15 49.0138 8.38624 arrow 0 both 0 4000 1 0 horizontal https://bjingm.org 300 4000 - 0

।।শহীদ আব্দুল মালেক: প্রেরণার বাতিঘর।।

১৫ ই আগস্ট একটি দিবস, একটি ইতিহাস, ইতিহাসের বাতিঘর। যে ইতিহাস এদেশের ইসলামপ্রিয় তৌহিদী ছাত্র-জনতার হৃদয়ের স্পন্দন।
১৯৬৯ সালের এই দিনে ইসলামী শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য তথাকথিত প্রগতিবাদের ধ্বজাধারী সেকুলার ছাত্রনেতাদের হাতে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছিল ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শহীদ আব্দুল মালেক ভাই কে।
১৯৬৯ সাল। গণঅভ্যুত্থানে আইয়ুব খানের পতনের পর ক্ষমতার মঞ্চে আরোহণ করেন ইয়াহিয়া খান। প্রকাশিত হয় এয়ার মার্শাল নুর খানের নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট। ইসলামী আদর্শের পক্ষের ছাত্রসমাজ নুর খানের শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে এবং ইসলামি আদর্শের ভিত্তিতে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এ পর্যায়ে শহীদ আব্দুল মালেক ভাইয়ের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এয়ার মার্শাল নুর খানের সাথে সাক্ষাৎ করে দেশে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান। এ দাবির পক্ষে দেশের অন্যান্য বেশকিছু ছাত্রসংগঠন একাত্মতা ঘোষণা করে। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে দেশে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। এ কমিশনের নেতৃত্বে প্রণীত হয় একটি শিক্ষানীতি, যা ছিল তৎকালীন পাকিস্তান আমলের সর্বশেষ শিক্ষানীতি। এটা অনেকটাই ইসলামী শিক্ষানীতির পক্ষের ছাত্রদের দাবি দাওয়ার আলোকে রচিত হয়। কিন্তু এতে বাধ সাধে তথাকথিত প্রগতিশীল, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ধ্বজাধারীরা। ফলে প্রয়োজন হয় জনমত জরিপের। জনমত জরিপের লক্ষ্যে নীপার (NIPA) উদ্যোগে ১৯৬৯ সালের ২ আগস্ট “শিক্ষার আদর্শিক ভিত্তি” শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত আলোচনা সভায় শহীদ আব্দুল মালেক মাত্র ৫ মিনিট বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। তিনি তার এ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এদেশে ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তার যুক্তিপূর্ণ বক্তব্যে উপস্থিত সবাই ইসলামী শিক্ষার পক্ষে মতামত দেন। এ অবস্থায় সেক্যুলার মহল এই শিক্ষানীতি পরিবর্তনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। বামপন্থী ছাত্র ও শিক্ষকদের নেতৃত্বে ডাকসুর উদ্যোগে ডাকসু মিলনায়তনে ১২ আগস্ট আবারো একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এই আলোচনা সভায় শহীদ আব্দুল মালেক সহ ইসলামপন্থী ছাত্রদের অংশগ্রহণে বাধা প্রদান করা হয়। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সংঘর্ষ এখানে থেমে গেলেও পরবর্তীতে তথাকথিত প্রগতিশীল ও সমাজতন্ত্রের পক্ষের ছাত্র নেতৃবৃন্দ টিএসসির মোড়ে শহীদ আব্দুল মালেক এবং তার সাথীদের উপর হামলা চালায়। ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই হামলায় তারা শহীদ আব্দুল মালেককে রেসকোর্স ময়দানে এনে তার মাথার নিচে ইট রেখে মাথার উপর লোহার রড ও ইট দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে তাকে অর্ধমৃত অবস্থায় সেখানে ফেলে রেখে চলে যায়। এ অবস্থায় শহীদ আব্দুল মালেককে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়। ডাক্তারদের অক্লান্ত চেষ্টার পরেও আগস্টের ১৫ তারিখ, আজকের এই দিনে শহীদ আব্দুল মালেক তার প্রভুর সান্নিধ্যে গমন করেন। সৃষ্টি হয় একটি নতুন ইতিহাসের, ইসলামিক শিক্ষা আন্দোলনের ইতিহাস। শহীদ আব্দুল মালিক কে শহীদ করার মাধ্যমে সেক্যুলারপন্থীরা চেয়েছিল এদেশ থেকে ইসলামের পক্ষের শক্তিকে চিরতরে মুছে ফেলতে, চেয়েছিল ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনকে শুরুতেই শেষ করে দিতে। কিন্তু শহীদ আব্দুল মালেকের শাহাদাতের ঘটনা এদেশে ইসলামী আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তুলে। তার এ আত্মত্যাগ ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অনুপ্রাণিত করে। এক আব্দুল মালেকের শাহাদাতের পর সৃষ্টি হয়েছে শত শত আব্দুল মালেকের।
আজকের দিনে তাই আমরা স্মরণ করি ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ, শহীদ আব্দুল মালেককে। দোয়া করি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন তার শাহাদাতকে কবুল করেন এবং তার শাহাদাতের বিনিময় এ জমিনে ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনকে সফলতা দান করেন।

লেখক-এম. এইচ ফারুক,বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ