15 49.0138 8.38624 arrow 0 both 0 4000 1 0 horizontal https://bjingm.org 300 4000 - 0

বৈরুত বিস্ফোরণ:ষড়ষন্ত্র নাকি দুর্ঘটনা

লেবাননের বোমাটা সাধারণ কোনো বোমা ছিল না। সাধারণত ক্লাস্টার বোমার ক্ষেত্রে এরকম বিস্ফোরন হয়। অথবা পারমানবিক বোমার ছোট খাটো সংস্করণও হতে পারে। ব্রোকেন অ্যারো নামক মুভিতে পারমানবিক বোমা বিস্ফোরনের একটি দৃশ্য আছে। গুগলে গিয়ে দেখতে পারেন। সেই বিস্ফোরনের সাথেও বৈরুত বিস্ফোরনের মিল পাওয়া যায়।

বন্দরে বোমাটি বিস্ফোরণ হয়েছে। দেখা যাচ্ছে বন্দর থেকে শহরের দিকে অনেকটা এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। আবার বিপরীত দিক দিয়ে দেখলে সমুদ্রেও একটি বিস্ফোরন ঘটেছে এবং সেখানে পানির উচ্চতা ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল বলেও একটি ভিডিওতে দেখা যায়।

লেবাননকে এক সময় এশিয়ার সুইজারল্যান্ড বলা হতো। রাজধানী বৈরুতকে বলা হতো প্রাচ্যের প্যারিস। প্রাকৃতিকভাবেও দেশটি খুবই সুন্দর। যদিও দেশটিতে গৃহযুদ্ধ লেগেছিল দীর্ঘদিন। সিরিয়া আর ইজরাইলের সেনাবাহিনীও দেশটিতে অনেকদিন মোতায়েন ছিল। সর্বশেষ ২০০০ সালে ইজরাইল আর ২০০৫ সালে সিরিয়া লেবানন থেকে তাদের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়।

লেবানন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ, ভৌগলিকভাবে পশ্চিম এশিয়ায় দেশটি পড়েছে। আমরা অনেকেই সাধারণভাবে লেবাননকে মুসলিম দেশ মনে করলেও মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতেই আগাগোড়াই খৃষ্টান জনসংখ্যার আধিক্য ছিল। বর্তমানেও দেশটির প্রায় ৩৮ শতাংশ মানুষ খৃষ্টান। যদিও তাদের নাম মুসলিমদের মতোই আবার মুখের ভাষাও আরবি। সার্বিকভাবে, লেবাননের সংস্কৃতিতে খৃষ্টধর্মের ব্যাপক প্রভাবও আছে। দেশজুড়ে অসংখ্য গীর্জা আছে- যার অনেকগুলোই কয়েকশ বছরের পুরনো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্স আর বৃটেনরা তাদের পরিকল্পনা মাফিক মধ্যপ্রাচ্যকে যেভাবে কাঁটাছেড়া করে, সেখানে অন্য অনেক দেশের পতাকা ও মানচিত্র বৃটিশরা নির্ধারণ করলেও সিরিয়া আর লেবাননের দায়িত্ব পড়ে যায় ফ্রান্সের হাতে। ফ্রান্স ভৌগলিক কারণে নয় বরং অনেকটা সীমানা অংকন করে লেবাননকে রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। লেবাননকে বাড়তি গুরুত্ব দেয়ার কারণও ছিল এই খৃষ্টান জনসংখ্যা। মধ্যপ্রাচ্যে অন্তত একটি দেশে খৃস্টানরা ভালোভাবে থাকুক, এই অঞ্চলে খৃস্টানদের প্রতিনিধিত্ব থাকুক- এটা বৃটিশ ও ফরাসী- উভয় শক্তিই চেয়েছিল।

গতকালের ঘটনায় আসি। অনেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির মামলার রায়ের সাথে এই বিস্ফোরণকে মেলাতে চাইছেন। জানি না- হারিরির রায় আদৌ এত গুরুত্বপূর্ণ কি না। ইজরাইলের আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করাটাও শোভনীয় নয়। চোরের মন পুলিশ পুলিশ বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পশ্চিমা মিডিয়াও একটিবারের জন্য আইএস বা লেবানেরর হিজবুল্লাহকে নিয়ে কিছু বলেছে বলে চোখে পড়েনি।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় বলছে, কারো ষড়যন্ত্রের জন্য নয়, বন্দরের একটি ওয়্যারহাউজে মজুদ রাখা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের থেকে এই বিস্ফোরণটি ঘটেছে। আল্লাহ ভালো জানেন। এটাই সত্যি হতে পারে, আবার কাউকে দায়মুক্ত করার জন্যেও সরকার এমনটা বলে থাকতে পারে।

এই পর্যন্ত ৭৮জন মানুষ নিহত এবং ৪ হাজার লোক আহত হওয়ার কথা বলছে লেবানন সরকার। কিন্তু বৈরুতের বিরাট অংশই আরো সিরিয়ার ইদলিবের মতো ধ্বংসস্তুুপে পরিণত হয়েছে। গোটা শহরে বৈদ্যুতিক সংযোগও নেই। বাসাবাড়ির নীচেও অসংখ্য মানুষ পড়ে থাকতে পারে।

আল্লাহ লেবাননসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে হেফাজত করুন। মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইজরাইলের হাত থেকে এই পবিত্র ভূখন্ডগুলোকে হেফাজত করুন। আমিন।

লেখক- আলী আহমেদ মাবরুর