোর জন্যে তথ্য সন্ত্রাস জোরদার করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কখনও কোন ব্যক্তি বিশেষের অপরিনামদর্শী কথা বা কার্যক্রমকে এরা সূত্র বা তথ্য উপাত্ত হিসাবে ব্যবহার করে এ ধরনের সুযোগ নিয়ে থাকে।সম্প্রতি বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে মহল বিশেষের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রচারণা বেশ সুকৌশলে চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা কতিপয় ব্যক্তির একটি অপরিণামদর্শী ও অপরিপক্ব পদক্ষেপজনিত একটি বৈঠককে এবং পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধকে তথ্য উপাত্ত হিসাবে ব্যবহার করছে। যদিও তাদের সকল জল্পনা-কল্পনাকে ভুল প্রমাণ করে তাদের পরিকল্পিত প্রচারণার মুখে ছাই নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের যুবক ও ছাত্রকর্মী তথা নতুন প্রজন্মই রাজপথে শক্ত অবস্থান নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের উপর সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। অকুতোভয়ে জীবন দিতেও কুণ্ঠা বোধ করছে না এরপরও মহল বিশেষের পক্ষ থেকে ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে চিন্তার বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে অব্যাহতভাবে।ইসলামী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট নবীন ও প্রবীণ সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সামনে বর্তমানে মিসরের ইসলামী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের উপর যে গণহত্যা চালানো হচ্ছে তা থেকে দুটো বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়। এক, তথাকথিত দেশী-বিদেশী সোস্যাল এলিটদের সমর্থন পাওয়ার জন্যে বা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবার জন্যে দলের ইসলামী পরিচিতি বর্জন করেও কোন লাভ হয় না, দুই, ইসলামের সংগঠিত শক্তি হওয়াটাই মূল অপরাধ।মিসরের ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে তো স্বাধীনতা বিরোধিতার কোন অভিযোগ আনার সুযোগ নেই। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বরং তাদেরই ছিল সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা। তারপরও তাদের দেশের প্রথমবারের মত গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে কেন ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।ইতিপূর্বে ১৯৯১ সনে আলজিরিয়ায় ইসলামী সালভেশন ফ্রন্ট প্রথমবারের মত নির্বাচনে ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতেই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলকে গণতন্ত্রের প্রবক্তা বিশ্ব মোড়লেরা অকুণ্ঠ সমর্থন দেয় নিছক ইসলাম ঠেকাবার জন্যে। তাদের বিরুদ্ধেও আলজিরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধিতার কোন অভিযোগের সুযোগ ছিল না। ইসলামের পক্ষের সংগঠিত শক্তি হওয়াই তাদের অপরাধ। অতএব বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের অবস্থান যে নিছক ইসলামী আদর্শের পক্ষের শক্তির ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি রোধ করার জন্যেই এতে কোন বিবেকবান ব্যক্তির মনেই সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ থাকতে পারে না। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করে মুসলিম ব্রাদারহুড তার নাম পরিচয় পালটিয়ে অন্য নামে ইসলামী পরিচিতি বাদ দিয়ে সংসদ ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাফল্য অর্জন করেছে, বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের কবে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আসলে কি মুসলিম ব্রাদারহুড তাদের নাম পরিবর্তন করেছে নাকি নির্বাচনী কৌশল হিসেবে একটা ফ্রন্ট করেছে। ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ থাকা অবস্থায় এর আগেও তারা ওয়াকদ পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এবারেও তাদের একই কৌশল আমরা দেখতে পাই একটু ভিন্ন আংগিকে। কিন্তু আজকের পরিস্থিতির মোকাবিলা তাদের করতে হচ্ছে মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ থেকেই। ভিন্ন নামে নির্বাচনের পরও তাদের ক্ষমতায় টিকতে দেয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্বে তাদের সংগঠনের সুনামেই ইনশাআল্লাহ আগামীতে মিসরে একই সাথে ইসলাম ও গণতন্ত্রের বিজয় হবে একটি সফল ও ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। সম্প্রতি একটি পত্রিকায় জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে চিন্তার বিভ্রান্তি ছড়ানোর কৌশল হিসেবে একটা গোপন বৈঠক ও একই প্রবন্ধকে ব্যবহার করা হয়েছে। উক্ত প্রবন্ধে নাকি এও বলা হয়েছে যে, ভারতের জামায়াতে ইসলামী তাদের অতীতের ভুল শুধরিয়ে দলের নাম পরিবর্তন করে একটা প্লাটফরম করেছে যাতে নেতৃত্বের পর্যায়ে একজন হিন্দু, একজন খৃস্টানও আছে। আসলে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ তার নাম পরিবর্তন করেনি। তারা অতীতে নির্বাচনে কোন ভূমিকাই রাখতো না। ভোটও দিত না। তারা মূলত: একটা “সামাজিক, সাংস্কৃতিক ধর্র্মীয়” প্রতিষ্ঠান হিসাবেই কাজ করে আসছিল। মুসলিম পার্সনাল ল’-এর সংরক্ষণের ব্যাপারে তারা সকল ইসলামী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলে কাজ করছেন।
- দাওয়াত মানবসমাজের কাছে পৌঁছে দেয়া# আমর বিল মারুফ ও নেহি আনিল মুনকারের বাস্তবায়নের জন্য# কুপ্রবৃত্তি দমন ও সুপ্রবৃত্তি লালনের জন্য
- শপথ কেন নিয়েছি# আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য# নফসকে নফসে মুতমাইন্না করার লক্ষ্যে# জাহিলিয়াতের মৃত্যুর হাত থে
শপথবদ্ধ জিন্দেগির বৈশিষ্ট্য
# ঈমান ও আকিদার জিন্দেগি
# ইবাদত বন্দেগির জিন্দেগি
# তাকওয়ার জিন্দেগি
# সাংস্কৃতিক জিন্দেগি
শপথের আলোকে আমাদের জীবন
- ভূমিকা : বাইয়াত বা শপথ ইসলামী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ইসলামী আন্দোলনের সফলতার জন্য বাইয়াতের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বাইয়াতবিহীন মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু। বাইয়াত মানুষের জীবনকে সুন্দর, জ্ঞানগত পরিপূর্ণতা, মানুষের কল্যাণকামী ও উন্নত আমলের ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। রাসূল (সা)-এর কাছ থেকে সাহাবীগণ বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বাইয়াত নিয়েছেন। ১) বাইয়াতে রিদওয়ান ২) আকাবার শপথ ৩) হুদায়বিয়ার শপথ ও ৪) মক্কা বিজয়।বাইয়াত বা শপথের অর্থ : শপথ এটি বাংলা শব্দ যার অর্থ চুক্তি, অঙ্গীকার, সঙ্কল্প, ক্রয়-বিক্রয় করা, আদান-প্রদান, প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, ঐকান্তিক সাধনা। আরবিতে বাইয়াত বলা হয়। ইংরেজিতে বলা হয় To sell, To make a contract, To offer for sell etc. Agreement, Arrangement, Business, Deal, Contact, Commercial Transaction, Bargain, Sale, Purchase etc.
- পারিভাষিক অর্থে- চুক্তি, অঙ্গীকার, ব্যবসা, সম্পর্ক, যোগাযোগ, বাণিজ্যিক লেনদেন, আলোচনা-পর্যালোচনা করা, বিক্রয়, ক্রয় ইত্যাদি। আল্লাহর জমিনে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠনের পদ্ধতি অনুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার নাম শপথ বা বাইয়াত।সাথী : যারা বা যিনি নিজের সুখ এবং দুঃখে সর্বাবস্থায় আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে একসাথে থাকেন এবং যেকোনো পরিস্থিতিতেই তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তাকেই সাথী বলা হয়ে থাকে। আল্লাহর রাসূলের (সা) সঙ্গী-সাথীদেরকে সাহাবী বলা হয়। সংগঠনের সঙ্গী ও সহচরকে সাথী বলা হয়।৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোন শিক্ষার্থী সংগঠনের লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্যের সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন, এ সংগঠনের কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতির সাথে সচেতনভাবে একমত হন, ইসলামের প্রাথমিক দায়িত্বসমূহ পালন করেন এবং সংগঠনের সামগ্রিক তৎপরতায় পূর্ণভাবে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতি দেন, তাহলে তিনি এ সংগঠনের সাথী হতে পারেন।কুরআনে বাইয়াত শব্দের ব্যবহার :বেচা-কেনা/লেনদেন অর্থে-“হে ঈমান-দারগণ! জুমার দিনে যখন তোমাদের নামাজের জন্য ডাকা হবে তখন তোমরা (নামাজের মাধ্যমে) আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাও। আর কেনাবেচা ছেড়ে দাও, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা তা উপলব্ধি করতে পার।” (সূরা জুমা : ৯, সূরা আন নূর : ৩৭)২. চুক্তি অর্থে- জান্নাতের বিনিময়ে জান-মাল উৎসর্গের চুক্তি। (সূরা আত তাওবা : ১১১)
৩. সার্বভৌম শক্তির আনুগত্যের শপথ। (সূরা আল ফাতাহ : ১০)
৪. বাইয়াত অর্থ আল্লাহর মর্জিমত চলা। (সূরা আল মোমতাহিনা : ১২)
৫. মৃত্যুর শপথ
# হুদায়বিয়ায় হযরত ওসমান (রা)-এর মৃত্যুর সংবাদে মুসলমানদের অবস্থা ছিল এই, মরে যাবো তবু ওসমান হত্যার বদলা নেবো।
# মুতার যুদ্ধে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন যায়েদ ইবনে হারেসা, জাফর ইবনে আবি তালিব, আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা।
# জাফর ইবনে আবি তালিব রোমান বাহিনীর অভ্যন্তর তছনছ করে দেন, ডান এবং বাম হতে দ্বিখন্ডিত, বাহু, বুক এবং মুখ দিয়ে পতাকা উত্তোলন, সারা দেহে নব্বইটি ক্ষত চিহ্ন।
৬. জিহাদের ময়দানে অটল ও অবিচল থাকা; “হযরত উমর (রা)কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কোন বিষয়ের ওপর আপনারা সেদিন বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন? তিনি বললেন সবরের ওপর বাইয়াত গ্রহণ করেছিলাম। আমরা শপথ নিয়েছিলাম শত্রুপক্ষ যতই শক্তিশালী হউক না কেন আমরা জিহাদের ময়দান ত্যাগ করে চলে যাবো না।” (বুখারী)
- শপথ গ্রহণের অর্থ :# নিজেদের সামগ্রিক মানোন্নয়ন।# নিজেদের পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিবেদিত করা।# সকল কাজ সাংগঠনিক দৃষ্টিভঙ্গিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে।
# সংগঠনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের জনশক্তি, সিদ্ধান্তকারাী ও পরিচালনাকারী।
বাইয়াতের শরয়ি মর্যাদা/গুরুত্ব
বাইয়াতের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন সূরাতে বর্ণনা করেন- সূরা ফাতাহ- ১০, ১৮, সূরা মুতমায়িন্নাহ- ১২, সূরা সফ-১১, সূরা জুময়া ৯, সূরা নূর- ৩৪
# আল্লাহর সন্তুষ্টির পয়গাম (সূরা আল ফাতাহ- ১৮)
# ইসলামী সংগঠনের নিকট বাইয়াতের মাধ্যমেই আল্লাহর নিকট বাইয়াতের দাবি পূরণ করে।
# দ্বীনের জন্য জানবাজি রাখার শপথ ঈমানের দাবি। (সূরা আত তাওবা : ১১১)
# আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের একমাত্র উপায়। “হে রাসূল, আপনি বলুন তারা যদি আল্লাহকে ভালোবাসে এবং তার আনুগত্য করে তাহলে আমিও তাদেরকে ভালোবাসব।” (আল কুরআন)
# বাইয়াত ইসলামী আন্দোলনের প্রেরণা ১) গতিশীলতা সৃষ্টি করে, ২) জানবাজ কর্মী তৈরি করে
# দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য
# নফসের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার জন্য
বাইয়াত না করার পরিণতি
# বাইয়াতবিহীন মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু
# জিহাদের বাইয়াত থেকে বিরত থাকা মুনাফেকির লক্ষণ
# আনুগত্যের শপথবিহীন মৃত্যু জাহেলি মৃত্যু। “যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে দূরে থাকল এবং জামায়াত থেকে বের হয়ে গেল সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল।”বাইয়াতের অন্তরায় :১. নফসঃ (সূরা আল ইমরান : ১৪) ২. আত্মীয়-স্বজন (সূরা আত তাওবা : ২৪) ৩. দুনিয়ার মোহ (সূরা আত তাওবা : ৩৮) কয়েকজন সাহাবী তাবুক যুদ্ধে না যেয়ে এই কাজ করেছিলেন- কা’ব বিন মালিক, মুরারা বিন রাবিয়া, হেলাল বিন উমাইয়া।
বাইয়াত কার কাছে নিতে হবে
আল্লাহর কাছে, ২. রাসূলের কাছে, ৩. উলুল আমরের কাছে (সূরা ফাতাহ : ১০)
বাইয়াতের কাঠামো বা পদ্ধতি
# আসল বাইয়াত আল্লাহর কাছে
# আল্লাহকে দেখা যায় না তারপরও আল্লাহর কাছেই বাইয়াত নিতে হয়
# আল্লাহ তায়ালা এই বাইয়াত নেয়ার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন
# নবী-রাসূল হেদায়েত পৌঁছিয়েছেন- যারা হেদায়েত গ্রহণ করেছেন তারা নবী-রাসূলদের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বাইয়াত নিয়েছেন
# রাসূল (সা) চলে যাওয়ার পর চার খলিফা বাইয়াত দিয়েছেন
# রিসালাত, খিলাফত শেষ কিন্তু বাইয়াতের ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই, দ্বিমত শুধুমাত্র পদ্ধতিগত
বাইয়াতের পদ্ধতি ২টি :
ক) ব্যক্তির কাছে, খ) সংগঠনের কাছে।
ব্যক্তির হাতে বাইয়াত
# যিনি অধিক জানেন ও মানেন- এমন ব্যক্তির কাছে বাইয়াত জায়েজ
# বাইয়াত- সবকিছু সোপর্দ করে দেয়া
ব্যক্তির হাতে বাইয়াত ঝুঁকিপূর্ণ।
সংগঠনের কাছে বাইয়াত
# এমন দল যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে চায়
# কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক আদর্শ
# পরামর্শভিত্তিক দল
# ভুল হলে সংশোধনের পদ্ধতি আছে
# এটি তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ।
আমাদের বাইয়াত
# সংগঠনের কাছে- ব্যক্তির পরিবর্তনে আনুগত্যের পরিবর্তন হবে না
# চুড়ান্ত বাইয়াত- সদস্য শপথ
# সাথী সদস্য হওয়ার পূর্বশর্ত
# স্তরবিন্যাস রাসূলের আমলে ছিল না
# এটি আধুনিক পদ্ধতি।
বাইয়াত গ্রহণকারী সংগঠনের বৈশিষ্ট্য
# পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের দাওয়াত।
# পরিপূর্ণ মুসলমান হিসাবে জীবন যাপনের অনুশীলন
# ইকামতে দ্বীনের দায়িত্ব পালন
# সুসংগঠিত উপায়ে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কর্মসূচি বাস্তবায়ন- “হযরত জারির (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি কাজের নির্দেশ দিচ্ছি যা আমার রব করতে বলেছেন : সংঘবদ্ধ থাকতে, শুনতে, আনুগত্য করতে, হিজরত করতে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করতে।”
বাইয়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবির - # Cadre System :# জাগতিক আন্দোলন লেনিন থেকে# ইসলামী আন্দোলন ইমাম ইবনে তাইমিয়া থেকে# সাংগঠনিক কাঠামো বিজ্ঞানভিত্তিক করা থেকে
# উদাহরণ : মাওলানা মওদূদী ও হাসানুল বান্না
# রাসূলের যুগে আহলে সুফ্ফা ও আশারায়ে মোবাশ্শারা
# আমাদের সংগঠনে শপথের জনশক্তিরাই ময়দানের কার্যকরী শক্তি
# সংবিধান স্বীকৃত জনশক্তি
# সংগঠনের আমানতদার
# সংগঠনের পরিচয় তাদের ওপর নির্ভর করে।
- Cadre পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা# যোগ্যতার মূল্যায়নের জন্য# দায়িত্ব বিন্যাসের জন্য# সংগঠনের শৃঙ্খলা বিধানের জন্য
# প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য।
বাইয়াতের উদ্দেশ্য
# ইসলামী আন্দোলনের
- কে বাঁচার জন্য
- শপথের মানদন্ড :# আল্লাহ তায়ালা যে মান পছন্দ করেন# আল কুরআন যে মান তৈরি করতে চায়# নবী করীম (সা) সাহাবীদেরকে যে মানে তৈরি করেছিলেন।
- শপথের দাবি# দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া# জিহাদের ময়দানে অটল ও অবিচল থাকা “হযরত উমর (রা)কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কোন বিষয়ের ওপর আপনারা সেদিন বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন? তিনি বললেন সবরের ওপর বাইয়াত গ্রহণ করেছিলাম। আমরা শপথ নিয়েছিলাম শত্রুপক্ষ যতই শক্তিশালী হউক না কেন আমরা জিহাদের ময়দান ত্যাগ করে চলে যাবো না।” (বুখারী)# আন্দোলন সংগ্রামে আপত্তি পেশ না করা
# নিজেকে ইসলামের জীবন্ত পথিক হিসেবে উপস্থাপন করা
# চূড়ান্ত শপথের অঙ্গীকার
# অধস্তন জনশক্তির তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করা
- শপথের বাস্তব প্রতিফলন# আনুগত্য প্রদর্শন করা# ত্যাগ ও কোরবানির মানসিকতা# সাহসিকতা
# ধৈর্য, আন্তরিকতা বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা দিয়ে ময়দান মোকাবেলা করা।
# সর্বোৎকৃষ্ট জান্নাতি পরিবেশ বজায় রাখা
# উপশাখার প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা।
# আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা।
# আখেরাতের সফলতার জন্য
# জান এবং মালের কোরবানির জন্য
# উন্নত নৈতিকতার কাক্সিক্ষত মানে পৌঁছানোর জন্য।
- শপথের আলোকে জীবন পরিচালনার জন্য# আন্তরিক সিদ্ধান্ত (সূরা আলে ইমরান : ১৩৩)# পরিকল্পনা গ্রহণ (বার্ষিক, ষান্মাসিক, ত্রৈমাসিক, মাসিক, সাপ্তাহিক, দৈনিক)# ইলমি প্রস্তুতি
# পরিচ্ছন্ন আমল
# খুশু ও খুজুর সাথে নামাজ আদায়
# নামাজ কাজা না করা
# জামায়াতের সাথে নামাজ আদায়
# সাহাবাদের নামাজ
# মোয়ামেলাত
# লেনদেনে পরিচ্ছন্নতা
# ওয়াদা পালন
# আমানতদারিতা
# পর্দা
- দ্বিধাহীন আনুগত্য# যে কোন সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার মানসিকতা#সংগঠনের জন্য যেকোন ত্যাগের মানুষিকতা# সংগঠন বুঝা
# রিপোর্টিং পদ্ধতি
# ইতিহাস-ঐতিহ্য
# গঠনতন্ত্র ও সঙগঠন পদ্ধতি
# শাখার কাজ
# সকল খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে ভালো কাজে ব্যস্ত রাখা
# তাওবা, এস্তেগফার এবং আত্মসমালোচনা করা
# আত্মগঠন ও মানোন্নয়নের অব্যাহত প্রচেষ্টা চালানো
# রিপোর্ট বাদ না দেয়া
# সিলেবাসের গুরুত্বপূর্ণ বই নোট
# দায়িত্বশীলদের সাথে যোগাযোগ
# ভারসাম্যপূর্ণ জীবনগঠনের চেষ্টা চালানো
# লেখাপড়া ও সাংগঠনিক কাজ
# মনীষীদের জীবনী পড়ে এ কাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা
# নফল ইবাদত সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হওয়া
# জিহাদের ময়দানে নিজেকে উৎসর্গ করা
# সার্বক্ষণিক জিকির, দোয়া এবং আল্লাহর সাহায্য চাওয়া।
#জামায়াতের ৩ দফা দাওয়াত, ৪ দফা কর্মসূচী, ৩ দফা স্হ।য়ী কর্মনীতি,গঠনতন্ত্র ও সঙগঠন পদ্ধতি ও আদর্শ ও লক্ষ্যের সাথে সম্পূর্ণরূপে একমত হওয়া
- # জ্ঞান অর্জন# দাওয়াত দান সম্পর্কে# জামায়াতের প্রচেষ্টায় সম্ভাব্য সকল প্রকার সহযোগিতা# সময়কে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার
# সময়ের কাজ সময়ে করা
# নিখুঁতভাবে মনোযোগ সহকারে কাজ করা
# আলসেমি ও ঘুম ঘুম ভাব পরিহার করা
# সংগঠনের ও জনশক্তির দুর্বলতা দূর করতে চিকিৎসকের ভূমিকা পালন
# সাংগঠনিক শৃঙ্খলা সংরক্ষণ
# হীনমন্যতা পরিহার- শহীদ আলাউদ্দিন
# আনুগত্য
# কঠিন কাজ নিজে নেয়া
# মৌলিক বিধিবিধানসমূহ যথাযথভাবে পালন
# নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত
# পর্দা
# গোঁজামিলের আশ্রয় না নেয়া/ মিথ্যা
# নকল
# গান-বাজনা, অশ্লীলতা, বান্ধবী, নোট আদান প্রদান
# লজিং, টিভি, নাটক
# অর্পিত আমানত যথাযথভাবে রক্ষা
# আয়-ব্যয়ের হিসাব
# সংগঠনের সম্পদ
# সংগঠনের জনশক্তি, শুভাকাক্সক্ষী
# সঠিক পরিসংখ্যান
# সংগঠনের কোন খবর বাইরে বলা
# বৈঠকের খবর বাইরে বলা
# নফল এবাদত করা
# রাত্রি জাগরণ, নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত
# মুজাহিদের পরিচয় ‘রাতে জায়নামাজে, দিনের বেলায় ঘোড়ায় সওয়ার’
# রাসূল দাঁড়িয়ে থেকে থেকে পা ফুলিয়ে ফেলতেন। সাহাবীদের প্রশ্নের উত্তরে বলতেন, আমি কি আল্লাহর শুকরগুজার বান্দা হবো না।
# প্রতিটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয়া
# ভ্রাতৃত্ববোধ সংরক্ষণ
# শাহাদাতের তামান্না
# সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষা
# আল্লাহর সাহায্যআমাদের জীবন : ব্যবহারিক জীবন হলো এমন মূল্যবোধ যে অনুযায়ী মানুষের আচরণ হওয়া প্রয়োজন। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আবদুল ওয়াদুদ মাকরূম বলেছেন, “ব্যবহারিক জীবন হচ্ছে আচরণের রীতিনীতির সমষ্টি, যা মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রিত ও সংহত করে এবং যাকে চিন্তা ও আচরণের ক্ষেত্রে মানুষের অনুসরণ করা উচিত।” রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, “তোমরা সততা অবলম্বন কর, কেননা সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায় আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়। একজন লোক সর্বদা সত্য বলতে থাকে এবং সত্যবাদিতার প্রতি অনুরাগী হয়, ফলে আল্লাহর নিকট সে সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।” (মুসলিম)
আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিক
# ব্যক্তিগত জীবন
# সাংগঠনিক জীবন
# পারিবারিক জীবন
# সামাজিক জীবন
ব্যক্তিগত জীবন
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা-হাদিস “আত্তুহরো সাতরুল ঈমান”শৃঙ্খলাবদ্ধতা : সকল কিছু পরিপাটি সাজানো গুছানো থাকবে। খাওয়া, ঘুম, লেখাপড়া, বই-পুস্তক, কাপড় চোপড় রাখা টেবিল চেয়ার ইত্যাদির মধ্যে যেন কোন বিশৃঙ্খলা না থাকে।
ক্রোধ দমন করা : হযরত আলী (রা) এর ঘটনা।
ত্যাগী মনোভাব : হযরত আবু তালহা (রা) এর ঘটনা। মুতার যুদ্ধ প্রথম থেকে ষষ্ঠ ব্যক্তি পর্যন্ত নিজে পানি পান না করে অপরের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে সকলেই জীবন দিলেন। (সূরা আলে ইমরান ৯২ ও ২০০)
সবর ও তাওয়াক্কুল : সবরের কয়েকটি অর্থ : ইমরান ২০০। সূরা আসর তাওয়াক্কুল- হিজরতের সময় গুহার ভেতর রাসূল (সা)-এর অবস্থান।- ইবরাহিম (আ)কে আগুনে ফেলার পর যখন ফেরেস্তা এসে সাহায্য করতে চেয়েছিল তখন ফেরেস্তার ওপর ভরসা না করে আল্লাহর ওপর ভরসা করেছিলেন।- ফেরাউন যখন মূসা (আ)কে দৌড়িয়ে নিয়ে সমুদ্রের ধার পর্যন্ত যাওয়ার পর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করায় তার হাতের লাঠির ইশারায় সমুদ্রে ১২টি গোত্রের জন্য ১২টি রাস্তা হয়ে যায়।
# জ্ঞান পিপাসা
# দৃষ্টিশক্তির হেফাজত
# বাকশক্তি বা জবানের হেফাজত
# রিয়া বা অহঙ্কারমুক্ত মন : (সূরা বনি ইসরাইল – ৩৭, লোকমান- ৩)
# আড়ম্বরহীন জীবন : (সূরা লোকমান – ১৯)
# প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল গুনাহ থেকে রক্ষা (সূরা নাজম-৩২, আন আম-১৫১)
# আত্মসমালোচনা
# পরিকল্পিত জীবন
# কথা ও কাজের মিল
সাংগঠনিক জীবন
- সহযোগীদের সাথে ব্যবহার : তিনটি নেক কাজে পাপ কাজ মার্জনা হয় : ক) সরল ব্যবহার, খ) প্রফুল্ল মন গ) মিষ্টি ভাষণসহনশীলতা ও উদারতা : (সূরা ইমরান ১৫৯, আরাফ ১৯৯)। একটি ঘটনা-একজন লোক মসজিদে নববীতে প্রস্রাব করে চলে যাচ্ছিল।যাচাই না করে শুনা কথার ওপর ধারণা না করা : বনি ইসরাইল- ৩৬ জাকাত আদায়ের ঘটনা-পারিবারিক জীবন
# মাতা-পিতার প্রতি ব্যবহার
# ভাইবোনদের প্রতি ব্যবহার
# আত্মীয়স্বজনদের প্রতি ব্যবহার
সামাজিক জীবন
# মন্দের মোকাবেলায় উত্তম আচরণ : ঈমানদারদের জন্য প্রযোজ্য নয়। হামিম আস সাজদা : ৩৪-৩৫
# প্রতিবেশীর সাথে ব্যবহার।
# চাকর-বাকরের প্রতি ব্যবহার
#বিরোধীদের সাথে ব্যবহার
অন্যান্যক) শিক্ষক-কর্মচারী, খ) রোগীদের প্রতি, গ) রিকশাওয়ালা, ঘ) ফকির বা সাহায্যপ্রার্থী, ঙ) পশুপক্ষি, চ) গাছপালা
লিও টলস্টয় ও মার্কিন তরুণীর দৃষ্টিতে : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক লিও টলস্টয় যখন নিঃসঙ্গ অবস্থায় রাস্তার ধারে মৃত অবস্থায় পড়ে ছিলেন, সে সময় তার কোটের পকেট থেকে তার নিত্য সময়ের সঙ্গী যে বইটি পাওয়া যায়, সেটি ছিল আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী লিখিত ‘দ্য সেয়িংস অব প্রফেট মুহাম্মদ (সা)। বাংলায় যার শিরোনাম ‘মহানবী (সা) বাণী’ বইটির একটি হাদিছে উল্লেখ রয়েছে, রাসূল (সা) বলেছেন, ‘তুমি নিজের জন্য যেটা ভালো মনে করবে, অন্যের জন্যও তা ভাববে। আর যেটা নিজের জন্য মন্দ মনে করবে, অন্যের জন্যও তাই মনে করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রফেসর আবদুন নূর ‘আয যিকর ওয়াল ফালাহ গ্রন্থে একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন, ‘এক মার্কিন তরুণী দীর্ঘ দু’বছর মেলামেশার পর, তার বাংলাদেশী পুরুষ বন্ধুকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। বন্ধুটি বলে যে, সে রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান। তাই তাকে বিয়ে করতে মেয়েটিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলিম হতে হবে। মার্কিন তরুণীটি ইসলাম ধর্ম কী, তা বুঝতে চাইলো। ছেলেটি তাকে আল্লামা আবদুল্লাহ ইউসুফ আলী কর্তৃক ইংরেজি অনূদিত পবিত্র কুরআন শরিফের একটি কপি দিয়ে বললো যে, এটি পড়লে ইসলাম সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারবে। দুই মাস কুরআন অধ্যয়নের পর মার্কিন তরুণীটি এসে জানালো, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি ইসলাম গ্রহণ করবো। ইসলামের সৌন্দর্য ও সমন্বিত নীতিমালা আমাকে আকর্ষণ করছে। এ ব্যাপারে আমার মা-বাবার আপত্তি নেই। কিন্তু তোমাকে আর বিয়ে করতে পারব না। কারণ তোমার আচার আচরণ লক্ষ্য করেছি সম্পূর্ণ কুরআনপরিপন্থী।
সুতরাং আগামী দিনে ইসলামী বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করতে হলে বাইয়াতবদ্ধ জীবনের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীর সকল প্রাণীর ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কাজেই আখলাকে হাসানার উপাদানগুলো অর্জনের মাধ্যমে একজন মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্বকে ধরে রাখতে পারে।
লেখক : ড.মোবারক হোসেন
আল্লাহর পরিচয়
আল-কুরআন ও আল-হাদীসে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের সত্তা, গুণাবলী, কুদরাত ও অধিকার সম্পর্কে অনেক কথা ছড়িয়ে আছে। সেই কথাগুলোর নিরিখে অতি সংক্ষেপে মহান আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরার উদ্দেশ্যে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
আল্লাহর পরিচয়
আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়।
আল্লাহর আব্বা নেই, আম্মা নেই।
আল্লাহর স্ত্রী নেই, পুত্র নেই, কন্যা নেই।
আল্লাহ তখনো ছিলেন যখন আর কেউ ছিলো না, আর কিছু ছিলো না।।
আল্লাহ তখনো থাকবেন যখন আর কেউ থাকবে না, আর কিছু থাকবে না।
অর্থাৎ আল্লাহ চিরকাল ছিলেন, চিরকাল আছেন, চিরকাল থাকবেন।
আল্লাহ ধ্বংসের ঊর্ধ্বে।
আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল।
আল্লাহর ক্ষুধা নেই, পিপাসা নেই।
আল্লাহ কিছু খান না।
আল্লাহ কিছু পান করেন না।
আল্লাহর তন্দ্রা নেই, নিদ্রা নেই।
আল্লাহ অন্যমনস্ক হন না।
আল্লাহ কিছু ভুলে যান না।
আল্লাহকে কোন সৃষ্টি দেখতে পায় না।
কিন্তু সকল কিছু তাঁর দৃষ্টির অধীন।
আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে কোন কিছুই থাকা সম্ভব নয়।
আল্লাহ একই সময়ে মহাবিশ্বের সকল প্রাণী, বস্তু ও শক্তি (energy) দেখতে পান।
আল্লাহ সব কিছুই শুনেন।
মহাবিশ্বের সর্বত্র উচ্চারিত প্রতিটি কথা ও উত্থিত প্রতিটি আওয়াজ তিনি একই সময়ে শুনতে পান।
আল্লাহ একচ্ছত্র সম্রাট।
মহাবিশ্ব আল্লাহর সাম্রাজ্য।
এই সাম্রাজ্যের মালিকানায় ও পরিচালনায় তাঁর কোন অংশীদার নেই।
আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন।
প্রতিটি প্রাণী, বস্তু ও শক্তি (বহবৎমু) অস্তিত্ব লাভের জন্য ও টিকে থাকার জন্য তাঁর মুখাপেক্ষী।
আল্লাহ সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
মহাবিশ্বের সর্বত্র তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত।
আল্লাহ মহাজ্ঞানী।
আল্লাহর জ্ঞান সীমাহীন।
আল্লাহ সর্ব শক্তিমান।
আল্লাহর শক্তি সীমাহীন।
আল্লাহ সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা।
আল্লাহর সৃষ্টি-ক্ষমতার শেষ নেই।
আল্লাহ জীবন দেন।
আল্লাহ মৃত্যু দেন।
আল্লাহ জীবিত থেকে মৃতকে এবং মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন।
আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো ওপর বিপদ-মুছীবাত আসতে পারে না।
আল্লাহর ক্ষমতা অ-প্রতিরোধ্য।
আল্লাহ যদি কারো কল্যাণ করতে চান তাতে বাধ সাধবার শক্তি কারো নেই।
আল্লাহ যদি কারো অ-কল্যাণ করতে চান তা প্রতিরোধ করার শক্তি কারো নেই।
আল্লাহ সর্ব-বিজয়ী, মহা পরাক্রমশালী।
আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী।
আল্লাহ মহাবিজ্ঞ।
আল্লাহ পরম দয়ালু, করুণাময়।
আল্লাহ শাস্তি দাতাও।
আল্লাহর পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন।
আল্লাহ সার্বভৌম সত্তা।
আদেশ-নিষেধের সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত ক্ষমতা একমাত্র তাঁর।
আল্লাহর বিধানই চূড়ান্ত আইন।
আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন।
আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করতে পারেন, করেন।
আল্লাহ কোন কিছু সৃষ্টি করতে চাইলে বলেন “হও”, আর অমনি তা হয়ে যায়।
আল্লাহ শূন্য থেকে বা অনস্তিত্ব থেকে সৃষ্টি করতে পারেন।
আল্লাহ যা করেন তার জন্য কারো কাছে জওয়াবদিহি করতে হয় না।
অন্য সবাইকে তাঁর নিকট জওয়াবদিহি করতে হয়।
আল্লাহ সকল মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ সকল যৌগিক পদার্থ সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ মহাবিশ্বের প্রতিটি অণু-পরমাণুর স্রষ্টা।
তিনি শ্রেণী মতো পরমাণুগুলোকে সংযুক্ত কিংবা সংমিশ্রিত করে বিভিন্ন
বস্তুসত্তার অস্তিত্ব গড়ে তোলেন।
আল্লাহ প্রথমে আসমান ও পৃথিবীকে যুক্ত অবস্থায় সৃষ্টি করেন, পরে এইগুলোকে পৃথক করে দেন।
আল্লাহ সময়ের ছয়টি অধ্যায়ে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে আরশে সমাসীন হয়েছেন।
আল্লাহ মহাবিশ্বকে সাতটি স্তর বা অঞ্চলে বিন্যস্ত করেছেন।
আল্লাহর নির্দেশেই আসমান ও পৃথিবী সু-প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
আল্লাহ মহাকর্ষ বল (Gravitation) সৃষ্টি করে এর দ্বারা মহাবিশ্বের সকল কিছুকেই একটি ভারসাম্যপূর্ণ সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছেন।
আল্লাহ মহাবিশ্বের সকল কিছুর আকার, আয়তন ও গতিপথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
আল্লাহ প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করে প্রত্যেকটিকে তার করণীয় জানিয়ে দিয়েছেন।
আসমান ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর ফরমানের অধীন।
আল্লাহ সূর্য ও চাঁদকে এমন নিয়মের অধীন করে রেখেছেন যার ফলে পৃথিবীতে একের পর এক বিভিন্ন ঋতুর আবির্ভাব ঘটে, রাত দিনের আবর্তন ঘটে এবং মানুষ মাস ও বছরের হিসাব রাখতে পারে।
আল্লাহ আলো সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ আঁধার সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ ছায়া সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ পৃথিবী-পৃষ্ঠে পাহাড়-পর্বত গেড়ে দিয়েছেন যাতে পৃথিবী আপন পথে চলতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে হেলে দুলে না পড়ে।
আল্লাহ ভূ-পৃষ্ঠকে বাসোপযোগী ও আবাদযোগ্য বানিয়েছেন।
আল্লাহ পৃথিবীর চারদিকে বায়ুর একটি পুরু বেষ্টনী সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ ঘনীভূত অক্সিজেনময় ওজোন (ozone) স্তর সৃষ্টি করে তেজষ্ক্রিয় মহাজাগতিক রশ্মিকে ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছতে বাধাগ্রস্ত করেছেন।
আল্লাহ পৃথিবীকে মাটি সম্পদ, বন-সম্পদ, ঘাস-সম্পদ, উদ্ভিদ সম্পদ, লতা-গুল্ম সম্পদ, পানি সম্পদ, সামুদ্রিক উদ্ভিদ সম্পদ, মাছ সম্পদ, পাখি সম্পদ, পশু সম্পদ, তাপ-বিদ্যুৎ সম্পদ, খনিজ-সম্পদ ইত্যাদি সম্পদে ভরপুর করেছেন।
আল্লাহ মাটির গভীরে সোনা, রূপা, হীরা, লোহা, তামা, কয়লা, পেট্রোল, গ্যাস ইত্যাদি সম্পদ মওজুদ করে রেখেছেন।
আল্লাহ ভূ-পৃষ্ঠে গাছ-গাছালির খাদ্য হবার উপযোগী বহু জৈবিক উপাদান মওজুদ করে রেখেছেন।
আল্লাহ পৃথিবীর মাটিকে শস্য ফলানো, শাক-সবজি ফলানো, গাছ জন্মানো ও নানা প্রকারের গাছে নানা আকারের নানা রঙের নানা স্বাদের ফল ফলানোর উপযোগী বানিয়েছেন।
আল্লাহ পৃথিবীর বুকে নদ-নদী ও সাগর-মহাসাগর সৃষ্টি করে সেইগুলোকে পানির রিজার্ভারে পরিণত করেছেন।
আল্লাহ নদ-নদী ও সাগর-মহাসাগরকে অফুরন্ত মাছ সম্পদে পরিপূর্ণ করেছেন।
আল্লাহ সাগর-মহাসাগরের গভীরে বিচিত্র ধরনের প্রাণী, মণি-মুক্তা, সৌন্দর্য-শোভার অন্যান্য উপকরণ ও সামুদ্রিক উদ্ভিদ মওজুদ করে রেখেছেন।
আল্লাহ পানি সৃষ্টি করেছেন এবং এটিকে যমীনকে সিক্ত করা, প্রাণীর পিপাসা মেটানো ও দানা-বীজকে অংকুরিত করার গুণ দান করেছেন।
আল্লাহ আগুন সৃষ্টি করেছেন এবং এটিকে তাপ ও আলো বিতরণের গুণ দান করেছেন।
আল্লাহ বিদ্যুৎ শক্তি সৃষ্টি করেছেন এবং এটিকে বিভিন্ন যন্ত্র চালানো ও বালবের ভেতর সঞ্চালিত হয়ে আলো ছড়ানোর গুণ দান করেছেন।
আল্লাহ পানি থেকে বাষ্প, বাষ্প থেকে মেঘ ও মেঘ থেকে বৃষ্টি সৃষ্টি করেন।
আল্লাহর নির্দেশে বায়ু প্রবাহিত হয়, বায়ুতে ভর করে মেঘ দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে ও মেঘ থেকে বৃষ্টি নামে।
আল্লাহ খাদ্য দ্রব্যে মানুষের দেহ পুষ্ট করার গুণ দান করেছেন।
আল্লাহ মধুসহ বিভিন্ন দ্রব্যে রোগ নিরাময়ের গুণ দান করেছেন।
আল্লাহ নূর থেকে ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে তাঁর অবাধ্যতা করার ক্ষমতা দেননি।
ফেরেশতারা আল্লাহর বিশ্বস্ত অনুগত কর্মচারী।
আল্লাহ আগুন থেকে জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ জিনদেরকে তাঁর আনুগত্য করার কিংবা অবাধ্যতা করার ক্ষমতা দিয়েছেন।
আল্লাহ মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ মানুষদেরকে তাঁর আনুগত্য করার কিংবা অবাধ্যতা করার ক্ষমতা দিয়েছেন।
আল্লাহ জিন ও মানুষদেরকে তাঁর আনুগত্য করার পুরস্কার ও অবাধ্যতা করার শাস্তি সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ মানুষ, বিভিন্ন প্রাণী, উদ্ভিদ ও বিদ্যুৎ কণা ইত্যাদির জুড়ি সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ প্রথম মানুষ আদম (আ) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া (রা) থেকে মানুষের বংশধারা চালু করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে পুরুষ ও নারী রূপে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরম প্রশান্তি লাভ করতে পারে এবং সমাজ-সভ্যতা-সংস্কৃতির আসল দুর্গ পরিবার সংগঠন গড়ে তুলতে পারে।
আল্লাহ পুরুষকে দুর্ধর্ষতা, সাহসিকতা, ক্ষিপ্রতা ও কঠোরতার আধিক্য দান করেছেন।
আল্লাহ নারীকে নম্রতা, মায়া-মমতা ও সৌন্দর্যানুভূতির আধিক্য দান করেছেন।
আল্লাহ নির্দিষ্ট সংখ্যায় মানুষ ও নির্দিষ্ট পরিমাণে সম্পদ সৃষ্টি করে থাকেন।
আল্লাহ সকল মানুষ ও অন্যান্য সকল প্রাণীর রিয্কের ব্যবস্থা করে থাকেন।
আল্লাহ মানুষকে অভাবের আশংকায় সন্তান হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ মানুষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যা যা প্রয়োজন সবই সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ পৃথিবীর সম্পদ-সম্ভার মানুষের ভোগ-ব্যবহারের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহর সৃষ্ট নিয়ামাতগুলো গণনা করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
আল্লাহ কাউকে বেশি অর্থ-সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন।
আল্লাহ কাউকে কম অর্থ-সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন।
আল্লাহই মানুষের আকৃতি, গায়ের রঙ, ভাষা, কণ্ঠস্বর, চলনভংগি ইত্যাদির পার্থক্য সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ জীবকুলের মধ্যে মানুষকে সবচে’ বেশি জ্ঞান দান করেছেন। তবে জ্ঞানময় আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় এই জ্ঞান খুবই সামান্য।
আল্লাহ মানুষকে রূহ দান করেছেন।
আল্লাহ যদ্দিন রূহকে মানুষের মাঝে অবস্থান করতে দেন তদ্দিনই মানুষ জীবিত থাকে।
আল্লাহ মানুষকে মস্তিষ্ক দান করেছেন।
আল্লাহ এটিকে চিন্তা-ভাবনা করা, পঞ্চেন্দ্রিয়লব্ধ অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করা, বিভিন্ন বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরি করা ও বহু কিছু উদ্ভাবন করার যোগ্যতা দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে হৃদপিণ্ড দান করেছেন।
আল্লাহর নির্দেশে এটি ছন্দবদ্ধভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে দেহের সর্বত্র রক্ত-সঞ্চালনের কর্তব্য পালন করে।
আল্লাহ মানুষকে ফুসফুস দান করেছেন।
আল্লাহর নির্দেশে এটি ছন্দময় প্রক্রিয়ায় রক্তে অক্সিজেন ঢুকানো ও রক্ত থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সরানোর কর্তব্য পালন করে।
আল্লাহ মানুষকে একজোড়া কিডনি দান করেছেন। এরা পানিকে পরিস্রুত করে রক্ত-রসে পরিণত করা ও অ-প্রয়োজনীয় পানিকে বের করে দেয়ার কর্তব্য পালন করে।
আল্লাহ মানুষকে পাকস্থলি দান করেছেন।
এটি আহার্য দ্রব্য হজম করে দেহ পরিপোষণের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে।
আল্লাহ যকৃত (লিভার) দান করেছেন। এটি পিত্ত ক্ষরণ করে পিত্তথলিতে জমা রাখে ও বিশেষ বিশেষ খাদ্যকে পরিপাকের পর রক্ত স্রোতে পাঠানোর কর্তব্য পালন করে।
আল্লাহ গোটা দেহে বহু সংখ্যক হাড়, পেশী, কোষ, কলা, অন্ত্র, ঝিল্লি, গ্রন্থি ইত্যাদি দান করেছেন যেইগুলো দেহকে সজীব, সুস্থ, সবল রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মে বায়ু পাখিদেরকে উড়তে ও মানুষকে প্লেনে চড়ে দ্রুত দেশ-বিদেশে পৌঁছতে সাহায্য করে।
আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মে নদ-নদী ও সাগর-মহাসাগরের পানি জাহাজগুলোকে ভাসিয়ে রাখে যাতে মানুষ দূর দূর স্থানে পৌঁছতে ও মালসামগ্রী আমদানী-রফতানী করতে পারে।
আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মে বাষ্প বিভিন্ন মেশিনে শক্তি সঞ্চালন করে যাতে বিভিন্ন যানে চড়ে মানুষ দ্রুত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারে।
আল্লাহ মানুষকে চিন্তাশক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে দেখার শক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে লেখার শক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে কথা বলার শক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে শুনার শক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে ধরার শক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে চলার শক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে বংশবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনের শক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা ও কর্ম-প্রচেষ্টার স্বাধীনতা দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে অসংখ্য সৃষ্টির ওপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে তাঁর ইবাদাতের (উপাসনা-দাসত্ব-আদেশানুবর্তিতার) জন্য সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ একমাত্র মানুষকেই তাঁর খালীফা বা প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে খিলাফাত (আল্লাহর প্রতিনিধিত্বশীল শাসন) কায়েম করে পূর্ণাংগ ইবাদাতের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব দিয়েছেন।
আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান ইসলাম।
আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান নির্ভুল, পূর্ণাংগ, ভারসাম্যপূর্ণ ও কল্যাণময়।
আল্লাহ ছাড়া আর কারো পক্ষে এমন জীবন বিধান রচনা করা সম্ভব নয়।
আল্লাহ নবী-রাসূলদের মাধ্যমে ইসলামের শিক্ষা মানুষের নিকট পেশ করেছেন।
আল্লাহ প্রথম মানুষ আদমকে (আ) প্রথম নবী বানিয়েছেন।
আল্লাহ যুগে যুগে বহু নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন যাতে তাঁরা মানুষকে আল্লাহর ইবাদাত (উপাসনা-দাসত্ব-আদেশানুবর্তিতা) এবং তাগুতের (আল্লাহদ্রোহী শক্তির) বিরোধিতা করার শিক্ষা দেন।
আল্লাহ সর্বশেষে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি সর্বশেষ আসমানী কিতাব আলকুরআন নাযিল করেছেন।
আল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলকুরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার দায়িত্ব দিয়েছেন।
আল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলকুরআনের প্রায়োগিক রূপ শিক্ষা দেবার দায়িত্ব দিয়েছেন।
আল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসরণকে তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার শর্ত বানিয়েছেন।
আল্লাহ মানুষকে খালীফার (প্রতিনিধির) মর্যাদা দেয়ায় হিংসা-কাতর ইবলীস ও তার অনুসারীরা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা চালাবার শপথ নেয়।
আল্লাহ ঘোষণা করেন যে যারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর আনুগত্য করে চলবে ইবলীস ও তার অনুসারীরা তাদের ওপর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।
আল্লাহ অলৌকিকভাবে কোন ভূ-খণ্ডে তাঁর জীবন বিধান চালু করেন না।
আল্লাহ জোর করে তাঁর জীবন বিধান কোন জনগোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেন না।
আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না যদি তারা তাদের চিন্তাধারা ও কর্মধারা পরিবর্তন না করে।
আল্লাহ চান, মানুষ স্বেচ্ছায় তাঁর দেয়া জীবন বিধান তাদের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন ও আন্তর্জাতিক জীবনে কায়েম করুক।
আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধিত্বশীল শাসন কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ শূরা বা পরামর্শ ভিত্তিক শাসন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ যেই কোন মূল্যে সুবিচার নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের প্রতিরোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ অর্থ-সম্পদের অবাধ আবর্তন, সুষম বণ্টন ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য সুদমুক্ত ও যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ ছালাত বা নামায কায়েমের নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ ছাউম বা রোযা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ বিত্তবানকে যাকাত দেবার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ বিত্তবানকে হাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তাঁর পথে অকাতরে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ আব্বা-আম্মা, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও অপরাপর মানুষের সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ ওয়াদা-প্রতিশ্র“তি রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ আত্মহত্যা করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ আইনের দাবি ব্যতিরেকে কাউকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ অন্যের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ আমানাতের খিয়ানাত করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ মাপ ও ওজনে ঠকাতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ সুদ, ঘুষ, জুয়া ও মওজুদদারী নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ চুরি-ডাকাতি নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ অপব্যয়-অপচয় নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ যুল্ম-অত্যাচার নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ অহংকার নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ রিয়া নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ গীবাত নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ অপবাদ নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ মিথ্যা কথা বলা নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ গান-বাজনা নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ প্রাণীর ছবি আঁকা নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ সকল প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীল কাজ নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ প্রবৃত্তির আনুগত্য নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ আম্মা, দুধ মা, খালা, ফুফু, বোন, দুধ বোন, কন্যা, স্ত্রীর পূর্ব স্বামীর ঔরশজাত কন্যা, ভাতিঝি, ভাগিনী, শ্বাশুড়ী, পুত্রবধূ, একত্রে দুই বোন, একত্রে ফুফু-ভাইঝি এবং একত্রে খালা-বোনঝিকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ মুশরিক নারীকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ সামাজিক পবিত্রতা ও সুস্থতার জন্য আল হিজাব বা পর্দার বিধান নাযিল করেছেন।
আল্লাহ মদ ও মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ শর নিক্ষেপ করে ভাগ্য গণনা নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ গণকের কথায় বিশ্বাস স্থাপন নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ মরা পশুর গোশত, শূকরের গোশত, রক্ত, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবাইকৃত পশু, কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে আহত হয়ে ওপর থেকে পড়ে মৃত পশু, হিংস্র জন্তু কর্তৃক নিহত পশু এবং কোন বেদীতে উৎসর্গীকৃত পশুর গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ নখরযুক্ত ও হিংস্র জন্তু খাওয়া নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ জ্ঞান অর্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ আলকুরআনের আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ মহাবিশ্বকে নিয়ে চিন্তা-গবেষণার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ হালাল জীবিকা অন্বেষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ একমাত্র তাঁকে ভয় করে চলার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ একমাত্র তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ সকল নেক কাজ একমাত্র তাঁর সন্তোষ হাছিলের অভিপ্রায়ে (নিয়াতে) সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ একনিষ্ঠভাবে তাঁর নির্দেশগুলো মেনে চলবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজগুলো পরিহার করবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষের সকল ত্যাগ-কুরবানী একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত হবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষের মাথা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে নত হবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ একমাত্র আল্লাহর ওপরই ভরসা করবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ একমাত্র আল্লাহর নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ আল্লাহর আনুগত্যের সাথে সাংঘর্ষিক কোন আনুগত্য মেনে নেবে না।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ আল্লাহকেই সবচে’ বেশি ভালোবাসবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ তার প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের জন্যই করবে।
যেই জনগোষ্ঠী স্বেচ্ছায় আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানের নিরিখে তাদের গোটা সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলে আল্লাহ তাদের জন্য আসমান ও পৃথিবীর বারাকাতের দুয়ার খুলে দেন।
অর্থাৎ আল্লাহ তাদেরকে প্রভূত কল্যাণ, উন্নতি ও সমৃদ্ধি দান করেন।
আল্লাহ তাঁর অনুগত বান্দাদেরকে উত্তম রিয্ক দান করেন।
আল্লাহ তাঁর না-ফরমান বান্দাদেরকে পেরেশানী-যুক্ত জীবিকা দেন।
আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা ও কর্ম-প্রচেষ্টার স্বাধীনতা দিয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন।
যেই ব্যক্তি আল্লাহর আদেশানুবর্তী জীবন যাপন করে সে কামিয়াব।
যেই ব্যক্তি স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপন করে সে ব্যর্থ।
আল্লাহ নিজেই সকল মানুষের কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করছেন।
আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তির সংগে দুইজন ফেরেশতাকে সংশ্লিষ্ট করে দিয়েছেন।
আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা অবিরাম মানুষের সকল তৎপরতার বিবরণ লিপিবদ্ধ করে চলছেন।
আল্লাহ মানুষকে দুর্বল রূপে সৃষ্টি করেন, যৌবনে তাকে শক্তিমান করেন, বার্ধক্যে আবার তাকে দুর্বলতার শিকারে পরিণত করেন।
আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যুক্ষণ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। সেই নির্দিষ্ট ক্ষণেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়।
দুর্ভেদ্য দুর্গের ভেতর লুকিয়েও মৃত্যু থেকে রেহাই পাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
আল্লাহ বর্তমান মহাবিশ্বকে অনন্তকালের জন্য সৃষ্টি করেন নি।
আল্লাহ বর্তমান বিশ্ব-ব্যবস্থাকে ভেংগে দেয়ার জন্য একটি দিন-ক্ষণ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।
আল্লাহর নির্দেশে সেই দিন অন্যতম ফেরেশতা ইসরাফীল (আ) তাঁর বিশাল শিংগায় ফুঁ দেবেন।
শিংগার আওয়াজ উত্থিত হওয়ার সংগে সংগে আসমান ও পৃথিবী থরথর করে কেঁপে উঠবে।
আল্লাহ যেই মহাকর্ষ বলের (Gravitation) দ্বারা মহাবিশ্বের সব কিছুকেই পরস্পর সম্পর্কিত রেখেছেন তা ছিন্ন করে দেবেন।
কোটি কোটি তারকা, গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু ইত্যাদি সব কিছু ছিটকে পড়বে। পাহাড়-পর্বত টুকরো টুকরো হয়ে উড়তে থাকবে। সাগরগুলো উৎক্ষেপিত হবে।
আসমান, পৃথিবী ও এদের মধ্যকার সব কিছু ভেংগে চুরমার হয়ে যাবে।
সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
একমাত্র আল্লাহই বিদ্যমান থাকবেন।
অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে নতুন আকারে, নতুন বিন্যাসে মহাবিশ্ব অস্তিত
লাভ করবে।
আল্লাহর নির্দেশে বড়ো আকারে নতুন পৃথিবী গড়ে উঠবে।
নতুন পৃথিবী হবে এক বিশাল, সমতল, ধূসর প্রান্তর। ‘আলকাউসার’ নামে একটি জলাধার ছাড়া আর কিছু থাকবে না সেই সুবিস্তৃত ময়দানে।
আল্লাহর অনুগ্রহে আলকাউসারের পানি হবে দুধের মতো সাদা ও মিসকের চেয়েও বেশি সুগন্ধযুক্ত।
আল্লাহ প্রতিটি গলিত লাশের পরমাণুগুলোর কোনটি কোথায় অবস্থান করে একটি কিতাবে তার বিবরণ সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করেছেন।
আল্লাহ মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ মাটিতেই মানুষকে ফিরিয়ে নেন।
আল্লাহ এই মাটি থেকেই মানুষকে জীবিত করে উঠাবেন।
আল্লাহর নির্দেশে ইসরাফীল (আ) আবার শিংগায় ফুঁ দেবেন।
আল্লাহর নির্দেশে সকল মানুষ জীবিত হয়ে উঠে দাঁড়াবে এবং বিস্ময়ভরা চোখে এদিক ওদিক তাকাতে থাকবে।
আল্লাহর নূর পৃথিবীময় ঝলমল করতে থাকবে।
প্রচণ্ড উত্তাপে ও আতংকে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়বে।
আল্লাহর অনুগত বান্দারা ‘আলকাউসারের’ সুমিষ্ট ও শীতল পানি পান করে পিপাসা দূর করবে। যারা দুনিয়ায় আল্লাহর অবাধ্যতা করেছে তাদেরকে আলকাউসারের’ কাছে ঘেঁষতে দেয়া হবে না।
আল্লাহর আদালতে সারিবদ্ধভাবে মানুষ দাঁড়িয়ে যাবে।
একদিকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাবেন ফেরেশতারা।
আল্লাহর নির্দেশে যেইসব ফেরেশতা মানুষের তৎপরতার বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁরা তা পেশ করবেন।
আল্লাহর নির্দেশে প্রত্যেকের হাতে প্রত্যেকের আমলনামা তুলে দেয়া হবে।
আল্লাহর অনুগত বান্দারা ডান হাতে তাদের আমলনামা গ্রহণ করবে।
আল্লাহর অবাধ্য বান্দারা হাত পেছনে নিয়ে গেলেও আমলনামা হাতে নিতে
বাধ্য হবে।
আল্লাহ ঘোষণা করবেন : ‘তোমার আমলনামা পড়’।
প্রত্যেক ব্যক্তি দেখতে পাবে তার কৃত প্রতিটি কাজের বিবরণ নিখুঁতভাবে নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
আল্লাহ মানুষকে তার জীবনকাল সে কিভাবে কাটিয়েছে সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহ মানুষকে তার দেহসত্তায় যেইসব শক্তি দান করেছেন সেইগুলোর ব্যবহার (ঁংব) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহ মানুষকে যেই জ্ঞান দান করেছেন তার ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহ মানুষকে যেইসব অর্থ-সম্পদ দান করেছেন তার ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহ মানুষকে যেইসব ক্ষমতা-ইখতিয়ার দিয়েছেন সেইগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহ মানুষকে যেইসব আদেশ-নিষেধ করেছেন সেইগুলোর পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহ মানুষকে অপরাপর মানুষের তত্ত্বাবধান করার যেই দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহর নির্দেশে মানুষের হাত ও পা সাক্ষ্য দেবে তাদেরকে কোন্ কোন্ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
আল্লাহর নির্দেশে মানুষের জিহ্বা, কান, চোখ ও ত্বক সাক্ষ্য দেবে তাদেরকে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে।
আল্লাহর নির্দেশে মানুষের অন্তর সাক্ষ্য দেবে কখন কোন্ চিন্তা তার মাঝে লালিত হয়েছে।
মানুষের দুনিয়ার জীবনের সকল কর্মকাণ্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণের পর আল্লাহ যাদেরকে শাস্তি দেবার সিদ্ধান্ত নেবেন তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেবেন।
আল্লাহ যাদেরকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেবেন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করার নির্দেশ দেবেন।
আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ তাঁর কাছে কারো মুক্তির জন্য শাফাআত বা সুপারিশ করতে পারবেন না।
আল্লাহ যাঁকে শাফাআত করার অনুমতি দেবেন তিনি কেবল ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে শাফাআত করতে পারবেন যার জন্য শাফাআত করার অনুমতি দেয়া হবে।
আল্লাহর অনুমতিক্রমে নবী-রাসূল, শহীদ ও তাঁর অন্যান্য প্রিয় বান্দারা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য শাফাআত করলে আল্লাহ অনুগ্রহ করে তা কবুল করবেন এবং তাদের মুক্তির নির্দেশ দেবেন।
এক পর্যায়ে জাহান্নামীরা প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী আদমের (আ) নিকট জড়ো হয়ে তাদের মুক্তির জন্য শাফাআত করার অনুরোধ জানাবে। তিনি অপারগতা প্রকাশ করবেন।
তারা ছুটে যাবে নূহের (আ) কাছে। তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন।
তারা ছুটে যাবে ইবরাহীমের (আ) কাছে। তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন।
তারা ছুটে যাবে মূসা ইবনু ইমরানের (আ) কাছে। তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন।
তারা ছুটে যাবে ঈসা ইবনু মারইয়ামের (আ) কাছে। তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন।
তারা ছুটে যাবে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে।
তিনি সাজদায় পড়ে আল্লাহর তাসবীহ করতে থাকবেন।
আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন ততক্ষণ তিনি সাজদারত থাকবেন।
আল্লাহর অনুমতিক্রমে তিনি একদল লোকের নাজাতের জন্য শাফাআত করবেন।
আল্লাহ অনুগ্রহ করে তাঁর শাফাআত কবুল করবেন।
আল্লাহর নির্দেশে তিনি নির্দিষ্ট ব্যক্তিদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো কিছু লোকের জন্য শাফাআত করার অনুমতি লাভের জন্য আবার সাজদায় লুটিয়ে পড়বেন।
আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন ততক্ষণ তিনি সাজদায় থাকবেন।
আল্লাহর অনুমতিক্রমে তিনি আরো একদল লোকের জন্য শাফাআত করবেন।
আল্লাহ অনুগ্রহ করে তাঁর শাফাআত কবুল করবেন।
আল্লাহর নির্দেশে তিনি সেই লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন।
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারবার সাজদারত হয়ে শাফাআতের অনুমতি চাইতে থাকবেন। আল্লাহ অনুগ্রহ করে তাঁকে একের পর এক বহু সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনার অনুমতি দেবেন।
আল্লাহ সর্বশেষে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাদের অন্তরে সরিষার বীজের পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনার অনুমতি দেবেন।
জাহান্নামীরা জাহান্নামে ও জান্নাতীরা জান্নাতে অবস্থান গ্রহণের পর একজন ফেরেশতা মধ্যবর্তী স্থান থেকে ঘোষণা করবেন : ‘ওহে জাহান্নামীরা, আর মৃত্যু নেই। ওহে জান্নাতীরা, আর মৃত্যু নেই। সামনে অনন্ত জীবন।’জাহান্নাম কঠিন শাস্তির স্থান।
আল্লাহ ভয়ংকর আকৃতির ফেরেশতাদেরকে জাহান্নামীদের শাস্তির জন্য নিযুক্ত করে রেখেছেন।
আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা অপরাধীদেরকে গলায় বেড়ি ও দেহে লোহার শিকল পেঁচিয়ে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে।
জাহান্নামীদেরকে আলকাতরার পোশাক পরানো হবে।
আল্লাহ দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি তেজযুক্ত আগুন দিয়ে জাহান্নাম ভরে রেখেছেন।
ঘন শ্বাসরুদ্ধকর ঝাঁঝালো কষ্টদায়ক ধোঁয়া জাহান্নামে আবর্তিত হতে থাকবে।
আল্লাহ জাহান্নামের বিভিন্ন অংশ বিশাল আকৃতির ভয়ংকর বিষধর সাপ দিয়ে ভর্তি করে রেখেছেন।
আল্লাহ জাহান্নামীদের দেহকে বিশাল আকৃতি দেবেন।
ফেরেশতারা ভারী গুর্জ দিয়ে আঘাত হেনে জাহান্নামীদের দেহ ক্ষত-বিক্ষত করতে থাকবেন।
জাহান্নামীরা ভীষণ চিৎকার করতে থাকবে।
আগুনের উত্তাপে ও পিপাসায় তারা হাঁপাতে থাকবে।
জাহান্নামীদেরকে তাদের দেহ-নির্গত রক্ত-পুঁজ পান করতে দেয়া হবে।
টগবগ করে ফুটছে এমন পানি তাদেরকে পান করতে দেয়া হবে।
উত্তপ্ত তেলের গাদ তাদেরকে পান করানো হবে।
জাহান্নামীদেরকে কাঁটাযুক্ত, তিক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত যাক্কুম গাছ গিলতে বাধ্য করা হবে।
জাহান্নামীদের গায়ের চামড়া পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে, নতুন চামড়া জন্মাবে ও নতুনভাবে পুড়তে থাকবে।
আল্লাহ জাহান্নামে আরো বহুবিধ শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন।
জাহান্নামে সবচে’ কম শাস্তি যাকে দেয়া হবে তাকে আগুনের ফিতাযুক্ত একজোড়া জুতা পরানো হবে। এতে তার মাথার মগজ চুলার ওপর হাঁড়ির পানির মতো টগবগ করে ফুটতে থাকবে।
জান্নাত অনাবিল সুখ-শান্তির স্থান।
আল্লাহ তাঁর আদেশানুবর্তী বান্দাদেরকে মেহমানের মর্যাদা দেবেন।
আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা তাঁদেরকে সাদর-সম্ভাষণ জানিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাবেন।
আল্লাহ সবচে’ কম মর্যাদাবান জান্নাতীকে বর্তমান পৃথিবীর চেয়ে দশগুণ বেশি স্থান দান করবেন।
আল্লাহ জান্নাতকে নয়নাভিরাম বাগানময় করে রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতের বাগানগুলোকে পাখ-পাখালিতে পূর্ণ করে রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতকে ফুলে ফুলে পরিপূর্ণ করে রেখেছেন।
আল্লাহর নির্দেশে জান্নাতে সুপেয় পানির ঝর্ণা, সুস্বাদু দুধের ঝর্ণা, স্বচ্ছ মধুর ঝর্ণা ও অন্যান্য উন্নত মানের পানীয়র ঝর্ণা অবিরাম প্রবাহিত হচ্ছে।
আল্লাহ জান্নাতে অতি সুস্বাদু মাছ, গোশত, রকমারি খাদ্য ও ফলের সমারোহ ঘটিয়েছেন।
আল্লাহ জান্নাতে অনুপম উপদানে তৈরি সুউচ্চ, সুবিস্তৃত ও সুদৃশ্য প্রাসাদ সারি সজ্জিত করে রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতের প্রাসাদগুলোর মেঝেকে অতি উচ্চমানের পুরু কার্পেটে সজ্জিত করেছেন।
আল্লাহ জান্নাতীদের জন্য অতীব সুন্দর ও অতীব আরামদায়ক পোশাক মওজুদ করে রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতীদের জন্য অতীব আরামদায়ক আসন ও শয্যার ব্যবস্থা করেছেন।
আল্লাহ জান্নাতকে আলো-ঝলমল করে রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতকে অগণিত সৌন্দর্য-শোভার উপকরণে সজ্জিত করে রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতের প্রতিটি বস্তুকে তুলনাহীন সুঘ্রাণ যুক্ত করে রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতকে উত্তাপ ও শীতের প্রকোপ মুক্ত করে গড়েছেন।
আল্লাহ জান্নাতের সব কিছু জান্নাতীদের নাগালের মধ্যেই রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতীদের খিদমাতের জন্য গিলমান (চির বালকদল) মুতায়েন করে রেখেছেন।
স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে জান্নাতী হলে আল্লাহ তাঁদেরকে জান্নাতেও অনন্তকালের জন্য জীবন-সাথী বানিয়ে দেবেন।
আল্লাহ জান্নাতে পুরুষদেরকে হুরও দেবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে ষাট হাত দৈর্ঘ্য দান করবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে চির যুবক ও চির যুবতী বানাবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে কখনো বুড়ো হতে দেবেন না।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে চিরকাল রোগমুক্ত রাখবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে যাবতীয় দৈহিক ও মানসিক অশান্তি মুক্ত রাখবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে অসাধারণ দৈহিক সৌন্দর্য দান করবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে অসাধারণ সুঘ্রাণযুক্ত করবেন।
আল্লাহ জান্নাতে এক বিশাল মার্কেট বানিয়ে রেখেছেন যেখানে প্রতি জুমাবার জান্নাতী পুরুষেরা একত্রিত হবেন।
সেখানে প্রবাহিত হাওয়ার ছোঁয়ায় তাঁদের রূপ-সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে এবং তাঁদের পোশাক থেকে নতুন সুগন্ধ বের হতে থাকবে।
তাঁরা তাঁদের প্রাসাদে ফিরে তাঁদের স্ত্রীদেরকেও পূর্বের চেয়ে আরো বেশি রূপ-লাবণ্যে ভরা দেখতে পাবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে এমন ক্ষমতা দেবেন যে হাজারো মাইল দূরে অবস্থিত ব্যক্তিকে তাঁরা দেখতে চাইলে দেখতে পাবেন এবং কথা বলতে চাইলে বলতে পারবেন।
আল্লাহ এমন এমন বৃক্ষ তৈরি করে রেখেছেন যার একটির শাখা-প্রশাখার নিচে একজন অশ্বারোহী একশত বছর অশ্ব চালনা করেও তার সীমানা অতিক্রম করতে পারবেন না।
আল্লাহ জান্নাতীদের জন্য এমন বাহন মওজুদ করে রেখেছেন যাতে আরোহণ করে তাঁরা গোটা বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারবেন।
[সম্ভবত জাহান্নামের অংশটুকু ছাড়া মহাবিশ্বের বাকি অংশকে জান্নাতে রূপান্তরিত করা হবে।]
আল্লাহ পৃথিবীটাকেও জান্নাতের অংশ বানিয়ে দেবেন।
একজন জান্নাতী যা চাইবেন তা-ই পাবেন।
আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে আরো অনেক কিছু দেবেন।
আল্লাহ জান্নাতে এমন সব নিয়ামাত মওজুদ করে রেখেছেন যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, যার কথা কোন কান কখনো শুনেনি এবং যার ধারণা কোন হৃদয়ে কখনো উদিত হয়নি।
আল্লাহ নতুন নতুন নিয়ামাত সৃষ্টি করে জান্নাতীদেরকে উপহার দিতে থাকবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে তাঁর দর্শন দান করে ধন্য করবেন।
আল্লাহর দর্শনই হবে জান্নাতীদের নিকট সবচে’ বেশি আনন্দের বিষয়।
আল্লাহ মহাশিল্পী।
আল্লাহ মহাবিজ্ঞানী।
আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্য তুলনাহীন।
আল্লাহর কোন খুঁত নেই।
আল্লাহর কোন ত্র“টি নেই।
আল্লাহর কোন অপূর্ণত্ব নেই।
আল্লাহর কোন অপারগতা নেই।
পৃথিবীর সবগুলো গাছ দিয়ে যদি কলম বানানো হয়, সমুদ্রগুলোর পানির সাথে আরো সাত সমুদ্রের পানি মিলিয়ে যদি কালি বানানো হয়, তবুও আল্লাহর কথা লিখে শেষ করা যাবে না।
আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।
আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা।
আল্লাহর জন্যই সব সম্মান।
লেখক : এ.কে.এম. নাজির আহমদ
দাওয়াত ইলাল্লাহ
শহীদ মতিউর রহমান নিজামী(রহ)
মানুষের জীবনে ও আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আল্লাহর নির্দেশে নবী রাসূলদের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়েছে। সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পর্যন্ত সব নবীর আন্দোলনের সূচনা হয়েছে দাওয়াতের মাধ্যমে। আল কোরআন বিভিন্ন নবীর আন্দোলন প্রসঙ্গে ঘোষণা করেছে:
لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ [الأعراف
আমি নূহ (আঃ) কে তার কওমের নিকট পাঠিয়েছিলাম। তিনি তাঁর কওমকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওম! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর- আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ বা প্রভু নেই। (আল আ’রাফ:৫৯)
وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ أَفَلَا تَتَّقُونَ [الأعراف
এবং আদ জাতির প্রতি আমি তাদের ভাই হুদ (আঃ) কে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বললেন, হে আমার দেশবাসী ! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই। (আল আ’রাফ: ৬৫)
وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ [الأعراف
এবং সামুদ জাতির প্রতি তাদের ভাই সালেহ (আঃ) কে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তাঁর দেশবাসীকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওমের লোকেরা! তোমরা আল্লাহর দসত্ব কবুল কর। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। (আল আ’রাফ:৭৩)
وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ [الأعراف
এবং মাদইয়ানবাসীর প্রতি তাদেরই ভাই শোয়ায়েব আ. কে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তার কওমকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওম। তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কবুল কর। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। (আল আ’রাফ:৮৫)
শেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর আন্দোলনে ও তাঁকে প্রথম এভাবে মানব জাতিকে আল্লাহর দাসত্ব কবুলের আহবান জানাতে হয়। তাঁর জীবনের প্রথম গণভাষণের প্রধান বক্তব্য ছিল:
يايها الناس قولوا لا اله الا تفلحون
হে মানব জাতি! তোমরা ঘোষণা কর আল্লাহ ছাড়া সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী আর কেউ নেই তাহলে তোমরা সফল হবে। (আল হাদিস) আল্লাহর দাসত্ব কবুল এবং গায়রুল্লাহর দাসত্ব বর্জনের আহবান জানানোর এই কাজটা আল কোরআনে বিভিন্নভাবে ব্যক্ত করা হয়। কোথাও সরাসরি নির্দেশ আকারে এসেছে, যেমন সূরা নাহলের শেষ দুটি আয়াতে দাওয়াতের পদ্ধতি শেখাতে গিয়ে বলা হয়েছ:
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ [النحل : 125]
ডাক, তোমার রবের পথের দিকে হিকমত ও উত্তম নসীহতের সাথে। (আন নাহল:১২৫) কোথাও এসেছে রাসূলের কাজ ও পথের পরিচয় প্রদান হিসেবে। যেমন সূরায়ে ইউসুফের শেষ রুকুতে বলা হয়েছে:
قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ [يوسف : 108]
বলে দিন হে মুহাম্মদ (সা.) এটাই একমাত্র পথ, যে পথে আমি আল্লাহর দিকে আহবান জানাই। (ইউসুফ: ১০৮)
সূরায়ে আহযাবে ৪৫-৪৬ আয়াতে বলা হয়েছে:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (45) وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا [الأحزاب : 45 ، 46]
হে নবী! আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শকরূপে এবং আল্লাহর নির্দেশে তাঁর প্রতি আহবানকারী ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। আবার কোথাও এসেছে এই কাজের প্রশংসা বর্ণনা হিসেবে। যেমন, সূরায়ে হা-মীম আসসাজদায় ৩৩ আয়াতে বলা হয়েছে:
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ [فصلت : 33]
আর সে ব্যক্তির কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কারও হতে পারে কি যে আল্লাহর দিকে আহবান জানায় এবং ঘোষণা করে যে, আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। কোথাও এসেছে উম্মতে মুহাম্মদীর দায়িত্ব ও কর্তব্য ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে। যেমন, সূরায়ে আল ইমরানের ১০৪ আয়াতে বলা হয়েছে:
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ [آل عمران : 104]
তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক অবশ্যই থাকতে হবে যারা ভাল কাজের প্রতি মানুষকে আহ্বান করবে, সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দেবে। সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামের দাওয়াতের মূল সুর, মূল আবেদনও অভিন্ন। সবার দাওয়াতের মধ্যেই আমরা কয়েকটি প্রধান দিক লক্ষ্য করতে পারি।
প্রথমত: সবাই তাওহীদের আল্লাহর সার্বভৌমত্বের দাওয়াত দিয়েছেন এবং গায়রুল্লাহর সার্বভৌমত্ব পরিহার করার আহ্বান রেখেছেন।
দ্বিতীয়ত: তাঁরা সমাজের খুঁটিনাটি সমস্যা সমাধানের প্রসঙ্গ তোলেননি। কিন্তু আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা না থাকার ফলে যে সব বড় বড় সমস্যায় মানুষ জর্জরিত ছিল সেগুলোর কড়া সমালোচনা করা হয়েছে।
তৃতীয়তঃ দাওয়াত কবুল না করার পরিণাম ও পরিণতি দুনিয়া ও আখেরাতে কি হবে এই সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে, ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি এই দাওয়াত কবুলের প্রতিদান-প্রতিফল দুনিয়া ও আখেরাতে কি হবে সে সম্পর্কেও শুভ সংবাদ শুনানো হয়েছে।
আম্বিয়ায়ে কেরামের এই দাওয়াতের মেজাজ প্রকৃতি গভীরভাবে অনুধাবনের ও অনুশীলনের চেষ্টা করলে যে কেউ বুঝতে সক্ষম হবে, এই দাওয়াত ছিল যার যার সময়ের সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের একটা আপোষহীন বিপ্লবী ঘোষনা। এই জন্যেই প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষক, ধারক, বাহক ও সুবিধাভোগীদের সাথে তাদের সংঘাত ছিল অনিবার্য।