15 49.0138 8.38624 arrow 0 both 0 4000 1 0 horizontal https://bjingm.org 300 4000 - 0

আমীরে জামায়াতের মুক্তির দাবিতে ভারপ্রাপ্ত আমীরের সংবাদ সম্মেলন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অপবাদ দেয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ১৫ ডিসেম্বর এক #সংবাদ_সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।

প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি জনাব হামিদুর রহমান আযাদ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব সেলিম উদ্দিন।

 

তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “১২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানকে নিজ বাসা থেকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়। পর দিন তাঁকে জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ততার অপবাদ দিয়ে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় ও ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। সরকারের এই অন্যায় ও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে এবং তাঁর মুক্তির দাবিতে দেশবাসী প্রতিবাদ জানিয়েছে ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান নিন্দা জানিয়েছে। আমরা সরকারের এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনসহ সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জামায়াত উদ্ভাবিত কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। জামায়াতের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছে। প্রহসনের নির্বাচন ব্যতীত অতীতের প্রতিটি নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহণ করেছে এবং প্রত্যেক সংসদেই জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব ছিল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার পরিবর্তন চায়। গঠনতন্ত্রের ৩ নং ধারায় জামায়াতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে ‘নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি’ এবং স্থায়ী কর্মসূচির ৪র্থ দফায় ‘নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থা’র কথা উল্লেখ রয়েছে। কোনো ধরনের হঠকারিতা, চরমপন্থা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের সাথে জামায়াতের সম্পর্ক তো দূরের কথা বরং এ সব অপশক্তির বিরুদ্ধে জামায়াত সব সময়ই সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে।

ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে জামায়াত অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার কারণে জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের হামলার শিকার হন। জঙ্গিবিরোধী মামলা পরিচালনা করার কারণে ঝালোকাঠির পিপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা হায়দার আলীকে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা করা হয়। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করার কারণে বিশিষ্ট সাংবাদিক, জামায়াত নেতা খুলনা মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও খুলনা প্রেস ক্লাবের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শেখ বেলাল উদ্দিনকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় জামায়াতের বহু নেতাকর্মীকে হামলার শিকার হতে হয়েছে। আজ জামায়াতে ইসলামীর আমীরকে জঙ্গিবাদের অপবাদ দিয়ে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ এবং নিতান্তই হাস্যকর ও দুঃখজনক।

জামায়াতে ইসলামী একটি ইসলামপন্থী ও গণতান্ত্রিক দল। ইসলাম কোনো অবস্থাতেই জঙ্গিবাদ, চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মূল ধারার ইসলামী সংগঠনগুলো সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার। মিশর, তিউনিসিয়া, মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইসলামী সংগঠনগুলো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন ভূমিকা পালন করছে। অনুরূপভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে জনগণের অধিকার আদায় ও দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সাবেক আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ‘ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ’ বই লিখে জামায়াতের লক্ষ লক্ষ জনশক্তিকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।
জামায়াতের বিরুদ্ধে বহুবার জঙ্গিবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে, কিন্তু তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। কারণ জঙ্গিবাদের সাথে জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা অতীতে ছিল না এবং বর্তমানেও নেই। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে এমন এক সময় গ্রেফতার করা হলো, যখন তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনগণের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ১০-দফা দাবির ভিত্তিতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। মূলত বর্তমান অনৈতিক সরকার জোরপূর্বক ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে যুগপৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ব্যাহত করার জন্যই আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে এবং হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁকে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অপবাদ দিয়ে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়েছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই, গ্রেফতার, জেল-জুলুম ও নির্যাতন চালিয়ে জনগণের আন্দোলন দমন করা যাবে না। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সরকারের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র কখনো সফল হবে না ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, জামায়াতের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় ঈর্ষান্বিত হয়ে অতীতে জামায়াতের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। জামায়াতের তৎকালীন আমীরসহ ৫ জন জন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। বিশ্ব বরেণ্য মুফাসসিরে কুরআন, সাবেক এমপি, জামায়াতের নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির আদেশ দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযমসহ জামায়াতের ৩ জন শীর্ষস্থানীয় নেতা কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। শুধু তাই নয়, এ সরকারের শাসনামলে সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শত শত নেতাকর্মীকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। অনেকে গুম হয়েছেন। তা সত্ত্বেও জামায়াতের কোনো নেতাকর্মী অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না, ইনশাআল্লাহ। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জুলুম-নির্যাতন যত বাড়বে, জামায়াতের প্রতি জনগণের সমর্থন ও ভালবাসাও তত বাড়বে। এভাবেই জামায়াত জনগণের আস্থাভাজন দলে পরিণত হবে, ইনশাআল্লাহ।

তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, আমরা স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, জঙ্গিবাদের সম্পৃক্ততার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে কোটি কোটি মানুষের প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দমানো যাবে না। তাই জুলুম-নিপীড়নের পথ পরিহার করে আবারো আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি,

১। জঙ্গিবাদের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে যে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ও রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার ও বাতিল করে তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

২। কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠাসহ জামায়াত ঘোষিত ১০-দফা দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।

৩। নায়েবে আমীর মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ মিথ্যা মামলায় আটক জামায়াতে ইসলামীর ও বিরোধী দলের সকল নেতাকর্মীকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

শান্তিপূর্ণ উপায়ে ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমীরে জামায়াতের মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন এবং জনগণের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে আনাসহ জামায়াত ঘোষিত ১০-দফা দাবি আদায়ের জন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।”