15 49.0138 8.38624 arrow 0 both 0 4000 1 0 horizontal https://bjingm.org 300 4000 - 0

জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের ফজীলত

বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দশ দিন শুরু হতে আর মাত্র ১/২ দিন বাকি; আসুন, এই দশ দিনের সুমহান মর্যাদা ও ফজিলতের ১০ টি দিক সম্পর্কে জানি

(১) এই দিনগুলোর আমল আল্লাহর নিকট সারা বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ:

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলার নিকট যুল হিজ্জাহর (প্রথম) দশ দিনের আমলের চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ ও প্রিয় অন্য কোনো আমল নেই।’’ সাহাবাগণ বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ রাস্তায় জিহাদও কি এর চেয়ে উত্তম নয়?’ তিনি বললেন, ‘‘না। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান ও মাল নিয়ে (জিহাদে) ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং এর কোনোটি নিয়েই আর ফিরে এলো না (অর্থাৎ, শহিদ হয়ে গেলো, তার কথা ভিন্ন)।’’ [সহিহ বুখারি: ৯৬৯, মুসনাদ আহমাদ: ৬৫০৫, আবু দাউদ: ২৪৩৮]

এই দশদিনের ফরজ ইবাদত অন্যান্য মাসের ফরজ ইবাদতের তুলনায় অধিক মর্যাদার। এই দশদিনের নফল ইবাদত অন্যান্য মাসের নফল ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু এই দশদিনের নফল ইবাদত অন্যান্য মাসের ফরজ ইবাদত থেকে শ্রেষ্ঠ নয়। [ইবনু রজব, ফাতহুল বারি: ৯/১৫]

(২) আল্লাহ তা‘আলা যুলহিজ্জাহ মাসের প্রথম দশ রাতের শপথ করেছেন:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন—
والفجر وليال عشر
অর্থ: শপথ ভোর বেলার, শপথ দশ রাতের। [সূরা ফাজর, আয়াত: ১-২]

সাহাবাদের মধ্যে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা.) এবং বিশিষ্ট তাবি‘ঈ মুজাহিদ, কাতাদাহ্, ইকরিমা, মাসরুক (রাহিমাহুমুল্লাহ্)-সহ অধিকাংশ সাহাবি, তাবি‘ঈ ও মুফাসসিরের মতে এখানে ‘দশ রাত’ দ্বারা যুল হিজ্জাহ মাসের প্রথম দশ রাতকেই বুঝানো হয়েছে। ইমাম ইবনু কাসির (রাহ.) বলেন, এটাই বিশুদ্ধ মত। [ইবনু কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আযিম: ৪/৫৩৫-৫৩৬, আলুসি, রুহুল মা‘আনি: ২০/৪২২]

(৩) এগুলো সেই ‘নির্দিষ্ট দিন’, যেগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয় বিশেষভাবে:

আল্লাহ তা‌‘আলা বলেন, ‘‘যেন তারা নিজেদের কল্যাণের স্থানসমূহে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিযিক দিয়েছেন, তার ওপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’’ [সূরা হজ, আয়াত: ২৮]

ইবনু আব্বাস (রা.), ইবনু উমার (রা.), হাসান বাসরি, আত্বা, ইবরাহিম নাখাঈ এবং ফিকহের প্রধান ইমামগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ্)-সহ অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, ‘নির্দিষ্ট দিনসমূহ’ দ্বারা যুল হিজ্জাহ মাসের প্রথম দশ দিনই উদ্দেশ্য। [ইবনু কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আযিম: ৩/২৮৯, বাগাবি, শারহুস সুন্নাহ: ৫/৩৭৯]

(৪) এই দিনগুলোর মধ্যেই আছে ঈদ তথা কুরবানির দিন, যা আল্লাহর নিকট সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ:
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো কুরবানির দিন, অতঃপর স্থিরতার দিন।’’ (অর্থাৎ কুরবানির পরবর্তী দিন, যেদিন হাজিগণ বিশ্রাম করেন) [আবু দাউদ: ১৭৬৫, হাদিসটি সহিহ]

(৫) এই দিনগুলোতেই অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত হজ পালন করা হয়:

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘হজের মাসগুলো সুবিদিত/সুনির্ধারিত।’’ [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৯৭]

(৬) এই দিনগুলোর মধ্যেই আরাফার সুমহান দিনটি রয়েছে, যে দিনটি অনন্য:

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘অন্যান্য দিনের তুলনায় আরাফার দিনে আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’’ [সহিহ মুসলিম: ৩৩৫৪, নাসাঈ: ৩০০৩]

(৭) এই দশটি দিন যুল হিজ্জাহ মাসের আর এই মাসটি সম্মানিত চার মাসের একটি:

আল্লাহ্ বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট সংরক্ষিত ফলকে (বছরে) মাসের সংখ্যা বারোটি—আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি (মাস) সম্মানিত।” [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ৩৬]

বাকি তিনটি হলো: মুহাররাম, রজব ও যুল কা‘অ্দাহ্ (বাংলায় জিলকদ নামে পরিচিত)

(৮) এই দিনগুলোর ইবাদতের লাভ অধিক:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘(যুল হিজ্জাহ মাসের প্রথম দশকে) এক দিনের রোজা অন্য সময়ের এক বছরের রোজার সমান এবং প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমান (মর্যাদার)।’’ [তিরমিযি: ৭৫৮, ইবনু মাজাহ: ১৭২৮, হাদিসটি দুর্বল]

(৯) এই দিনগুলোতে সব মৌলিক ইবাদত সম্পন্ন হয়:

ইবনু হাজার (রাহ.) বলেছেন, যুল হিজ্জাহ মাসের প্রথম দশকের বিশেষ বৈশিষ্টের তাৎপর্য হলো, এতে সকল মৌলিক ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে। যথা: নামাজ, রোজা, সাদাকাহ, হজ ইত্যাদি। অন্যান্য সময়ে একসাথে এতগুলো ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে না। [ইবনু হাজার, ফাতহুল বারি: ২/৪৬০]

(১০) সালাফে সালেহিন তথা পূর্বসূরি নেককার ব্যক্তিগণ এই দিনগুলোর বিশেষ কদর করতেন:

বিখ্যাত তাবি‘ঈ সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাহ.)-এর অভ্যাস ছিলো, তিনি যুল হিজ্জাহ্ মাসের প্রথম দশকে ইবাদতের জন্য কঠোরভাবে সাধনা করতেন। [দারিমি, হাসান সনদে]