15 49.0138 8.38624 arrow 0 both 0 4000 1 0 horizontal https://bjingm.org 300 4000 - 0
সর্বশেষ সংবাদ
আমাদের প্রকাশনী

মরক্কোর ইসলামপন্থীদের বিপর্যয় ও ইসরাইলকে স্বীকৃতি

মরক্কোর সংসদ নির্বাচনে ইসলামিস্ট হিসেবে পরিচিত জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (পিজেডি) চরম পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে। দলটির আসন ১২৫টি থেকে মাত্র ১২টিতে নেমে এসেছে। ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে আটটি আসনে জয়ী হওয়ার পর এটি হলো দলটির সবচেয়ে খারাপ ফলাফল। অথচ টানা দু’মেয়াদে পিজেডির নেতৃত্বে সরকার গঠন করা হয়েছিল মরক্কোতে। নির্বাচনে এর করুণ পরাজয়ের প্রধান কারণ হলো, বাদশাহর সিদ্ধান্তের ওপর জাতীয় স্বার্থকে স্থান দিতে না পারা। রাষ্ট্রের শৃঙ্খলার স্বার্থের কথা বলে বাদশাহর নেয়া বড় বড় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে পারেনি পিজেডি, যার সাথে দলের দীর্ঘদিনের ঘোষিত নীতির সাংঘর্ষিক অবস্থা ছিল। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা, আরবি ভাষার অগ্রাধিকার প্রদানে ‘ব্যত্যয়’কে মেনে নেয়া, চিকিৎসার জন্য গাঁজা ব্যবহার মেনে নেয়া প্রভৃতি।

তিক্ত ফলে প্রাসাদ সংযোগ
এবারের নির্বাচনে ন্যাশনাল র‌্যালি অব ইন্ডিপেন্ডেন্টস (এনআরআই) পিজেডিকে প্রতিস্থাপিত করে পার্লামেন্টে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। দলটি ৩৯৫টি আসনের মধ্যে ৯৭টি জিতেছে। এনআরআই ১৯৭৮ সালে পরলোকগত প্রধানমন্ত্রী আহমেদ ওসমান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যিনি তৎকালীন বাদশাহ মরহুম দ্বিতীয় হাসানের শ্যালক ছিলেন। পার্টিতে রাজপ্রাসাদের পক্ষ থেকে উদার রাজনীতিবিদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

নির্বাচনে হারার পর পিজেডি ষড়যন্ত্র বা ভোট কেনার অভিযোগ আনলেও ২৭ শতাংশ সমর্থন ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসার পেছনে জনগণ যে তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ কমই রয়েছে। ঘোষিত ফলাফল অনুসারে, ক্ষমতাসীন পিজেডির আসন ১২৫ আসন থেকে কমে ১২টিতে নেমে আসার পাশাপাশি সরকারের আরেক অংশীদার পিএএম-এর আসন ১০২ থেকে কমে ৮২তে দাঁড়িয়েছে। ইশতিকলাল পার্টির আসন ৪৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৮ এবং আরএনআইয়ের আসন ৩৭ থেকে বেড়ে ৯৭তে উন্নীত হয়েছে। অন্য দলগুলোর মধ্যে এমপির আসন ২৭ থেকে ২৬, ইউএসএফপিএর আসন ২০ থেকে বেড়ে ৩৫, পিপিএস-এর আসন ১২ থেকে বেড়ে ২০, ইউসি-এর আসন ১৯ থেকে কমে ১৮তে নেমে এসেছে। দলের এই আসন কম বেশি হওয়ার মধ্যে, পিজেডির মতো বিপর্যয় অন্য কোনো দলের ক্ষেত্রে হয়নি।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ২০১১ সাল থেকে সবচেয়ে বড় দল হওয়া সত্তে¡ও, পিজেডি তার আদর্শবিরোধী আইন বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এবার ভোটের নতুন নিয়ম করা হয়েছে পিজেডির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে লক্ষ্য করে। রাজপ্রাসাদ পিজেডিকে রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে অনেকখানি বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। ইসলামিস্ট দলের এই ক্ষতি হয়তো পূরণ হতে পারে। তবে জনগণের আস্থা অর্জনে যে বিপর্যয় নেমেছে তা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলো পটভূমি নির্বিশেষে দেশ পরিচালনার জন্য তাদের ইশতেহার এবং নীতি ঘোষণা করে। সে অনুযায়ী ভোটারদের দ্বারা তারা নির্বাচিত হয়। তবে আরব বিশ্বে ধর্মও একটি বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। অধিকাংশ আরব ধর্ম বিশ্বাসের ক্ষেত্রে মুসলিম।

আলজিয়ার্স থেকে রাবাত
আলজেরীয়রা যখন ১৯৮৮ সালে খাদ্যঘাটতি এবং একটি ব্যর্থ অর্থনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল, তখন শাসক দল ক্ষমতায় তার একচেটিয়াত্ব ত্যাগ করতে এবং একটি নতুন সংবিধানের অধীনে বহুদলীয় ব্যবস্থার পথ খুলে দিতে বাধ্য হয়েছিল। সংসদ ও পৌরসভা নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর অনুমতি দেয়া আরব বিশ্বের প্রথম দেশ ছিল সেটি।

১৯৬২ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম উন্মুক্ত নির্বাচনে সেবার ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট (এফআইএস) ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টকে (এফএলএন) পরাজিত করে। এফআইএসকে সরকার গঠনের অনুমতি দেয়ার পরিবর্তে, এফএলএন পরাজয় মানতে অস্বীকার এবং সেনাবাহিনীর সমর্থনে ইসলামপন্থী এবং আলজেরিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শুরু করে। পশ্চিমা গণমাধ্যম তখন ‘মৌলবাদ’কে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে ইস্যু করে নিয়েছিল। এফআইএস তার নীতিতে মধ্যপন্থী হলেও দলটিকে একটি ‘মৌলবাদী’ গোষ্ঠী হিসেবে নিউ ইয়র্ক টাইমস উল্লেখ করে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস তখন সতর্ক করে যে, ‘আলজেরিয়ায় মৌলবাদীদের নির্বাচনী সাফল্য সম্ভবত মিসর, তিউনিসিয়া, মরক্কো, জর্দান, তুরস্ক এবং সুদানে মুসলিম আন্দোলনকে উৎসাহিত করবে, যেখানে শক্তিশালী মুসলিম অধিবাসীরা রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।’ এভাবে, আলজেরিয়ার সামরিক বাহিনী জনগণের গণতান্ত্রিক পছন্দকে উপেক্ষা করে, পশ্চিমা সমর্থিত স্বৈরশাসনের পথ সুগম করেছে।

২০০৬ সালে অধিকৃত ফিলিস্তিনে হামাস যখন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল তখনো একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। তখন থেকে পশ্চিমা এবং এই অঞ্চলের ক্ষমতাসীনদের সহায়তা এবং প্ররোচনায় গাজায় হামাসের ওপর ইসরাইলি অবরোধ আরোপ করা হয়। ২০০৯ সালে ম্যান্ডেট শেষ হয়ে যাওয়া, মাহমুদ আব্বাস পরিচালিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হামাসের ইসলামপন্থীদের ওপর ক্ষমতা বজায় রাখতে ইসরাইল ও পশ্চিমের সমর্থন দেয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে।

২০১১ সাল থেকে আরব বসন্তে, তিউনিসিয়া, লিবিয়া এবং মিসরে অত্যাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের বিদ্রোহ দেখা যায়। এটি সিরিয়া ও ইয়েমেনকে গৃহযুদ্ধের দিকে পরিচালিত করে আর উপসাগরীয় শাসকদের উদ্বিগ্ন করে তুলে। যা তাদের নিজ দেশে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে শুধু দমনপীড়নই করেনি, বরং সমগ্র অঞ্চলে প্রতি-বিপ্লবকে অর্থায়নও করে গেছে। এ সময়টাতে মরক্কোতে, বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ সাংবিধানিক সংস্কারের ঘোষণা দেন যা দৃশ্যত তার নিজের একচ্ছত্র ক্ষমতাকে হ্রাস করে এবং ক্ষমতার কিছু অংশ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়।

এরপর ২০১২ সালে, মরক্কোর জনগণ মুক্তভাবে ভোট দেয় এবং পিজেডি সর্বাধিক আসন জিতে সরকার গঠন করে। ইসলামপন্থী দলটি বাদশাহর ঝুলে থাকা টোপ পুরোটাই গিলে ফেলে।

উইলসন সেন্টারের জন্য ২০১৫ সালে আবদেস সালাম মাগরাবি লিখেছিলেন, “পিজেডির বিজয় সত্তে¡ও, রাজতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা এবং অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্কগুলো … শক্তিশালী এবং বিস্তৃত ছিল সব সময়। ‘প্রকৃতপক্ষে’ রাজতন্ত্র সংবেদনশীল পদগুলোর জন্য মন্ত্রিসভার সদস্য ঠিক করতে এবং ভেটো দেয়ার ক্ষেত্রে পর্দার অন্তরালে ভূমিকা পালন করেছিল।”

মাগরাবি বলেন, ‘নতুন সরকার গঠনের আগে বাদশাহ মোহাম্মদ তার ক্ষমতাকে সংহত করেছিলেন যাতে নিশ্চিত হয়ে যায় যে, নতুন সরকার কোনো বাস্তব ক্ষমতা পাবে না। তিনি আগের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিজের পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন, যাদের উল্লেখযোগ্য নির্বাহী ক্ষমতা এবং প্রভাব থাকে।’

আবদুল্লাহ বেনকিরানের নেতৃত্বাধীন পিজেডি ২০১২ থেকে জোট সরকার সরকার চালায়। এরপর ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সময়ও দলটি সংস্কারের জন্য দেয়া প্রতিশ্রুতির খুব কমই অর্জন করেছিল। ২০১৬ সালে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে, বাদশাহ বেনকিরানকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা শুরু করেন।

২০১৬ সালে কার্নেগি সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত একটি নিবন্ধে ইন্তিসার ফকির মন্তব্য করেন, ‘‘দলের ভিতরে এবং বাইরে বেনকিরানের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং নির্বাচনে পিজেডির ধারাবাহিক সাফল্য দল এবং তার নেতাকে রাজপ্রাসাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।’’ মরক্কোতে দ্বিতীয় সরকার গঠনের জন্য বেনকিরানের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কাজ করেন বাদশাহ। জোট সরকার গঠনের জন্য বেনকিরানের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করার প্রাসাদের প্রচেষ্টা চলতে থাকে ১৫ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত, যখন ‘বাদশাহ বেনকিরানকে পদত্যাগ করতে এবং অন্য পিজেডি নেতাকে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিতে বলেন।’

তখন সরকারের নেতৃত্বে আসেন পিজেডি মহাসচিব সাদ্দেদিন ওসমানি। সরকারে নেতৃত্ব পরিবর্তন ছাড়াও বাদশাহ ইসলামপন্থীদের আরো দুর্বল করতে নানা পদক্ষেপ নিতে থাকেন। আল-হোসাইমাতে অস্থিরতাকে কাজে লাগানো হয় যেখানে ২০১৭ সালের অক্টোবরে রিফ অঞ্চলে স্থানীয় মাছ বিক্রেতার মৃত্যুর পর বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। লোকটি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাজেয়াপ্ত মাছ উদ্ধার করার সময় একটি আবর্জনার গাড়িতে পিষ্ট হয়েছিলেন। সরকার বিক্ষোভকারীদের আটক করে, আর বাদশাহ তাদের ক্ষমা করে দেন। এরপর তিনি রিফের আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় অগ্রগতি না হওয়ার কথা বলে তিনজন মন্ত্রী ও অন্য কিছু কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেন।

এ সময় বাদশাহ দেশের অনেক সমস্যা সমাধানের জন্য ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’ ঘটানোর কথা উল্লেখ করেন। মাগরাবি ব্যাখ্যা করেন, ‘‘এই পদক্ষেপ রাজনীতির সালিশ হিসেবে রাজতন্ত্রের ভাবমূর্তিকে শক্তিশালী করে এবং (পিজেডি) সরকারের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে। এটি আগের সরকারের রেকর্ড এবং তার সাফল্যের বিবরণকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং বাদশাহর প্রাধান্যকে পুনরায় নিশ্চিত করেছে।’’

মূলে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া
যে প্রধান সমস্যাটি এখন মরক্কোর ভোটারদের পিজেডির বিরুদ্ধে নিয়ে গেছে তা হলো, গত বছর ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ। কয়েক দশক ধরে ইসরাইলের সাথে মরক্কোর একটি শক্তিশালী সম্পর্ক ছিল। বাদশাহ পিজেডির বিরুদ্ধে তার যুদ্ধে এটিকে কাজে লাগিয়েছিলেন। মরক্কোতে, অন্য রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করা এবং বৈদেশিক সম্পর্ক অনুসরণ করা রাজপ্রাসাদের এখতিয়ার; এ ধরনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো ভূমিকা নেই। পিজেডি এই ব্যবস্থাকে মেনে নিয়েই সংসদে প্রবেশ করেছিল যে, দলটি বাদশাহকে কোনোভাবেই চ্যালেঞ্জ করবে না, যাতে দেশকে স্থিতিশীল এবং বিকশিত করা যায়।

যথারীতি রাজপ্রাসাদ থেকে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দান ও সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ব্যাপারে ডিক্রি জারি করা হয়। আর এটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দায়িত্ব পড়ে সরকারের ওপর। ১৯৬৭ সালে দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবসময় ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে এসেছে মুসলিম ব্রাদারহুড। আর দলের এই অবস্থান ব্রাদারহুড বা পিজেডিকে সরকারে যেতে সহায়তা করে। রাজপ্রাসাদের ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার ডিক্রি জারির পর পিজেডি সরকার নীতিগত অবস্থান থেকে কোনো দৃশ্যমান বিরোধিতা করেনি। বরং চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ইসরাইলের সাথে যৌথ ইশতেহার প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতার সাথে সরাসরি যুক্ত থাকেন প্রধানমন্ত্রী। এতে করে পিজেডির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও পিজেডি বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে। এটি শেষ পর্যন্ত পিজেডির সাথে ইসলামিক ভোটারদের মধ্যে একটি ব্যবধান তৈরি করে। দেশের প্রসিদ্ধ ইসলামিক স্কলারদের অনেকে পিজেডি থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন। স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নির্বাচনে হারতে শুরু করে পিজেডি। এটিকে দলের জন্য ‘নকআউট ধাক্কা’ বলে মনে হয়েছিল।

মরক্কোর ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়নের মহাসচিব আবদিল্লাহ এল-হালাউতি বলেন, ‘ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রত্যাখ্যান এবং চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে না চাইলে তা বাদশাহকে ক্ষুব্ধ করবে এবং দেশকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে দেবে। আর প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের গুরুতর রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণতিও দেখতে হতো।’ তিনি যোগ করেন, ‘পিজেডি সবচেয়ে ক্ষতিকারক বিকল্পটি বেছে নিয়েছে।’

মরক্কোর মানুষ বাদশাহর ভূমিকা সম্পর্কে ততটা অবগত ছিল না। তারা স্বাভাবিকীকরণের পাপের জন্য পিজেডিকে দায়ী করে। এমনকি পিজেডির কর্মকর্তারা এবং সদস্যরা স্বাভাবিকীকরণের লজ্জা থেকে নিজেদের দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন। সিদি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক আইন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আমিন আল-সাইদ আল জাজিরাকে বলেন, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে জড়িত থাকার জন্য মরক্কোর জনগণ সংসদ নির্বাচনে পিজেডিকে ‘শাস্তি’ দিয়েছে।

বাদশাহ মোহাম্মদ হয়তো ইসলামপন্থী পিজেডির পরিবর্তে প্রাসাদ প্রিয় এনআরআই জিতিয়ে আনতে সফল হয়েছেন, কিন্তু জনগণের ইচ্ছানুযায়ী মরক্কোর উন্নতি যে হবে এমনটি মনে হয় না। সব ক্ষমতাসীন আরব শাসনের মতো, মরক্কোর রাজতন্ত্রও আলাদা কিছু হয়তো নয়। এ ধরনের শাসনব্যবস্থাকে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো তাদের জনগণকে মৌলিক জীবনযাপনের প্রয়োজনে বিভ্রান্ত রাখার জন্য দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে, যাতে তারা প্রতিবাদী হয়ে উঠতে না পারে।

ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো সর্বদা স্ট্যান্ডবাই থাকে, শাসকরা এটি জানেন। পশ্চিমের ওপর তাদের নির্ভরতা এতটাই বড় যে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানকে বলতে পেরেছিলেন যে, আমেরিকান সুরক্ষা ছাড়া তার সিংহাসন পাঁচ মিনিটের বেশি টিকে থাকবে না। এটা যুক্তিযুক্তভাবে পশ্চিমা হস্তক্ষেপের এমন একটি স্তর যা জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে অন্য যেকোনো কিছুর মতো পরাজিত করেছে।

ঘুরে দাঁড়াতে পারবে পিজেডি?
প্রশ্ন হলো, মরক্কোর ইসলামিস্টরা এই বিপর্যয়ের পর কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন? এর মধ্যে দলটির বর্তমান নেতারা নির্বাচনী বিপর্যয়ের দায় নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। মরক্কোর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতা আবদিল্লাহ বেনকিরান ঘোষণা করেছেন যে, ‘‘ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে দলের একটি নির্দিষ্ট অবস্থান আছে এবং চাপের মধ্যে এটি পরিবর্তন করা হবে না এবং ইসরাইলের সাথে সমন্বয় করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না পিজেডি।’’
বেনকিরান এক ফেসবুক লাইভ বক্তৃতায় আরো বলেন, ‘‘নীতি ও মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার ভিত্তিতেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি যা অর্জন করেছে, তা ছিল আন্তরিকতা ও অবিচলতার মাধ্যমে, নীতির সাথে আপস করার মাধ্যমে নয়; বরং সৎ আচরণ, উত্তম আচরণ এবং বোঝাপড়া ও মধ্যপন্থার জন্য প্রশংসিত হয়েছে, আত্মসমর্পণের মাধ্যমে নয়।’’

বেনকিরান উল্লেখ করেন, ‘‘ইসরাইলের সাথে স্বাভাবিকীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাদশাহ, জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি নয়।” বেনকিরান সম্ভবত দলের নেতৃত্বে ফিরে আসবেন। দলকে পুনঃসংগঠিত করতে এবং নীতির নববিন্যাস আর জন আস্থা ফেরাতে পারলে পিজেডির জন্য হারানো অবস্থান পুনরুদ্ধার সম্ভব হতে পারে। তবে নীতির ব্যাপারে আপসহীন থাকতে হবে। কৌশলী ধরনের আপসকামিতা অব্যাহত থাকলে খাদ থেকে বেরিয়ে নতুন যাত্রা সহজ হবে বলে মনে হয় না।

 

লেখক- মাসুম খলিলী, আন্তজার্তিক রাজনীতি বিশ্লেষক