কারবালার ঘটনাপ্রবাহ মুসলিম উম্মাহর জন্য হৃদয়বিদারক ঘটনা : গোলাম পরোয়ার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য জননেতা অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেছেন, কারবালার ঘটনাপ্রবাহ মুসলিম উম্মাহর জন্য হৃদয়বিদারক ঘটনা।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বরিশাল মহানগরীর উদ্যোগে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার বিকেলে বরিশাল মহানগরী জামায়াতের আমির মাওলানা জহির উদ্দিন মুহাঃ বাবরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য জননেতা অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার।বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বরিশাল মহানগরীর সাবেক আমির অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য মাওলানা ফজলুল করীম, বিশিষ্ট ইসলামী স্কলার, গবেষক ও শিক্ষাবিদ মাওলানা আবদুল হাকীম মাদানী ও অধ্যাপক মাওলানা হাবিবুর রহমান।অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেন, পবিত্র আশুরার দিবস মুসলিম উম্মাহর জন্য এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমীরে মুয়াবিয়া র. জীবদ্দশায় তার ছেলে ইয়াজিদকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসানো তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল। ইসলামী শরিয়াহ এবং রাসুলে করীম স.-এর সুন্নতকে পাশ কাটিয়ে ইয়াজিদের একক সিদ্ধান্তই ছিল ইসলামি প্রজাতন্ত্রে এই বিশৃঙ্খলার কারণ। শূরা ব্যতিরেকে একক সিদ্ধান্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্রের জন্য কত বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে তার জলন্ত প্রমাণ হলো ইয়াজিদের আচরণ।তিনি বলেন, কারবালার ময়দানে ইমাম হোসাইনের পরিবার পরিজন নিয়ে সত্যের পক্ষে তার দৃঢ় অবস্থান আমাদেরকে অনেক বিষয় শিক্ষা দেয়। এই আশুরার দিন ইসলামের ইতিহাসের অনেক ঘটনা প্রবাহের সাক্ষী। আমরা ঘটনা বহুল এই দিনের তৎপর্য ও শিক্ষা নিয়ে যে আলোচনা করছি তার থেকে আমাদের ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের অনেক কিছু শিক্ষা নেয়ার রয়েছে। আশুরা সম্পর্কে হাদিস শরীফে অনেক নির্দেশনা আল্লাহর রাসুল স. বর্ণনা করেছেন। কারবালার ঘটনা ঘটেছে রাসুলে কারীম স.-এর ওফাতের প্রায় ৫০ বছর পরে। অর্থাৎ আমিরে মুয়াবিয়া রা. ওফাতের পরে তার পুত্র ইয়াজিদের শাসনামলে। কারবালার ঘটনাপ্রবাহ মুসলিম উম্মাহর জন্য হৃদয়বিদারক ঘটনা। এই ঘটনাকে আমাদের দেশের অনেক আলেম ওলামা বিভিন্নভাবে বর্ণনা করে এর অনেক বিকৃতি এবং ইতিহাসের অপর্যাপ্ত আলোচনায় মশগুল। এর কারণে সমাজে মতভেদের সৃষ্টি হয় যা কোনো অবস্থায় কাম্য নয়।
তিনি বলেন, আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ স.-এর দৌহিত্র ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন তার অতি আদরের ছিলেন। তিনি তার পবিত্র শরীরে সাথে মিশিয়ে তার নাতিদের আদর করতেন। আল্লাহর রাসুলের শরীর স্পর্শ হওয়ায় আল্লাহ তাদের জান্নাতের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তারা হবেন জান্নাতে যুবকদের সরদার। তাদের সাথে ইয়াজিদ এবং তার বাহিনী যে নিষ্ঠুর আচরণ করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য আপরাধ।
তিনি কারবালার ইতিহাস থেকে প্রধানত তিনটি শিক্ষা গ্রহণের জন্য সকলকে নসিহত করেন।
তিনি বলেন, প্রথমত আমির মুয়াবিয়া রা. ক্ষমতা হস্তান্তর পদ্ধতি ইসলামের মৌলিক শাসন ব্যবস্থার পরিপন্থী। খোলাফায়ে রাশেদার নিয়ম না মেনে তার পুত্র ইয়াজিদকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন যে পদ্ধতিতে তা আল্লাহর রাসুলের পদ্ধতি নয়। এই অবৈধ পদ্ধতিই ছিল ইসলামি নিয়ম ও আদর্শের বিরুদ্ধে এবং এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইমাম হোসেনকে জীবন দিতে হয়েছে। ইমাম হোসেন কোনো অবস্থায় ক্ষমতা দখল করতে কুফায় রওনা দেননি। তিনি ইয়াজিদকে ইসলামি শরীয়ার পরিপন্থী ক্ষমতা কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কথা বলতে ইয়াজিদের নিকট যেতে চেয়েছেন। ইয়াজিদের সেনাপতি ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ ইমাম হাসানকে ইয়াজিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণে চাপ প্রয়োগ করেন। মুয়াবিয়ার বাইয়াত গ্রহণের জন্য ইমাম হাসানকে বাধ্য করতে গেলে তিনি তা অস্বীকার করেন। যার কারণে তাকে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছে।
দ্বিতীয়ত ইয়াজিদ ইমাম হোসইন রা.কে বায়াত গ্রহণ অথবা মৃত্যুর হুমকি দিলে তিনি পরিবারের সাথে পরামর্শ করেই ইয়াজিদের সাথে আপস না করে প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যে সিদ্ধান্ত ছিল সত্যের মাপকাঠি এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াই। অসত্য ও অন্যায়ের সাথে ইমাম হোসেন রা. কোনো ধরনের আপস তো দূরে থাক, এ নিয়ে কোনো প্রস্তাবে কথা বলতেও তিনি রাজি হননি। যার কারণে শিশুপুত্র আজগারসহ পরিবার পরিজন নিয়ে রাসুল স.-এর আহলে বাইতকে শাহাদাতের অমীয় সূধা পান করতে হয়েছে। কারবালার প্রান্তে সেদিন সত্যের পক্ষে অসত্যের জিহাদ ছিল। আমাদের দেশে ইসলামি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দও অন্যায়, অসত্য এবং মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে ছিলেন আপসহীন। তারা জান দিয়ে শাহাদাতের নাজরানা পেশ করেছেন, কিন্ত বাতিলে সাথে কোনোরূপ আপস করে যাননি।
তিনি এসময় আরো বলেন, ইমাম হোসেনকে শাহাদাত করে তার মস্তক কুফা থেকে দামেস্ক পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছে ইয়াজিদের সৈন্যরা। ইয়াজিদ ইমাম হোসেন রা.-এর মুখে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে যা ছিলো চূড়ান্ত নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা ও দৃষ্টতা। এই ইতিহাস আমাদেরকে প্রতিশোধপরায়ণ করে। আমাদেকে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করে শাহাদোতের তামান্না নিয়ে কাজ করতে হবে। শিশু পুত্র আজগররে সাথে যে নিষ্ঠুর ও হৃদয়বিদারক ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে আমাদের সাথেও বাতিলরা সুযোগ পেলে এমনটা করে। আমরা যদি ইসলামের মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে কাজ করি তবে কিনা বালি শক্তি আমাদের পেয়ে বসবে।
তৃতীয়ত ব্যক্তিগতজীবনে ইসলামী আদর্শ মেনে ইসলামি ব্যবস্থায় রাষ্ট্র গঠন করাই হলো প্রকৃত ইসলাম। রাসুলে করীম স. বিপ্লবী জীবনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালানা করেছেন। আমরা ঘরে বসে ইসলাম পালন করে জান্নাতে যেতে চাই এটা কোনো দিন সম্ভব হবে না। নবীর করীম সা.-এর দৌহিত্র ইমাম ও ইমাম হোসাইন রা. হবে জানাতে যুবকদের সরদার আমাদের সেই কাতারে শামিল হতে হলে ইমানি চেতনা তাদের অনুসরণে অর্জন করতে হবে। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ইমাম হোসেন রা. জীবন দিয়ে সত্য দ্বীন ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছেন কিন্ত আমরা তাকে অনুসরণ করে তার জীবনাদর্শ মেনে কাজ করছি?