15 49.0138 8.38624 arrow 0 both 0 4000 1 0 horizontal https://bjingm.org 300 4000 - 0
সর্বশেষ সংবাদ
আমাদের প্রকাশনী

দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি ও সাধারণ মানুষের কষ্টক্লিষ্ট জীবন-মুহাম্মদ আবদুল জব্বার

বিশ্ব বাজারে বা দেশের বিশেষ কোন পণ্য উৎপাদান কমে গেলে, আমদানীতে কোন জট বাঁধলে সব সময় দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়ে এটি চিরায়িত রেওয়েজ। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে একটি জিনিস লক্ষ্য করলাম জীবন নির্বাহের প্রায় সব কিছুর দাম বেড়েই চলছে। এতে বাংলাদেশ সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয়না। এর মধ্যে নতুন করে ডিজেল, অকটেন, পেট্রোলের মূল্য বেড়ে এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।
এহেন অবস্থায় নিন্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জীবন বাঁচানো কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠেছে। যদিওবা সরকার দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে আছে বলে দাবী করেছে। তাদের তথ্য মতে মাথা পিঁছু আয় ২৮২৪ ডলার, জিডিপি ৭.২৫%। ক’দিন আগে মৎস ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী বলছেন দেশের মানুষ চাইলে এখন তিনবেলা মাংস খেতে পারে। আবার খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক সাহেব মানুষ বেশী ভাত খাবার কারণে চালের দাম বেড়েছে বলে দাবী করছেন। তথ্য মন্ত্রী বলেছেন কুরবানীর সময় কুরবানীর গোস্ত নেয়ার লোক তিনি খুঁজে পাননি…..!
সাধারণ মানুষ দেশের ক্ষমতাসীনদের কথার সাথে বাস্তবতার সাথে কোন মিল খুঁজে পায়না। বরং প্রতিনিয়ত জীবন ধারণের ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে তারা জীবনপাত করছেন। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে, বিদ্যুতের ঘোষিত লোড সেডিং। গ্রামের আত্নীয় স্বজন এবং নিয়মিত পত্রিকার রিপোর্ট মতো আগে গ্রামে গড়ে ৪/৫ ঘন্টা থাকতোনা এখন আরো নতুন করে ২/৩ ঘন্টা যুক্ত হলো…..। এসরকারের উন্নয়নের গালগল্প এখন দেশের মানুষ অসার মনে করে।
অনেকে নির্দৃষ্ট কিছু পণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে এবং সরকারীভাবে ঘোষিত তাই মূল্য বেড়েছে তা বলতে পারেন। যেমন…ভোজ্য তেল, জ্বালানী তেল,এলপি গ্যাস, বিদ্যুত, পানি ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে তেলের কারণে প্রায় প্রকৃয়াজাত খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে ধরে নিলাম, কিন্তু অন্যান্য পণ্যের বা প্রয়োজনের মূল্যের দাম কেন বৃদ্ধি কী পেলো?
বাজার কারতে গিয়ে/প্রয়োজন নির্বাহ করতে গিয়ে কিভাবে ব্যয় বাড়ছে আমরা একটু মিলিয়ে নিতে পারি।
যেমনঃ ১।চাল২।ডাল(সব ধরনের ডাল)। ৩।শাক-সবজি ৪।মাছ ও গোস্ত (গরু/মুরগী/ছাগল/মহিশ)। ৫।বস্ত্র (পরিধানের) ৬। চিকিৎসা ও ঔষধ ৭। মশলা জাতীয় দ্রব্য ৮।গাড়ী ভাড়া ৯।বাড়ী ভাড়া ১০। শিক্ষা উপকরণ ১১। সন্তানের স্কুলের বেতন ১২। শিক্ষকের কোচিং ফি
১৪। নির্মান সামগ্রী
★ শাক-সবজি গরীবের শেষ ভরসা। গত দুই/এক বছরে প্রতিটি জিনিসের দাম কেজীতে ৩০/৪০ টাকা করে বেড়েছে। গত সাপ্তাহে রাজধানীর একবাজারে শাকসবজি কিনতে গেলাম। এক টুকরো কোমড়ার (১কেজী) দাম ৫০ টাকা। যা গত ৫/৬ আগেও ২০/২৫ টাকায় কিনেছি। অন্যান্য শাক সবজির কথা নাই বল্লাম।
★চাল ও আটার দাম ৬মাসে অনেক বেড়েছে। যা ছাড়া আমাদের চলেইনা। চাল কেজী প্রতি প্রায় দশ টাকা। প্যাকেট জাত আটা কেজীতে প্রায় ১৯ টাকা। দুধ,চিনি, মরিচ,পেয়াজ, রসুন ও মশলা জাতীয় আইটেমের দামও বেড়েছে বেশ।
★ মাছ-গোস্তের দাম বেড়েছে অনেকাংশে। রাজাধানীর শাহাজানপুরে এক গরুর গোস্তের দোকানে বছরের শুরুতে কেজী প্রতি ৬৫০ টাকা মূল্য ছিল, আর এখন ৭৫০ টাকা। একই ভাবে এক বছরের ব্যবধানে বয়লার ও পাকিস্তানী মুরগীর কেজীতে মূল্য বেড়েছে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। একজন এগ্রো মালিকের সাথে কথা বলে জানলাম যে তারা ফিড (মুরগীর জন্য প্রকৃয়াজাত খাবার) বানানোর জন্য গতবছর যে ভূট্টা ক্রয় করেছিল ২০-২২ টাকায় এবছর তা ক্রয় করেছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছেনা। স্বাবাভিক ভাবেই তাই এসবের মূল্য হুহু করে বেড়েই চলছে। ছাগল, মহিষের গোস্ত বা দেশী মুরগীর দামের ব্যাপারে নাই বল্লাম। নিত্য প্রয়োজনীয় মূল্য বৃদ্ধির এই দায় কার?
★ বছর খানেক আগেও বাজারে বাজার করতে গেলে ২/১ জন ভিক্ষুক সাহায্য চাইতেন। আর এখন বাজার করতে দাড়ালে সামনে পিছনে ডানে বায়ে সাহায্য প্রার্থীর সংখ্যা অন্তত ৮/১০ জনে উন্নিত হয়েছে। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয় দেশটা মহাসঙ্কটের দিকে চলছে। যদিওবা সরকার দেশের মানুষকে উন্নয়নের ফুল ঝুড়ি শুনিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে।
★নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে, সাধারণ জনগণ প্রতিদিনের খাদ্য সামগ্রী কিনতেই প্রাণ যেন উষ্ঠাগত। তাই সরকার সারারণ মানুষের কথা চিন্তা করে টিসিবির বুথ বাড়িয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে ৮/১০ বছর আগেও টিসিবির পন্য কিনতে ১০/১৫ জনের বেশী লোক দেখা যেতোনা। আর এখন সর্বত্র টিসিবির পন্য কিনতে শতশত লোক দীর্ঘ লাইন ধরছে। একটু সাশ্রয় মূল্যে ক্রয়ের জন্য। যে পরিবারে সদস্যরা টিসিবি পণ্য লাইনে দাড়িয়ে সংগ্রহ করতে হবে স্বপ্নেও ভাবেনি তারাও এখন ঘন্টটার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে থাকেন। এসব কিসের আলামত? দেশ কি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে বা শ্রীলঙ্কার পথে হাঁটছে?
★ রাজধানীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে গত মে মাসে বাচ্চার চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের সিরায়াল নিলাম। ডাক্তারের ফি ১২০০/ টাকা, যা গতবছর ছিল ৮০০/ টাকা। টেস্ট বা ঔষধের কথা বা নাই বল্লাম। হয়ত অনেকে বলবেন, সরকারী হাসপাতালে চাকিৎসা করালেতো চিকিৎসা ব্যয় কমে যায়। তাই সরকারী হাসপাতালে গেলেই হয়। আমিও বাচ্ছাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকার মা ও শিশু হাসপাতালে গেলাম। ডাক্তার দেখানোর ৬টি কাউন্টারের (রুম) সামনে দীর্ঘ লাইন। প্রচন্ড গরম। চিকিৎসাপ্রার্থী আগত বাচ্ছাদের কান্নার রোল। মাথার উপরের মৃদ্যু ফ্যান ঘুরছে। এর মধ্যে ক’য়েকটি ফ্যান বিকল। কিছুক্ষণ সিরয়াল সামনে এগুতে থাকে মাঝে মাঝে থমকে যায়। রুমের সামনে ডাক্তারের সহযোগীদের কাছে ডাক্তার কোথায় আছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, “স্যার নাস্তা করতে গেছেন”। সেখানে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত লাইনে অপেক্ষার পর ডাক্তারের সাথে সাক্ষাৎ হলো। পরীক্ষার টেস্ট করতে গিয়ে আবার সিরিয়াল। ততক্ষণে বাচ্ছারাসহ আমাদের অবস্থা গরমে ত্রাহী ত্রাহী। এহেন পরিস্থিতিতে এক রোগ সারতে গিয়ে আরো কত রোগ বেড়ে চলছে, তার ইয়াত্তা কে বা রাখে।
★বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে তারা বেশী দামে ক্রয় করে আনাতে হয় তাই বেশী দামে ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই সব কিছুতে হুহু করে দাম বেড়ে গেছে। চিকিৎসা, শিক্ষা,বস্ত্র বিক্রেতা, বাড়ী ওয়ালাসহ সর্বপর্যায়ের সেবা প্রদানকারীরাও তাদের খরচ বেড়ে গেছে বলে তারা সেবার দাম বাড়িয়েছে বলে দাবী করছে তাই তারা ভোক্তা/গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশী নিতে হচ্ছে বলে দাবী করছেন। এর মূল্য সমস্যা কোথায়? পণ্যের সিন্ডিকেট বাণিজ্য কারা করছে, তাদের খুঁজে বের করে আশু সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ সরকারের তরফ থেকে লক্ষণীয় নয়।
★বাংলাদেশে কোন পণ্যের দাম একবার বেড়ে গেলে
তা আর কমার নজির নাই। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহায় দিয়ে পেট্রোল, এলপি গ্যাস ও ভোজ্য তেলের দাম কতবার বেড়েছে তার কোন ইয়াত্তা নাই। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে কমার খবর প্রকাশ হলেও দেশের বাজারে তা কমার কোন খবর নাই। অভিবাবকহীন রাষ্ট্র চলছে এক অনিশ্চিত গন্তব্যে।
একজন মধ্যবৃত্ত লেভেলের পরিবারের আয় ২৫/৩০ হাজার টাকা। তার এমনিতেই টানাটানির সংসার।
একজন সাধারণ চাকুরীজীবী টিভি সাক্ষাৎকারে বলছেন, একজন রিক্সাওয়ালা চাইলে রিক্সাভাড়া বাড়তে পারে, কৃষক সবজির দাম বাড়াতে পারে এভাবে সব কিছুর দামই বাড়ছে, কিন্তু আমার বেতনতো বাড়ছেনা…।
তাই এর মধ্যে যদি জীবন যাত্রার ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয় তাহলে মানুষ বাঁছবে কী করে? একেবারে খেঁটে খাওয়া দিন মুজুরের কথা বাদেই দিলাম। এই আকাশ পাতাল সমন্বয় হীনতার অবসান কে ঘটাবে? দেশে বেকারত্ব হু হু করে বাড়ছে। লক্ষ কোটি তরুণ বেকার। তাদেরকে কর্মক্ষম হিসাবে তৈরী করতে সরকারের চোখে পড়ার মতো কোন কর্মসূচি নেই, নেই কোন কর্মসংস্থান। এহেন অবস্থার অবসান হওয়া দরকার। তাই সরকারী ও বেসরকারী ভাবে এসব উদ্যোগ গ্রহন করা জরুরী।
লেখক: সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এবং নায়েবে আমীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী – নারায়ণগঞ্জ মহানগরী