ইসলামপন্থী রাজনীতিতে কী কী ঘাটতি আছে তা নিয়ে কথা বলা সহজ, কিন্তু কিছু অর্জন আছে যা নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। এই বিষয়গুলো আমাদের জানার ভেতরেই আছে, কিন্তু রহস্যজনকভাবে আমরা তা প্রচার করি না। এরকমই একটি বিষয় হলো মহিলাদের মধ্যে চলমান সাংগঠনিক কার্যক্রম।
গতকাল আমার চাচার বাসায় গিয়ে কিছু সময় অনলাইনে একটি ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান দেখলাম। পাশে থাকা ছোট মেয়েদেরকে প্রশ্ন করলাম, তোমাদের এমন প্রোগ্রাম হয় না? বললো, হ্যাঁ হয়। নিয়মিতই হয়।’ এটা অবশ্য আমি জানতাম, তবুও রিকনফার্ম হলাম।
আমার মনে আছে, আব্বার সাথে শেষ দিকে যখন সাক্ষাত করতে যেতাম, তখন তিনি সংগঠনের কোন উইং কতটা ভালো কাজ করছে, সেই মুল্যায়ন করতে গিয়ে একটি পর্যায়ে মহিলাদের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।
আমি বলবো, বাংলাদেশে অন্য যেকোনো ইসলামপন্থী সংস্থা বা সংগঠনের তুলনায় জামায়াত ও ছাত্রীসংস্থার কাজ অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। কিন্তু আমরা এই বিষয়টিকে প্রকাশ ও প্রচার করতে পারি না। অনেক সময় অবজ্ঞাও করি। কিন্তু এভাবে একটি দৃশ্যমান কার্যক্রমকে অবজ্ঞা বা অগ্রাহ্য করলে তার গতি মন্থর হওয়ারও আশংকা থাকে।
ব্যর্থতা নিয়ে আলাপ করা যাবে। কিন্তু যদি অর্জনের কথা বলেন তাও নেহায়েৎ কম নয়। এখনকার মহিলা জনশক্তির মধ্যে বিএ-এমএ পাশ অনেকেই আছেন। কিন্তু মাত্র কয়েক বছর আগেও শিক্ষিতা মহিলা জনশক্তি ততটা ছিল না। অথচ এই স্বল্পশিক্ষিত মানুষগুলো সংগঠনের কারণে রীতিমতো সম্পদে পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন। তাদের বক্তব্য, দারস দেয়ার সক্ষমতা বা রিপোর্টিং ক্যাপাসিটি মাশাআল্লাহ খুবই ভালো জায়গায় চলে গিয়েছিল। এই ধারা এখনো চলমান।
এখন তো অনেক গৃহিনী, পেশাজীবি, ডাক্তার, শিক্ষিকা এবং লেখিকা অনেকেই লিডিং পর্যায়ে চলে আসছে। এই মানুষগুলো এ জাতীয় প্লাটফর্ম না পেলে কোথায় ঠাঁই পেতো- তা বিরাট একটি প্রশ্ন। একটি বড়ো কাজ যেটা মহিলাদের মধ্যে হয়, তাহলো তালিমুল কুরআন। এটার বেনিফিসিয়ারী যে কত মানুষ তা ধারণা করাও কঠিন।
কয়েকদিন আগে একজন মুআল্লিমা ইন্তেকাল করলেন। তার মৃত্যুতে আমার কোনো একজন ফেসবুক ফ্রেন্ডের স্ট্যাটাস ছিল এরকম
‘আমার স্ত্রীকে ইসলামের পথে নিয়ে আসার পেছনের মূল কারিগর.. মুআল্লিমা…ইন্তেকাল করেছেন।’
আমি এই স্ট্যাটাসটি পড়ে অনেকক্ষন ভেবেছি। তালিমুল কুরআন ও মুআল্লিমাদের কার্যক্রমকে আমরা কয়জন এভাবে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছি?
অনেক মহিলা প্রচন্ড বাঁধা বিপত্তির মধ্যেই কাজ করেন। এই বিষয়গুলো উর্ধ্বতন অনেকে জানেন। তাদের এই স্যাক্রিফাইসের কোনো তুলনা হয় না। আমি নিজে যতটুকু লাইনে এখনো আছি, তার একটি বড়ো কারণ কিন্তু আমার বাসায় আমার মা-সহ পরিবারের নারীদের সম্পৃক্ততা। এরকম উদাহরণ নিশ্চয়ই আরো অনেক পরিবারের ক্ষেত্রেই দেয়া যায়। আবার অনেক জায়গা আছে, যেখানে মহিলাদের কাজ পুুরুষ উইং এর চেয়েও বেশি। ইনফ্যাক্ট, পুরুষেরা তাদের গড়ে যাওয়া পথের ওপর দিয়েই হাঁটেন, এমনও দৃষ্টান্ত রয়েছে।
মহিলাদের কার্যক্রমের প্রচার পর্দাসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে করা যায় না। তবে আমাদের মানসিকতাটি অন্তত থাকা উচিত, যাতে আমরা তাদের কাজগুলোকে প্রশংসা করতে পারি, মুল্যায়ন করতে পারি। আমরা অনেকেই জানিনা, ১৯৯১ সালে জামায়াতের দুজন মহিলা নারী এমপি ছিলেন। খন্দকার রাশিদা খাতুন এবং হাফেজা আসমা খাতুন। তারা দুজন এখনো জীবিত আছেন। ২০০১ সালে চারজন নারী এমপি ছিলেন। তারা হলেন, সুলতানা রাজিয়া- জামালপুর (বর্তমানে ঢাকা), ডাঃ আমিনা বেগম- সিলেট, শাহানারা বেগম- রাজশাহী এবং বেগম রোকেয়া আনসার- সাতক্ষীরা (বর্তমানে ঢাকা)। এই মহিলা এমপিরা জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব সংক্রান্ত আলোচনা, বাজেট আলোচনাসহ জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন। তারা বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও সংসদীয় রাজনীতির বিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।