মিরাজের ১৪ দফা নির্দেশনা কিয়ামত পর্যন্ত মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করবে- অধ্যাপক মুজিব
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, পাখির চেয়ে মানুষের মূল্য কমে গেছে। মানুষ খুন, গুম, হত্যা এখন সহজ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। এর কোন বিচার হয় না। তিনি বলেন, মানুষের আমানতের খেয়ানত করা হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। যারা রক্ষা করবে, তারাই ধ্বংস করছে। এর বিচার করবে কে? তিনি ১৪ দফা নিদেশনা বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মেরাজের বরকতপূর্ণ রাতে রাসূল (সা) উম্মতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ১৪ দফা দিকনির্দেশনা লাভ করেন। আল্লাহপাকের দেয়া ১৪ দফা উপহার কিয়ামত পর্যন্ত মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করবে।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে পবিত্র মিরাজুন্নবী (সা:) উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরীর নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরীর সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সহকারী সেক্রেটারি ড. এডভোকেট হেলাল উদ্দিন, মু. দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য আবদুস সবুর ফকির, অধ্যাপক মোকাররম হোসেন খান, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য আবদুস সালাম। উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য কামাল হোসাইন।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করার জন্য ৩টি কাজ করতে হবে। যোগ্য লোক তৈরি করতে হবে, জনমত গঠন করতে হবে, তবেই আসবে অল্লাহর সাহায্য। এর মাধ্যমে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেই কাজটিই করছে। তিনি বলেন, রাসূল (সা:) মক্কায় লোক তৈরি করেছেন, কিন্তু জনমত তৈরি হয়েছিল মদীনায়, সেখানে আল্লাহ সাহায্য আসে। দ্বীন বিজয়ী হয়। তিনি মিরাজের ১৪ দফা বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মিরাজ স্ব শরীরেই হয়েছিল। সে কথা নির্দিধায় বিশ্বাস করেছিলেন আবু বকর (রা:)। তাইতো তাকে সিদ্দিক উপাধী দেয়া হয়েছিল। এখন আবু বকর সিদ্দিক (রা:) এর মতো ঈমানদার মানুষ প্রয়োজন। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে দ্বীনকে বিজয়ী করতে হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর মতো পিতা প্রয়োজন, যিনি আল্লাহর নিদের্শে নিজের পুত্রকে কুরবাণী করতে চুড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, হযরত ইসমাইল (আ:) এর মতো পুত্র প্রয়োজন, যিনি আল্লাহর নিদের্শে কুরবাণী হতে কোন দ্বিধা করেননি।
অধ্যাপক মুজিব বলেন, আল্লাহ তায়ালা যা নিদের্শ দিয়েছেন, তার বিপরীত করা হচ্ছে। সুদকে হারাম করেছেন, তা এখন বৈধ, বরং সুদ না দিলে মামলা হয়ে যাচ্ছে। মদকে হারাম করেছেন, এখন মদ খাওয়ার লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। ২১ বছরের বেশী হলে মদ খাওয়া যাবে, এমন ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এটা জনগনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, পিতা মাতাকে সম্মান করতে বলা হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তাদের অপমানিত করা হচ্ছে। তিনি বেশী বেশী অধ্যয়নের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যাদের জ্ঞান কম তারাই এখন জাতিকে নিদের্শনা দেয়। এটা কেয়ামতের আলামত।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মেরাজ নিয়ে কোন সংশয় নেই। এর জবাব কুরআনেই দেয়া হয়েছে। মেরাজের ঘটনার পর সে সময় যখন আলোচনা হচ্ছিল, তখন হযরত আবু বকর (রা:) সাথে সাথে বিশ্বাস করেছিলেন। তিনি বলেন, রাসুল (সা:) মানুষকে আল্লাহর একাত্ববাধের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন, জান্নাতের দিকে আহবান জানিয়েছিলেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা মেরাজের মাধ্যমে তা পর্যবেক্ষণের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি ১৪ দফা নিদের্শনা বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, নিদের্শনার আলোকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তবেই সুখি সমৃদ্ধশালী, একটি নতুন পৃথিবী গড়ার সূচনা করতে পারবো।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক দিবস পালন করা হয়। সরকারীভাবে ছুটি ঘোষণা করে মেরাজের তাৎপর্য তুলে ধরার জন্য তিনি আহবান জানান।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, এখন আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আমরা যা পেয়েছি, সেই সময় আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা:) তা দেখিয়েছিলেন। তিনি বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা:) কে সাহায্য করেছিলেন। এখনও সাহায্য করবেন।