নতুন শিক্ষাক্রমের চূড়ান্ত রূপরেখায় ধর্মশিক্ষা বাদ দেয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর
প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের চূড়ান্ত রূপরেখায় ধর্মশিক্ষা বাদ দেয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম ২৩ জুন এক বিবৃতি প্রদান করেছেনঃ-
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। এ দেশের সকল ধর্মের মানুষ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করে এবং তারা ধর্মীয় শিক্ষাকে মনে-প্রাণে ধারণ করে। তাছাড়া সকল ধর্মেই শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাই শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে শৈশবকালই ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের উপযুক্ত সময়। শিশু বয়সেই তাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, দেশের জনগণের এটা বুঝতে বাকী নেই যে, সরকার ধর্মবিমুখ ও নৈতিকতাহীন নাস্তিক্যবাদী নাগরিক তৈরির জন্যই প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা বাদ দিয়ে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সরকার এ দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে চায়। সরকার ধর্মহীন শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠান চালু করে মানুষকে অধার্মিক, অনৈতিক ও পাপাচারে নিমজ্জিত নাগরিক তৈরি করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে ধর্মহীন শিক্ষা কোনো শিক্ষাই নয়। এটা হল কুশিক্ষা, যা মানুষকে ধীরে ধীরে নৈতিকতা বিবর্জিত অন্যায়ের দিকে নিয়ে যাবে। ফলে দেশ সুদ-ঘুষ, মদ-জুয়া, জিনা-ব্যাভিচার, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, দুর্র্নীতি ও পাপাচারে ভরে যাবে। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে। সরকারের এই আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কোনোক্রমেই মেনে নিবে না। এর দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। আমরা সরকারের এই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ‘ইসলামী শিক্ষা’ বাদ দেয়া জাতীয় শিক্ষানীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি এটি নির্দিষ্ট ধর্মের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণও বটে। একদিকে সরকার ইসলামী শিক্ষা বাদ দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে, অপরদিকে নাচ-গান ইত্যাদির মাধ্যমে যৌন শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। এটা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাসের পরিপন্থী। বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। এদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ কথাটি লেখা আছে। এসব বিবেচনায় পাঠ্য বই থেকে ইসলাম শিক্ষা বাদ দেয়া একবারেই অযৌক্তিক, বৈপরীত্য ও হাস্যকর ব্যাপার। এটি সংবিধান অবমাননারও শামিল।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা না পেলে মানুষ অন্তরে আল্লাহভীতি পোষণ করে না। ফলে তারা আমানতের খিয়ানত করে, মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং ঘুষ-দুর্নীতি, চাঁদাবাজা ও টেন্ডারবাজির সাথে জড়িয়ে পড়ে। অসৎ নাগরিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বিরাট বাধা বা অন্তরায়। ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে শিশুরা দৈহিক, মানসিক ও আত্মিক পূর্ণ বিকাশের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে এবং তারা উৎপাদনশীল ও দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত হবে, যা একটি দেশের উন্নতি-অগ্রগতির জন্য খুবই প্রয়োজন। তাছাড়া ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, পরমত সহিষ্ণুতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ শেখায়। ফলশ্রæতিতে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি বিদ্যমান থাকে এবং তারা নিজ নিজ ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে এবং দেশ ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে।
তিনি আরো বলেন, সকল ধর্মেই ধর্মীয় শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। ইসলামে ধর্মীয় শিক্ষাকে ফরজ করা হয়েছে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত, ৩৪)। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলা হয়েছে ‘পড়! তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (সুরা আলাক)। মহান রব এই আয়াতে জ্ঞান অর্জনের কথা বলেছেন। যে জ্ঞান অর্জন করলে মহান আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে জানা যাবে। ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা জাতিকে উপহার দিতে পারে একদল সৎ, যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব। ইতিহাসের সব যুগেই এক শ্রেণির লোকের সন্ধান পাওয়া যায় যারা দেশ, সমাজ ও জাতিকে পরিচালনা করে। আজ সমাজ পরিবর্তনে প্রয়োজন সঠিক ও যোগ্য নেতৃত্ব। আর এই নেতৃত্বের মডেল হলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ বলেন, রাসূলের জীবনেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ’ (সুরা আহযাব- ২১)।
বর্তমান তরুণ প্রজন্ম বেকারত্ব, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আয়-বৈষম্য ও পর্নোগ্রাফির বিষাক্ত ছোবলে দিশেহারা। এমতাবস্থায় কোমলমতি শিশুদের ন্যূনতম ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান সময়ের অনিবার্য দাবি। তাই আমরা প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ‘ইসলামী শিক্ষা’ বাধ্যতামূলক রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সেই সাথে ধর্মবিবর্জিত শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।