15 49.0138 8.38624 arrow 0 both 0 4000 1 0 horizontal https://bjingm.org 300 4000 - 0

জামায়াতে ইসলামীর কর্মনীতি

জামায়াতে ইসলামীকে বুঝতে হলে

কোন সংগঠন সম্পর্কে সঠিকধারণা পেতে হলে সংগঠনের দায়িত্বশীলদের দ্বারা প্রকাশিত বক্তব্য থেকেই তা পাওয়া সম্ভব। যারা বিরোধী মহলের অপপ্রচারকে গুরুত্ব দেন তারা অবশ্যসঠিক ধারণা পেতে আগ্রহী নন। তারাও না জেনেই বিরোধিতা করার নীতি পালন করেন।

বিশেষ করে রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যাপারে অবচেতনভাবেও মানুষ বিরোধী প্রচারে বিভ্রান্ত হতে পারে। কিন্তু কোন চিন্তাশীর ব্যক্তির আচরণ এমন হতে পারে না।

যে সংগঠনের পরিচিতি, গঠনতন্ত্র, মেনিফেষ্টো, সংগঠন পদ্ধতি, প্রস্তাবাবলী, কার্যবিবরণী ও কর্মনীতি সংগঠনের পক্ষথেকে প্রকাশ করা হয় তার সম্পর্কে জানার জন্য অন্য কোন উৎসের উপর নির্ভর করা মোটেই শোভন নয়।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীএমন একটি সংগঠন যার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পুস্তকাদি নিয়মিত প্রকাশ করা হচ্ছে এবং ক্রমেই এর সংখ্যা বাড়ছেৎ। ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর ত্রিবার্ষিক সদস্য (রুকন) সম্মেলনে “জামায়াতে ইসলামীর কর্মনীতি” শীর্ষক আমার একটি বক্তৃতা এ পর্যায়ে আও একটি নতুন সংযোজন।

যারা জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পেতে চান তাদেরকে নিম্নের পুস্তিকাসমূহ অধ্যয়নের পরামর্শ দিচ্ছি:

১। পরিচিতি- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

২। গঠনতন্ত্র- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

৩। মেনিফেষ্টো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

৪। সংগঠন পদ্ধতি- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

৫। কার্যবিবরণী- প্রথমও দ্বিতীয় খণ্ড

৬। জামায়াতে ইসলামীর বৈশিষ্ট্য

৭। বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী

৮। বাংলাদেশের ভবিষ্যত ও জামায়াতে ইসলামী

৯। গণতান্ত্রিক আন্দোলনও জামায়াতে ইসলামী

গোলাম আযম

মগবাজার

১৯৮৯ সালে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর তিন দিনব্যাপী কেন্দ্রী সদস্য (রুকন) সম্মেলন প্রদত্ত ভাষণ।

ভূমিকা

কোন কাজ সফলতার সাথে সম্পাদন করতে হলে সে কাজটি সঠিকপদ্ধতিতে করা প্রয়োজন। শুধু সাফল্যের আশা করলেই সফল হওয়া যায় না। এমনকি ইখলাসের সাথে কাজ করলেও পদ্ধতি ও কর্মনীতি ভুল হলে সত্যিকার সফলতা হাসিল হয় না।

ইসলামের সুবিচারপূর্ণ শাসন কায়েমের মহান উদ্দেশ্য নিয়েই জামায়াতে ইসলামীকাজ করছে। আসলে এ কাজটি এমনই মহান যে, এর জন্যই যুগে যুগে আল্লাহপাক নবী ও রাসূল (সা) পাঠিয়েছেন। আল্লাহ পাকের নির্দেশ ও সরাসরি পরিচালনায় তাঁরা এ বিরাট দায়িত্ব পালন করছেন।

নবী ও রাসূলগণ যে কর্মনীতি অবলম্বন করেছেন, তা আল্লাহতায়ালাই তাঁদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। তাই তা যে শুধু নির্ভুল তাই নয়, এ কাজের জন্য তা-ই একমাত্র উপযোগী। যারা ইকামাতে দ্বীনেরকাজ করতে চান, তাদেরকে নতুন করে কর্মনীতি রচনা করতে হবে না। নবী ও রাসূলগণের জীবন থেকে বিশেষ করে শেষ নবী (সা) এর ২৩ বছর দীর্ঘ বিপ্লবী জীবন এবং তাঁরই প্রতিনিধিত্বকারী খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ জীবন থেকে নিষ্ঠার সাথে কর্মনীতি তালাশ করে নেয়াই একমাত্র সঠিক ও নিরাপদ পথ।

কর্মনীতি দ্বারা কি বুঝায়?

কর্মনীতি দ্বারা ব্যাপক অর্থ বুঝায়। ইংরেজী ‘পলিসি’ শব্দটি এর মর্মার্থ অনেকখানি প্রকাশ করে। ‘টেকনিক’ শব্দও এর মর্মার্থে শামিল বলা যায়। কর্মপন্থা, কর্মপদ্ধতি, কর্মকৌশল ও কর্মধারা মিলেই কর্মনতি রচিত হয়। তাই কর্মনতি কথাটি ব্যাপক অর্থ বহন করে। কুরআনী পরিভাষায় ‘হিকমাত’ শব্দটি কর্মনীতির মধ্যেই গণ্য।

জামায়াতের চার দফা কর্মসূচির ভিত্তিতেই বার্ষিক পরিকল্পনায় ব্যাপক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তৈরী হয়। একটি বিপ্লবী আন্দোলনের পক্ষে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল দিকেই কাজ করতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি  কাজের পেছনে নির্দিষ্ট কর্মনীতি থাকা দরকার। কোন কাজ যদি পলিসি মোতাবেক না হয়, তাহলে সে কাজ মূল উদ্দেশ্যের সহায়ক হতে পারে না। তাই প্রতিটি ব্যাপারে কর্মনীতির গুরুত্ব অপরিসীম।

জামায়াত যে বিরাট উদ্দেশ্যে ইসলামী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, তাতের সফলতা অর্জন করতে হলে সচেতনভাবে জামায়াতের প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ ঐ উদ্দেশ্যের উপযোগী নির্দিষ্ট কর্মনীতি অনুযায়ী হতে হবে। তাই কর্মনীতির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইসলামের নামে ইখলাসের সাথে অনেক সংগঠনই কাজ করে থাকে। প্রধানত কর্মনীতির পার্থক্যের কারণেই তাদের পক্ষে একই সংগঠনের কাজ করা সম্ভবপর হয় না। এমনকি ইসলামের প্রতি পূর্ণ নিষ্ঠা থাকা সত্ত্বেও কর্মপদ্ধতির পার্থক্যের কারণে কর্মসূচিও ভিন্ন হয়ে যায়।

অবশ্য এ সব পার্থক্য ও বিভিননতা সত্ত্বেও দ্বীনী সংগঠন সমূহের মধ্যে পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বহাল থাকতে পারে এবং তা থাকাই ইসলামের দাবী। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে, কর্মনীতি ও কর্মসূচির পার্থক্যের দরুন তাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমেই দ্বীনের খেদমত করতে হয়। এ বিভিন্নতাসহ তাদের পক্ষে এক সংগঠনের কাজ করা বাস্তবেই অসম্ভব। অবশ্য ইসলাম বিরোধী শক্তির মোকাবিলায় এবং ইসলামের ‘কমন ইস্যুতে’ সব ইসলামী সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করা সম্ভব ও প্রয়োজন।

জামায়াতের গঠনতন্ত্রে কর্মনীতি সম্পর্কিত ধারা

বাংরাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের ৪নং ধারায় বলা হয়েছে-

“জামায়াতের স্থায়ী কর্মনীতি নিম্নরূপ হইবে:

১। কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা কোন কর্মপন্থা গ্রহণের সময় জামায়াত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুধুমাত্র আল্লাহ ও তাঁহার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ ও বিধানের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করিবে।

২। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হাসিলের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন কোন উপায় ও পন্থা অবলম্বন করিবে না যাহা সততা ও বিশ্বাস পরায়ণতার পরিপন্থী কিংবা যাহার ফলে দুনিয়ায় ফিতনা ও ফাসাদ (বিপর্যয়) সৃষ্টি হয়।

৩। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উহার বাঞ্ছিত সংশোধন ও সংস্কার কার্যকর করিবার জন্য নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করিবে। অর্থাৎ ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারণ, সংগঠন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানুষের মানবি, নৈতিক চরিত্রের সংশোধন এবং বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করিবার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অনুকূলে জনমত গঠন করিবে।

এ ধারায় কর্মনীতি সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জামায়াতের গোটা কার্যক্রম এ নির্দেশিকা মোতাবেক চলছে কিনা তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা জামায়াতের সদস্যগণের (রুকনগণের) কর্তব্য।

মাওলানা মওদূদূ (র) “ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি” নামক পুস্তিকার দ্বিতীয়ার্ধে জামায়াতে ইসলামীর কর্মনীতি সম্পর্কে চমৎকার আলোচনা করেছেন। তিনি এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অতি সংক্ষেপে আলোচনা করেছেন বলেই এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন।

জামায়াতের ৪ দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই এখানে প্রতিটি দফায় জামায়াতের কর্মনীতি আলোচনা করা হচ্ছে।

দাওয়াত ও তাবলীগ

জামায়াতের কর্মসূচির পয়লা দফাই দাওয়াত ও তাবলীগ (আহবান ও প্রচার)

দাওয়াতের কর্মনীতি

দাওয়াত মানে আহ্বান বা ডাকা। প্রত্যেক আন্দোলনই মানুষকে নির্দিষ্ট কোন কথার দিকে ডাকে। জামায়াতে ইসলামীর তিন দফা দাওয়াত নবী ও রাসূলগণের শাশ্বত দাওয়াত থেকেই তৈরি করা হয়েছে। সূরা আল-আরাফের অষ্টম রুকু থেকে এবং সূরা হূদের বিচ্ছিন্নভাবে নবীদের নাম উল্লেখ করে দেখান হয়েছে যে, সকল নবী একই দাওয়াত দিয়েছেন। এ দাওয়াতের বক্তব্য সবাই একই ভাষায় প্রকাশ করেছেন।

বিস্তারিত পড়ুন এখানে

স্ক্যান কপি ডাউনলোড