শহীদ মীর কাশেম আলী ভাই সম্পর্কে না বলা কথাগুলো
আমার কারা জীবনের সবচাইতে বেশি সময় এবং অপেক্ষাকৃত ভাল সময় কেটেছে কাশিমপুর ২নং কারাগারে। ২০১৩ সালের ৩১ মে গ্রেফতারের পর প্রথম দফায় ডিবি কার্যালয়ে রিমান্ড শেষে ৪ জুন আমাদেরকে কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এখানে ১০ দিন অবস্থানের পর ১৪ জুন কাশিমপুর ২নং কারাগারে স্থানান্তর করে। এখানে এসে জানতে পারি ডিভিশনে মীর কাশেম ভাই, ফাঁসির সেলে কামারুজ্জামান ভাই, ৬০ সেলে আব্দুল কাদের মোল্লা ভাই এবং শামীম সাঈদী ভাই আছেন, সাধারন সেলে ছাত্রশিবিরের তখনকার পরিষদ সদস্য আতিক ভাই (পরে কেন্দ্রীয় সভাপতি), ইয়াহইয়া ভাই,দেলোয়ার ভাই, সাজ্জাদ ভাইসহ আমাদের প্রায় ৩০০ জন। প্রথমদিনে আমাকে আমাদের ভাইদের ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু পরের দিন জেলার নিজে ডেকে নিয়ে কষ্টে রাখার জন্য জেএমবি সেল ৬০ সেল পূর্বে পাঠিয়ে দেয় যেখানে রায়ের থেকে আছেন আব্দুল কাদের মোল্লা ভাই এবং শামীম সাঈদী ভাই। আমাদের সামনেই অবস্থিত ডিভিশন বিল্ডিং। ১৯ তারিখ কোর্ট থেকে ফিরে এসে রুমে দেখি একটা বাটিতে ইলিশ ফ্রাই। আমাদের সাধারন রান্না থেকে আলাদা মনে হওয়ায় একটু ইতস্তত করছি। রুমে থাকা অন্য ভাইটি বললেন, “ ডিভিশন থেকে মীর কাশেম স্যার পাঠিয়েছেন”। প্রচন্ড ভালো লাগায় মনটা ভরে গেল। তখনো পর্যন্ত কে কোথায় আছেন জানা হয়েছে কিন্তু দেখার সুযোগ হয়নি কবে দেখা হবে তাও জানিনা। আমাদের সেবক,পরিচিত কয়েকজন কারা রক্ষীর মাধ্যমে মীর কাশেম ভাইকে সালাম পৌছানো হয়েছে, উনার সেবক এসে আমার খোজ নিয়ে গিয়েছেন।
২০ জুন আবার রিমান্ডে নেয়ার জন্য ডিবি কারাগারে হাজির। ব্যাগ ঘুচিয়ে তৎকালীন পরিষদ সদস্য ফাহিমসহ আমরা তিনজন ৬ দিনের রিমান্ডের জন্য ডিবিতে চলে আসলাম। রিমান্ড শেষে ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই আবার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাশিমপুর ২ নং কারাগারে ফিরে এলাম। রমজান মাসের শেষ দশক। আমাদের অনেক ভাইদের জামিন হয়ে এখন সংখ্যা প্রায় ৫০ এর মত । সেল থেকে মেডিকেলে এসে ভর্তি হলাম । মধ্যখানে থাকার কারনে সাধারন ওয়ার্ড, ডিভিশন, ৬০ সেল, ফাঁসির সেল সব জায়গায় যোগাযোগ সহজ। দায়িত্বশীলদের অনেকেই জামিনে চলে গিয়েছেন শুধু মহানগরী পশ্চিমের সভাপতি সাজ্জাদ ভাই ছাড়া। উনারও ঈদের আগে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা। মেডিকেল থেকে সেবক এবং রাইটার ( সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী) এর মাধ্যমে মীর কাসেম ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিদের মধ্যে মীর কাসেম ভাইয়ের সাথে আমার অন্যরকম সম্পর্ক ছিল। কিছুটা আবদার অভিমানেরও। আমি যখন মিরপুর মনিপুরে ( উনার বাড়ি) ওয়ার্ড সভাপতি ছিলাম তখন থেকে সম্পর্ক যোগাযোগ। উনার ছোট ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহম্মেদ বিন কাসেম আরমান (যাকে সরকারের আইনশৃংখলা বাহিনী গত এক বছর থেকে গুম করে রেখেছে) তখন আমার কর্মী এবং ইউনিট সভাপতি। ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশান পরিচালিত হোমিওপ্যাথিক স্যাটেলাইট ক্লিনিক এর কার্যক্রম সংক্রান্ত ব্যাপারে অনেকবার উনার কাছে গিয়েছিলাম যা ছিল আবদার এবং অভিমানের।
তবে সব চাইতে মজার ব্যাপার ছিল,আমি যখন কেন্দ্রীয় সভাপতি, ৪/৫ মাস যাওয়ার পর থেকে উনি আমার বিয়ে নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছিলেন যা তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত আমীর পর্যন্ত গড়িয়েছে। প্রথমে ১/২ বার ব্যক্তিগতভাবে বললেও পরে তা একেবারে ভরা মজলিশে বলা শুরু করলেন। বিদায়ের আগে এ ব্যাপারে আমি কোন সিদ্ধান্ত নিবোনা বলে তা থেকে রক্ষা পেলাম। অনেক বেশি ভালবাসা এবং অধিকার নিয়ে কথা বলতেন। উনার ভালবাসা এবং অধিকারগুলো আরো বেশি উপলব্ধি করেছি কারাগারের দিনগুলোতে। অনেকের কাছে শুনতাম মীর কাসেম ভাই রাশভারী মানুষ, কথা কম বলেন সবাই উনার কাছে যেতে পারেনা কিন্তু আমি উনাকে আবিষ্কার করলাম বিপরীত চরিত্রের মানুষ হিসেবে। কারাগারে যখন পুরাতন হয়ে গেলাম তখন প্রত্যেকদিন কমপক্ষে ২ বার যাওয়া হত ডিভিশনে। প্রায় প্রতিবারে মীর কাসেম ভাই আমাকে আলাদা করে কথা বলে যেতে বলতেন। যার অধিকাংশ বিষয় ছিল আমাদের ভাইদের অবস্থা, কারো কোনো সমস্যা আছে কিনা, সবাই ঠিকমত বের হয়ে যেতে পারছে কিনা।
ইসলামী ছাত্রশিবির এর ব্যাপারে এতবেশি আবেগপ্রবণ দায়িত্বশীল আমি কাউকে দেখিনি। আমি উনার যতগুলো বক্তব্য শুনেছি কাঁদেন নাই এমন কোন বক্তব্য ছিলনা। আমদের পরিষদ অধিবেশন, সদস্য সম্মেলন, ভ্রাত্রী শিবিরের মিটিং, শিক্ষা শিবির, শিক্ষা বৈঠক হোক সেটা আল ফালাহ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউট অথবা পল্টন ময়দান সকল বক্তব্যে দেখেছি আবেগে কেঁদেছেন এবং কাঁদিয়েছেন । উনার হাত ধরে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় সভাপতি। অনেক মমতা, অনেক ভালবাসায় জড়িয়ে রেখেছিলেন ছাত্রশিবিরকে। একজন বাবা তার প্রিয় সন্তানকে যেভাবে ভালবাসেন, যেভাবে তার আবদারকে রক্ষা করেন মীর কাসেম ভাই আমার দৃষ্টিতে এবং আমার দেখা অভিজ্ঞতায় সেভাবে ভালবাসতেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে। তারই একটি ঘটনা বর্ণনা করছি-
এই কারাগারে এসেছি মাত্র কয়দিন হল। নতুন হওয়ার কারনে সব কিছু সমঝে চলছি। রমজানের শেষ দশক। কয়েক দিন পর ঈদ সে উপলক্ষে বাহিরে ঘুরার সুযোগ হবে সবার সাথে দেখা করার সূযোগ হবে সেজন্য এখন কারো সাথে দেখা করতে যাচ্ছিনা । সেবক এবং রাইটার এর মাধ্যমে সব খবর পাচ্ছি। এর মধ্যে আরো ২/১ বার মীর কাসেম ভাইয়ের পাঠানো খাবার পেলাম। অনেক ইচ্ছা সত্ত্বেও ঈদের দিনের জন্য অপেক্ষা । সেদিন দেখা হবে কথা হবে সে আশায় ধৈর্য ধরে থাকলাম। ২০১৩ সালের ৯ আগষ্ট ঈদুল ফিতর । কারাগারের প্রথম ঈদ। এর আগে কয়েকদিন ব্যস্ত ছিলাম ভাইদের ঈদ উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি নিয়ে । যদিও সংখ্যায় কম দায়িত্বশীলদের সবাই চলে যাওয়ার কারনে সব দেখাশুনার কাজ এখন আমার উপর। সাজ্জাদ ভাই ঈদের আগে চলে যাবে নিশ্চিত সেজন্য উনাকে খুব বেশি কাজ দেয়া হচ্ছেনা রি-এরেস্ট থেকে রক্ষা করার জন্য। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সবার জন্য ঈদের পাঞ্জাবী, টুপি, আতর পাঠিয়েছেন ছাত্রশিবিরের ভাইয়েরা। একই সাথে কামারুজ্জামান ভাই, আব্দুল কাদের মোল্লা ভাই, মীর কাশেম ভাই এবং কারাগারে থাকা কয়েকজন ভিআইপির জন্য। সব জিনিসগুলো আমার নামেই এসেছে। ঈদের আগের দিনের মধ্যেই সবগুলো যার যার কাছে পাঠিয়েছি। ঈদের দিন ভোরে সাজ্জাদ ভাই বিদায় নিয়ে গেলেন উনার জামিনের কাগজ আসছে, চলে যাবেন যদিও শেষ পর্যন্ত উনার যাওয়া হয়নি।
সকাল ৯টায় ঈদের নামাজ ডিভিশন বিল্ডিং এর সামনে। মেডিকেল, ৬০ সেল (যেখানে মোল্লা ভাই আছেন) এখানে নামাজ পড়বে। আমরা মেডিকেল থেকে ৮.৪৫ টায় এর মধ্যে হাজির হলাম। নামাজের চাইতে আমার বেশি দৃষ্টি মীর কাশেম ভাই এবং আব্দুল কাদের মোল্লা ভাইয়ের দিকে। কখন উনারা আসবেন। গিয়ে দেখি তখনও কেউ নামেননি। নামাজ পড়ানোর ইমাম বসে আছেন। কারা মহা পরিচালকের বানী পড়ানো ছাড়া কোন ওয়াজ নসিহতের সুযোগ নাই। ইমাম হচ্ছে কয়েদীদের মধ্য থেকে যিনি আমাদের খাবারের দায়িত্ব পালন করেন। আমি যাওয়ার পর আমাকে দেখে এগিয়ে আসলেন। মীর কাশেম ভাইদের কথা জিজ্ঞেস করতে বললেন, “কাশেম স্যার এখনো নামেন নাই, মোল্লা স্যার নামাজের পরে আসবেন, মাহমুদুর রহমান স্যার এবং মামুন ভাইও নামজের পরে নামবেন।
নামাজের সামনের কাতারে বসা আওয়ামীলীগের সাংসদ গোলাম মাওলা রনি। আমি উনার পাশে গিয়ে বসে আমার পরিচয় দিলাম আমার সাথে হ্যান্ডশেক করে কোলাকুলি করলেন। কয়েক মিনিট পর বিল্ডিং এর তিন তালার দিকে তাকিয়ে দেখলাম বারান্দা দিয়ে মীর কাশেম ভাই হেটে আসছেন। নিচে নেমে এসে নামাজের এখানে আসার আগে আমি এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখে মীর কাশেম ভাই উনার সে পরিচিত ভংগীতে ২ হাত ২ দিকে প্রসারিত করে বললেন, “কি খবর মানিক মিয়া”? আমি দৌড়ে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমাকে উদ্দেশ্য করে হাতের ২ আঙ্গুল দিয়ে গায়ের পাঞ্জাবী টিপে ধরে নাড়তে নাড়তে বললেন, “শিবির শিবির”। আমি দেখলাম গতকাল ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে যে পাঞ্জাবী পাঠিয়েছি সেটাই আজকে পরেছেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “শিবিরের পাঞ্জাবী পড়ে কারাগারে ঈদের নামাজ পড়তে আসলাম”। আমি অবাক হয়ে গেলাম এত ভালবাসা ছাত্রশিবিরের জন্য।
আমরা নিজেরাও শিবিরের দেয়া পাঞ্জাবী পরি। কিন্তু আমাদেরতো এত বেশি গিফট পাওয়ার অথবা ভালবাসার ,আবদার রক্ষা করার জায়গা তৈরী হয়নি। মীর কাসেম ভাই উনি যত বড় মাপের মানুষ ,উনার পরিচালিত প্রতিষ্ঠান, আত্মীয়, শুভাকাংখী, যাদেরকে তিনি কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অনেক বড় করেছেন। তাদের অনেকেই অনেক দামী দামী পাঞ্জাবী গিফট করার কথা। তার কিছু নমূনা আমি উনার রুমে দেখেছি। তাছাড়া উনার স্ত্রী, ছেলে , মেয়ে, তাদের পক্ষ থেকে গিফট আসার কথা। একজন স্নেহময়ী বাবা, একজন প্রিয়তম স্বামী হিসেবে ঈদের এই বিশেষ দিনে আদর, স্নে্হ,ভালবাসা থেকে থেকে বঞ্চিত স্ত্রী অথবা ছেলে মেয়েদের আবদার রক্ষা করার কথা । কিন্তু না তিনি তাদের কারো আবদার রক্ষা করেননি। আবদার রক্ষা করেছেন তার হাতে গড়া প্রিয় কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের। স্ত্রী, সন্তান ,আত্মীয় পরিজনের ভালবাসার উপরে স্থান দিয়েছেন ছাত্রশিবিরকে। একজন বাবা তার অনেকগুলো সন্তানের মধ্যে তার আবদার কে অগ্রাধিকার দেন যাকে তিনি সবচাইতে বেশি ভালবাসেন,পছন্দ করেন। আমি মীর কাশেম আলী ভাইয়ের সেই ভালবাসা দেখেছি। আমাকে বললেন, শিবির আমাদের পুরো অস্তিত্ব জুড়ে, কোন ভয় নেই, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন”। আমাদের সাবেক আমীরে জামায়াত মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম স্যার বলতেন, এবং “বাংলাদেশ জামায়তে ইসলামীর বৈশিষ্ট্য” বইতে লিখেছেন “ সংগঠনকে নিজের পরিবারের একটি সদস্য হিসেবে বিবেচনা করে তার জন্য খরচ করবেন। নিজের সন্তানদের মধ্যে আরেকজন সন্তান মনে করে তার বরাদ্দ রাখবেন”।
মীর কাশেম ভাই সত্যিই ছাত্রশিবিরের একজন বড় অভিভাবক ছিলেন, ছাত্রশিবিরকে ভালবাসতেন পিতৃত্বের মমতায়। হৃদয়ের সবটুকু জায়গা দখল করে ছিলো ইসলামী ছাত্রশিবির। আমাদের জনশক্তিরা তা কি উপলব্দি করেন? কতটা ভালবাসা দিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে আগলে রেখেছেন। আমি সেদিনও নির্বাক ছিলাম এখনো সেসব চিন্তা করে নির্বাক হয়ে যাই। শ্রদ্ধা, ভালবাসায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ে এরকম একজন সভাপতির নেতৃত্বে আমাদের কাফেলার যাত্রা শুরু হয়েছিল ৩৬ বছর পরে যার ভালবাসা এক ফোটা কমেনি। নামাজ শেষে আমাকে হাত ধরে আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, গিয়াস উদ্দিন মামুন, গোলাম মাওলা রনির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। পরিচয় পর্ব শেষে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে নাস্তা করলেন।
সংগঠনের যেকোন জিনিসকে মীর কাসেম ভাই নির্দ্বিধায় ভাল বলতেন এবং পছন্দের তালিকায় রাখতেন। কারাগারে সব সময় আমরা সাধারন খাবার খেতাম তবে মাসে ১ দিন বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করতাম। পোলাও এর সাথে গরু অথবা মুরগি রান্না করা হত। পুরো কারাগারে আমাদের এ বিশেষ আয়োজনকে সবাই বড় খাবার বলতো। আমাদের পরিচিত এবং স্থানীয় কতৃপক্ষকে আমরা খাবার পাঠাতাম। ডিভিশনের তুলনায় তেমন বড় কিছু না হলেও মীর কাসেম ভাই খুব তৃপ্তি সহকারে খেতেন এবং প্রশংসা করতেন। মাঝে মধ্যে আর্থিক সংকটে পড়লে মীর কাসেম ভাই সহযোগিতা করতেন তারপরও উনি একদিন প্রস্তাব করলেন উনাকে আমাদের ডাইনিং এ মেম্বার করে নিতে।
একটা মজার ঘটনা বলি, একদিন মীর কাসেম ভাই আমাকে বললেন, “মানিক তোমরা রাতে কি খাও”? আমি বললাম ,সবব্জী, উনি বললেন, “তোমাদের ঐ তরকারি আমার জন্য পাঠাবা” । আমি লজ্জিত হয়ে বললাম , “ভাই এটা একেবারে সাধারন সবব্জী ,আপনি এটা কি খাবেন”। আমাকে বললেন, কি সমস্যা, তোমরা খেতে পারলে আমি পারবোনা, আমার জন্য পাঠাবা আর মাস শেষে বিল নিয়ে যাবা”। আমি পাঠাতে চাইনি পরে উনার পীড়াপীড়িতে পাঠাতে বাধ্য হলাম। উনি আমাকে পরের দিন বললেন, মানিক তোমাদের সবব্জী (লাউ) অনেক মজা হয়েছে, আমি রাতে সেহেরী খেয়েছি সবব্জী দিয়ে, এখন থেকে প্রত্যেক সোম এবং বৃহস্প্রতিবার রাতে পাঠাবা আমি এটা খেয়ে রোজা রাখবো”। ঠিক একই সবব্জীর ব্যাপারে গিয়াস উদ্দিন মামুন ভাইয়ের বক্তব্য , আপনারা এটা কিভাবে খান?
দেখলেই তো পেটে ডিস্টার্ব করবে”। আমি বললাম, “ভাই আমরা কোন রকম খাই কিন্তু আপনি দেখলেন কিভাবে?” উনি বললেন, “গতকাল দুপুরে আমরা যখন খেতে বসি তখন আপনাদের কে একজন চুপি চুপি বাটিতে করে কি যেন ইমাম সাহেবের ( মীর কাসেম) রুমে রেখে যাচ্ছে। আমি তাকে ডাকলাম কিন্তু সে দেখাতে চাইলোনা আমি জোর করে যখন ডাকলাম তখন সে নিয়ে আসলো ,খুলে দেখি লাউ রান্না করা। উপর দিয়ে পোড়া তেল। এটা আপনারা খান কিভাবে?। আমি বললাম, “এটা আমরা খেয়ে নিই, আপনারা যেন লুকিয়ে দিয়ে আসতে বলেছি। কিন্তু মীর কাসেম ভাই বললেন, “ভাল হয়েছে উনি সেহেরী করেছেন”। মামুন ভাই বললেন, “ ইমাম সাহেবকে যা দিবেন তাই উনার মজা লাগে”। আমি মনে মনে বললাম, স্বাধতো উনার জিহ্বায় না ,অন্তরে”।
আমি চলে আসার পরও জানতে পেরেছি উনি আমাদের সেই সস্তা রান্না করা তরকারী দিয়ে সেহেরী করতেন। শাহাদাতের আগের দিন পর্যন্ত আমাদের ভাইদের রান্না করা খাবার খেয়েছেন।
লেখক-ডাঃ মোঃ ফখরুদ্দীন মানিক
সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।