বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসাবে গড়ার মহান স্বপ্ন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী কাজ করছে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “মানব জীবনের এমন কোনো সমস্যা নেই যার সমাধান ইসলামে দেয়া হয়নি। মানবজাতির জন্য সব ধরনের সমস্যার সমাধান হলো আল কুরআন। আমাদের প্রত্যেককে পবিত্র কুরআনের বিধান অনুযায়ী নিজেদের জীবনকে সাজাতে হবে। এজন্য আমাদের প্রত্যেককে প্রতিদিন বেশি বেশি কুরআন, হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করা দরকার। একই সাথে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে প্রতিটি ঘরে ঘরে। তাহলেই ইসলামের বিজয় অনিবার্য হয়ে উঠবে।”
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত থানা ও ওয়ার্ড দায়িত্বশীল শিক্ষাশিবির’২৪ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যথাক্রমে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আবদুল হালিম ও মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “দায়িত্বশীলদের অনুপ্রেরণা প্রদান করে টিমস্পিরিটের মাধ্যমে সকলকে নিয়ে সংগঠনকে আরো মজবুত করতে হবে। সংগঠনের থানা ও ওয়ার্ড অর্থাৎ স্থানীয় কার্যক্রম যত বেশি শক্তিশালী হবে, সামগ্রিকভাবে মহানগরী ও কেন্দ্রীয় সংগঠন ততো সুদৃঢ় হবে। যেখানে যত বেশি বিপর্যয় এসেছে সেখানে দ্বীনের দাওয়াত আরো ব্যাপকতর হয়েছে। ফলে কোনো ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক বাঁধা দেখে ভয় পাওয়া বা হতাশ হওয়া অথবা কাজ কমিয়ে দেয়া ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য উচিৎ নয়।”
তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের দুর্বল অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কোন ভয়-ভীতির তোয়াক্কা না করে সংগঠনের কাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করতে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আমাদের দাওয়াত হচ্ছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে এক রব এবং রাসূলকে (সা) আমাদের নেতা মানার দাওয়াত। কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে বাংলাদেশে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মহান স্বপ্ন নিয়ে জামায়াত কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ আমরা এই কাজে একদিন সফল হব।”
তিনি আরো বলেন, “সমাজের কেবল নির্দিষ্ট মানুষের জন্য আমাদের দাওয়াত নয়। মনে রাখতে হবে আমাদের ওপরে সব মানুষের অধিকার ও হক রয়েছে। এই দাওয়াত পৌঁছে দেয়া মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আমানত। সে লক্ষ্যে প্রতিটি দায়িত্বশীলকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। এমনকি সবসময় যারা আমাদের বিরোধিতা করছেন, আমরা তাদেরকে আমাদের বন্ধু ও ভাই-বোনের মতো মনে করি। তাদের হেদায়েতের জন্য আমরা মহান রবের কাছে দোয়া অব্যাহত রাখবো ইনশাআল্লাহ ।”
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “যোগ্যতা যাদের আছে আল্লাহ তায়ালা নেতৃত্ব তাদের হাতেই দেন। এটাই আল্লাহর বিধান। নিজেদেরকে জনগণের খেদমতের জন্য তৈরি করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘সেই ব্যক্তি সফল হবে, যে নিজেকে তাজকিয়া করতে পারলো, সংশোধন করতে পারলো।’ সংশোধনের এই ধারায়ই আমরা আছি। আজীবন থাকবো। মঞ্জিলে পৌঁছতে হলে প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে।”
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, “সর্বস্তরে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। জনগণের সেবায় জনগণের দোড়গোরায় পৌঁছে যেতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আমাদের যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সেই পরিবর্তনের জন্য আমাদের যেমন মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে, তেমনিভাবে মাঠে ভূমিকা রাখার জন্য এগিয়ে যেতে হবে। জাতির কল্যাণে আমরা যেন যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারি আল্লাহ তা’য়ালা যেন আমাদের সেই তৌফিক দান করেন।”
মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে নিজেদেরকে যোগ্যতার বিকাশ সাধন করে মানসম্পন্ন দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে দুনিয়ার পরিবর্তন সাধন করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। একইসাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের যাবতীয় কর্মতৎপরতা ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রত্যেক এলাকায় ইউনিট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানব সেবার কাজ তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে জনাব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, “তৃনমূল পর্যায়ে আমাদেরকে সংগঠন মজবুতির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখবেন সংগঠন মজবুত থাকলে যে কোন সময়ে যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব। পাশাপাশি এই সেশনে সকল বিভাগের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সকল নেতৃবৃন্দকে সচেষ্ট হতে হবে।”
শিক্ষাশিবিরে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মহানগরী এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এফ এম ইউনুস ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, মহানগরী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এস এম লুৎফুর রহমান প্রমুখ।