রাসূল (সা:) এর জীবনাদর্শ পরিপূর্ণ অনুসরণের মাধ্যমেই একটি আদর্শ ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র কায়েম হতে পারে- আমীরে জামায়াত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিপূর্ণ অনুসরণের মাধ্যমে কেবল একটা ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র বা একটি ইসলামী সমাজ কায়েম হতে পারে। কারণ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামী জীবনের মাধ্যমে সে উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন।” আমীরে জামায়াত রাসূল সাঃ এর আগমনের পূর্বের অবস্থা তুলে ধরে বলেন, “সেই দুঃসহ বেদনাময় অবস্থার মাঝে আল্লাহ তাঁকে রাহমাতাল্লিল আলামিন হিসেবে প্রেরণ করেন।” তিনি বলেন, “রাসূলের আচরণ দ্বারা দুনিয়ার কোন মানুষ কষ্ট পায়নি। কেউ কোনদিন দুঃখ পায়নি। কোন মানুষ লেনদেন করে ঠকেনি। কেউ প্রতারণার শিকার হয়নি। যার পরিণতিতে ২৩ বছরের মধ্যেই তিনি একটি সোনালী সমাজ উপহার দিতে পেরেছিলেন। আজও যদি আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সকল নির্দেশনা রাসূলের মত করে অনুসরণ করতে পারি এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারি তাহলে স্বল্প সময়ে দেশের মানুষ সেই সোনালী সমাজ উপভোগ করতে পারবে যেখানে কোন অন্যায় থাকবে না, অবিচার থাকবে না, জুলুম থাকবে না, নিষ্পেষণ থাকবে না, নির্যাতন থাকবে না, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস থাকবে না এবং মানুষের মধ্যে ধনী-দরিদ্র উঁচু নিচু আমীর ফকির কোন ভেদাভেদ থাকবে না।” তাই সকলকে রাসূল (সা:) এর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ ভূমিকা পালনের আমীরে জামায়াত উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি আজ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-নারায়ণগঞ্জ মহানগরী শাখার উদ্যোগে সিরাতুন্নবী (সা:) উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়ালী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী – নারায়ণগঞ্জ মহানগরী আমীর মঈনুদ্দিন আহমাদের সভাপতিত্বে এবং মহানগরী সেক্রেটারি মাওলানা আবু রাকিবের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য এবং ঢাকা অঞ্চল দক্ষিণের সম্মানিত পরিচালক এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় মজলিস শূরার সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর নায়েবে আমীর মুহাম্মদ Abdul Zabbar, কেন্দ্রীয় মজলিস শূরার সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলার আমীর জনাব মমিনুল হক, ঢাকা জেলা দক্ষিণের আমীর জনাব মোঃ দেলোয়ার হোসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও নরসিংদী জেলার আমীর মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিস শূরার সদস্য ও মুন্সিগঞ্জ জেলা আমীর অধ্যাপক আ.জ.ম রুহুল কুদ্দুস, মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জনাব আবদুল্লাহ রেদোয়ান, মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারী জনাব আবু আবদুল্লাহ আল জাবের, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য এম.এইচ ফারুক, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা শাহাবুদ্দিন আহমদ,মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, নারায়ণগঞ্জ পূর্ব থানার আমীর হাফেজ মাওলানা আবু নাফিস এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও ছাত্রশিবির নারায়ণগঞ্জ মহানগর এর সভাপতি শফিউল্লাহ সহ মহানগরীর অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনাব সাইফুল আলম খান মিলন বলেন, “বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ জন ব্যক্তিকে নিয়ে “দ্যা হান্ড্রেড” বইটি একজন অমুসলিম মাইকেল এইচ. হার্ট লিখেছিলেন। সেই বইয়ের এক নম্বরে নবী মোহাম্মদ (স) এর নাম রাখার বিষয়ে লেখক কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন যে, মাত্র ২৩ বছরের সংগ্রামী জীবনে নবি মুহাম্মদ (স) এক নতুন আদর্শের মাধ্যমে পৃথিবীর গতি পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।” জনাব সাইফুল আলম খান মিলন রাসূল (স) এর উত্তম চরিত্রের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, “তিনি যুবক হিসেবে ছিলেন শ্রেষ্ঠ যুবক।স্বামী হিসেবে ছিলেন শ্রেষ্ঠ স্বামী।পিতা হিসেবে ছিলেন শ্রেষ্ঠ পিতা।দাদা হিসেবে ছিলেন শ্রেষ্ঠ দাদা।নানা হিসেবে ছিলেন শ্রেষ্ঠ নানা। সমাজপতি হিসেবে ছিলেন শ্রেষ্ঠ সমাজপতি। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ছিলেন শ্রেষ্ঠ নায়ক। মানুষ হিসেবে ছিলেন মানবশ্রেষ্ঠ।” তাই নিজেদের জীবনে রাসূলের এই উত্তম আদর্শকে ধারণ করার মাধ্যমে ইসলামী সমাজ ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখার জন্য জনাব সাইফুল আলম খান মিলন সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইসলামী শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিস শূরার সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর জনাব আবদুল জব্বার রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু ইসলাম এর পৃথিবীতে আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন “সকল মতাদর্শের উপর দ্বীনে হককে বিজয়ী করার জন্য যুগে যুগে নবী রাসূলকে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা প্রেরণ করেছেন। তাই আল্লাহ ঘোষণা করেছেন “রাসূলের জীবনী তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ’। কিন্তু আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ রাসূলের কিছু কিছু সুন্নতকে বড় করে প্রচার করে এবং শুধু সেগুলোই আমল করে রাসূলের প্রেমিক সাজতে চায় আর মানুষের গোটা জিন্দেগিকে বিজাতীয় কালচার দ্বারা পরিচালিত করে মানুষকে সেই দ্বীনে হক থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তিনি বলেন “আমরা যা অধ্যয়ন করি বা যা পড়াশোনা করি তা যদি যথাযথভাবে নিজেদের জীবনে পরিপালন করতে পারি তবে তা কিয়ামতের দিন নাজাতের পথ সহজ হতে পারে।” তিনি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু সালামের আদর্শ বাস্তবায়নে সকলকে কাংখিত ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।”
নারায়ণগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর জনাব মমিনুল হক বলেন “আদম আলাই সাল্লাম এর জান্নাতের অবস্থান ছিল নবুয়াতের প্রবেশনারী প্রিরিয়ড । দুনিয়ায় তাঁকে এবং তাঁর বংশদরদের পাঠানো হয়েছে আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে এবং সেই খেলাফতের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে মানব জাতি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে।”
নরসিংদী জেলা আমীর মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন বলেন “রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণের পূর্বে তাঁর আদর্শকে কোরআন হাদিস অধ্যায়ের মাধ্যমে আমাদের নিজের জীবনে আয়ত্ত করতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম হচ্ছে মানবতার জন্য আইডল। তাই কোরআনের সকল হুকুম আহকাম রাসূল আকরাম সাঃ এর দেখানো পদ্ধতিতে অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মানুষের মনগড়া কোন পদ্ধতি মানুষের মুক্তি দিতে পারে নাই।” তাই মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ কোরআনের যাবতীয় হুকুম রাসূল(স) এর দেখানো পদ্ধতিতে এই সমাজে বাস্তবায়নের সর্বাত্মক ভূমিকা পালনের জন্য সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।