ইসলামী ব্যাংকিং নিয়ে কিছু কথা : ডাঃ শফিকুর রহমান
বাংলাদেশের এবং দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাংকিং জগতে এক জীবন্ত বিপ্লবের নাম ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। কিছু আল্লাহভীরু আমানতদার, বিশ্বস্ত, কঠোর পরিশ্রমী, সাহসী ও দূরদর্শী মানুষের ত্যাগের ফসল এ ব্যাংক। উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই দুনিয়ায় এখন আর জীবিত নেই। ব্যাংকটি তার চলার পথে গোটা মুসলিম বিশ্বকে এক মোহনায় এনে শামিল করেছিলো। বিশ্বের মুসলমানদের বিশ্ব ব্যাংক আইডিবি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের গর্বিত অংশীদার। কুয়েত ফাইন্যান্স হাউজ ও সৌদি আরবের বিখ্যাত ইসলামী ব্যাংক আল-রাজিসহ বিশ্বের অনেক নামিদামি ব্যক্তিত্ব ও সংস্থা এর উদ্যোক্তা সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশের মুসলমানদের সুদের বিপরীতে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আস্থাশীল করে তুলতে ব্যাংকটিকে অনেক চ্যালেঞ্জিং রাস্তা অতিক্রম করতে হয়েছে। মহান আল্লাহর যে বান্দারা এ ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন তাঁদের দুনিয়ায় এ ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক ফায়দা লুটার কোন মতলব ছিলো না। তাঁরা নিছক মানুষকে ব্যাংকি ব্যবস্থার মাধ্যমে জান্নাতের পথ দেখানোর জন্য দেশ এবং দুনিয়ায় নিরন্তর ছুটাছুটি করেছেন। তাঁদের হাত ধরেই বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের মধ্যে থেকে একমাত্র ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও পরিচ্ছন্ন ব্যাংক হিসেবে গ্লোবাল ফাইন্যান্স অ্যাওয়ার্ড বার বার জয় করেছে। সেই ব্যাংকটাতে ডাকাত পড়লো ক্ষমতাসীনদের আশকারা ও আশ্রয়-প্রশ্রয়ে। আজ এ ব্যাংকটাকে লুটপাটের মাধ্যমে ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে।
লক্ষ-লক্ষ বিনিয়োগকারীর শেয়ার এবং আমানতের নিরাপত্তা নিয়ে গোটা দেশবাসী আজ শঙ্কিত। অথচ এ ব্যাংকটি নিয়েই দেশবাসী ছিলো গর্বিত। ব্যাংকটির হাত ধরে দেশে এখন পর্যন্ত ১০টির মতো পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া সরকারী-বেসরকারী দেশি-বিদেশী ব্যাংক প্রায় ১৬০০টি শাখার মাধ্যমে তাদের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো কিংবা ব্রাঞ্চ পরিচালনা করে আসছে। যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলছিলো। কার্যতঃ ব্যাংকিং ব্যবস্থার এ চ্যালেঞ্জে ইসলামী ব্যাংকের সফলতার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডই একমাত্র ব্যাংক যা সরকারী-বেসরকারী সকল ব্যাংকের আস্থার শীর্ষে ছিলো। ডিপোজিট, বিনিয়োগ, রিজার্ভ এবং রেমিট্যান্স আহরণ (বৈদেশিক মুদ্রা), আমদানি, রপ্তানীতে সকল ব্যাংকের শীর্ষে ছিলো এ ব্যাংকের অবস্থান। মোট রেমিট্যান্সের এক তৃতীয়াংশ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমেই আসতো। আস্থার এ জায়গাটিতে কুঠারাঘাতের কারণে বাংলাদেশের গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং রেমিট্যান্সের ওপরে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হওয়ার সমুহ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গতানুগতিক ব্যাংকিং ধারণার বাইরে এসে সাধারণ জনগণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সেবা ও জীবনমান উন্নয়নে ব্যাংকটির ছিলো অনেকগুলো চমৎকার উদ্যোগ। যার মধ্যে রয়েছে- প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে সাবলম্বী করে তোলা। ব্যাংক এ কাজটি করতো আরডিএস বা রুরাল ডেভেলপমেন্ট স্কীমের মাধ্যমে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই দেশের আনাচে-কানাচে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির কাছে এ উদ্যোগটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় হয়ে উঠে। পাশাপাশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য মানসম্মত হাসপাতাল/কমিউনিটি হাসপাতাল দ্রুততম সময়ের মধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। অদক্ষ ও শিক্ষিত বেকার জনশক্তিকে দক্ষ জনবলে পরিণত করার জন্য ব্যাংকটির রয়েছে অনেকগুলো কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও সিএসআর এর মাধ্যমে দেশ ও জাতির ওপরে দূর্যোগ ও দূর্ভিপাকে সহযোগিতায় ব্যাংকটির রয়েছে বড়সড় অবদান। এমন একটি ব্যাংকের ওপরে আজ শুকুনের ছায়া পড়েছে।
আজ বড়ই প্রয়োজন, ব্যাংকটির উদ্যোক্তা, ডিপোজিটর, শেয়ারহোল্ডার এবং ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকৃত সৎ ব্যবসায়ীদের ডাকাত ও লুটেরারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার। তাহলে হয়তো এখনো ব্যাংকটিকে বাঁচানোর কোনো রাস্তা বেরও হতে পারে।
শুধুই কি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, এর পাশাপাশি আরো কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক লুটপাটের করুন চিত্র গণমাধ্যমে অতিসম্প্রতি উঠে এসেছে, এটা কোন ধরনের উন্নয়নের লক্ষণ? হয়তো একদিন সময় আসবে কড়ায়-গন্ডায় হিসাব নেয়ার।
ইয়া রব! আপনার সরাসরি সাহায্যের আজ বড়ই প্রয়োজন।